ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধানের দাম মণপ্রতি ১১০০ টাকা করার দাবি বাদশার

প্রকাশিত: ০২:২৬, ১৯ মে ২০১৯

ধানের দাম মণপ্রতি ১১০০ টাকা করার দাবি বাদশার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ধানের দাম মণ প্রতি কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেছেন, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে কৃষকের কমপক্ষে ৯ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। তাই ধানের দাম ১ হাজার ১০০ টাকার নিচে রাখা যাবে না। ‘কৃষি বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও’ শ্লোগানে ধানের দাম বৃদ্ধির দাবিতে আজ রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ও মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশেই প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, দেশে একটা সময় দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা যেত। প্রযুক্তির ব্যবহারে এখন কৃষির উন্নয়ন হয়েছে। এখন কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। আমি বলি, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে মন্ত্রীর কোনো প্রয়োজন নেই। কৃষকরাই এই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংম্পূর্ণ করতে পারে। কৃষক হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল ফলায়, কিন্তু এর কৃতিত্ব তাদের দেয়া হয় না। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, আজকে দেশে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রীরা বলেন, ক্ষেতমজুরের সংকটও নাকি উন্নয়নের মাপকাঠি। অথচ বুঝতে হবে আজকে কৃষির বেহাল দশা। কৃষক না খেয়ে মরছে। উন্নয়নের এসব ফাকা বুলি দিয়ে কোনো লাভ নেই। রাজনীতিতে এখন ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ ঘটছে উল্লেখ করে বাদশা বলেন, রাজনীতিতে এখন এতো ব্যবসায়ী এসেছেন, তাদের মনোভাব শুধু খাদ্য আমদানির দিকে। খাদ্য আমদানি করা গেলে তারাই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তারা মনে করেন, খাদ্য আমদানি করা গেলে ব্যবসা হবে। তাই কৃষকের স্বার্থ দেখেন না। এ দেশে বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু কৃষকের ধান রাখার জন্য গুদাম নির্মাণ হয় না। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের উন্নয়ন করতে হবে। শহরের সব সেবা গ্রামের মানুষকেও পেতে হবে। তার মানে এই নয়, গ্রামকেও শহর করতে হবে। এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদ বলছেন, গ্রামও শহর হয়ে যাবে। তারা জ্ঞানপাপী, মূর্খের মতো কথা বলছেন। এই সমস্ত ভুতুড়ে অর্থনীতিবিদদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। ফজলে হোসেন বাদশা এ সময় অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামালেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই বলেছেন, বাংলাদেশ কানাডার মতো হয়ে গেছে। আমি বলি, কানাডা নয়, বাংলাদেশ আমেরিকার মতো হয়ে গেছে। সেখানেও পুঁজিবাদী, এখানেও পুঁজিবাদী। বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে পাঁচ ভাগ মানুষের। বাদশা বলেন, দেশের উন্নয়ন আজ পাঁচ শতাংশ মানুষের পকেটে। ৯৫ ভাগ মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। দেশে বৈষম্য বেড়েছে। এই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে। বৈষম্য দূর না হলে বঞ্চিত মানুষ রাস্তায় নামতে পারে। বৈষম্যহীন সমাজের জন্য গোটা দেশে সংগ্রাম গড়ে উঠতে পারে। তখন পরিস্থিতি ভাল হবে না। এ জন্য সরকারকে এখনই ভাবতে হবে। কৃষকের ফসলের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এই মূহুর্তে ধানের দাম কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সমাবেশ শেষে এ দাবিতে ফজলে হোসেন বাদশাসহ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদেরকে স্মারকলিপি দেন। এতে ধানের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ ছাড়াও রাজশাহীর প্রতিটি ইউনিয়নে জরুরীভিত্তিতে সরকারিভাবে ধান কেনা, কৃষকদের ধান বিক্রি নিশ্চিত, আগামী মৌসুমে কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক, নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ করে উৎপাদিত খাদ্যশষ্যের ১৫ ভাগ মজুত এবং গুদামে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৈরাত্ম বন্ধের দাবি জানানো হয়। এর আগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- পার্টির জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, মহানগরের সম্পাদকম-লীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সাদরুল ইসলাম, জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি কায়েস উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ফরজ আলী প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য মনির উদ্দিন পান্না।
×