ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি গ্রীনকার্ড

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ১৮ মে ২০১৯

সৌদি গ্রীনকার্ড

গ্রীনকার্ড চালু করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। ধনী ও দক্ষ বিদেশী পেশাজীবীদের সরাসরি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিতে যাচ্ছে দেশটি। ‘প্রিভিলেজড ইকামা রেসিডেন্স স্কিম’ নামের পরিকল্পনার দাফতরিক অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ। এই স্কিমই ‘গ্রীনকার্ড’ হিসেবে সুপরিচিত। প্রবাসীরা এই পরিকল্পনার আওতায় সৌদি স্পন্সর ছাড়াই পরিবারের সঙ্গে দেশটিতে বসবাস করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, বসবাসের অনুমতি পাওয়া প্রবাসীরা দেশটিতে সম্পত্তি কেনারও সুযোগ পাবেন। অনেকটা আমেরিকান গ্রীনকার্ডের মতোই হবে সৌদি গ্রীনকার্ড। এটি বাংলাদেশের জন্য সুখবর। প্রায় তিন বছর আগে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই প্রকল্পটি চালুর কথা জানিয়েছিলেন। সৌদিতে বসবাস, কাজ ও নিজের ব্যবসা এবং সম্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে নাগরিকত্ব পাবেন বিদেশীরা। যারা যোগ্য হবেন তারা বার্ষিক নবায়নযোগ্য বিকল্প ও স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এতে শুধু প্রবাসী কর্মজীবীরাই যে উপকৃত হবেন তা নয়, যারা বিনিয়োগ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান বা ধর্মীয় কারণে বিশেষ করে মক্কা বা মদিনায় অবস্থান করতে চান তাদেরও সর্বোপরি সুবিধা হবে। এই গ্রীনকার্ড প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিকভাবে যে দেশটি লাভবান হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। ২০২০ সালের মধ্যে সৌদি সরকার তেল ছাড়া অন্য দিক থেকে প্রতি বছর আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের পরিকল্পনা করেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ধারণা, গ্রীনকার্ডের মাধ্যমে প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন ডলার রোজগার করা সম্ভব। গ্রীনকার্ডের আয় ছাড়াও এ স্কিমে বিদেশী শ্রমিক আনতে কোম্পানিগুলো থেকে প্রতি বছর ফিস বাবদ আরও ১০ বিলিয়ন ডলার আয় হবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছে। অপেক্ষাকৃত তরুণ সৌদি যুবরাজ তথা বর্তমান সৌদি নেতৃত্ব নতুন পরিবর্তন আনছে এবং নব নীতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। কোন কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে। দেশটির প্রধান সম্পদ তেল বাজারজাতের জন্য অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কৌশলী নীতি গ্রহণ করছে দেশটি। সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিনীদের রয়েছে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু চীন-মার্কিন সম্পর্ক তিক্ত হলেও সৌদি সম্পর্কের হাত চীনের দিকে প্রসারিত করতে চাইছে। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, পুরনো নীতির বদলে অভিবাসীদের বসবাসের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে তারা এক্ষেত্রেও বিশেষ পরিবর্তন আনতে চায়। সৌদি গ্রীনকার্ডের আদলে আগামীতে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইনের অভিবাসন নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, এতদিন পুরো আরব বিশ্বেই গ্রীনকার্ড বা স্থায়ীভাবে বসবাসের কোন সুযোগ ছিল না। বন্ধুপ্রতিম সৌদিকে অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য আরব রাষ্ট্র অনুসরণ করে থাকে। তাই সে সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদিতে বর্তমানে কর্মরত ৯০ লাখ বিদেশী শ্রমিকের মধ্যে ১২ লাখের বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক। তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক। গ্রীনকার্ড স্কিম চালু হলে সেদেশে অবস্থানরত শ্রমিকরাও কম বেশি উপকৃত হবে। বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের পাশাপাশি স্বল্পশিক্ষিত এবং বেকারদের মধ্যে সুযোগ পেলেই বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বৈধভাবে সৌদি আরবে বসবাসের সুযোগ পেলে সেটিকে যে এদেশের মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×