ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টিকেট পেতে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৮:০০, ২০ মে ২০১৯

টিকেট পেতে ভোগান্তি

১৪তম রোজা পেরোতে না পেরোতেই রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাথ থেকে সুপারশপ, সুপারমল, জুতার দোকান থেকে সোনার দোকান– প্রায় সর্বত্রই নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যে বা যারা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ও ধনী তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করতে যান ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, নিদেনপক্ষে মুম্বাই, দিল্লী, কলকাতা। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও জমজমাট ক্রেতাদের ভিড়ে। এবার নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল বিধায় প্রায় সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ নজর দিতে পারছে পোশাক-পরিচ্ছদ, জামা-কাপড়, জুতার ওপর। তবে এই আনন্দ-উল্লাসমুখরিত কেনাকাটার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে আরও এক মল্লযুদ্ধ তথা টিকেট কেনার বিড়ম্বনা। প্রতি বছরের মতো এবারও এই দৃশ্যের ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রায় সর্বস্তরের মানুষ সেহরি খেয়েই কিংবা তারও আগে টিকেট নামে সোনার হরিণের আশায় ছুটছেন কমলাপুর, গাবতলী, সায়দাবাদ, মহাখালী, সদরঘাট, বাদামতলী পর্যন্ত। শুক্রবার থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চলসহ চার বিভাগের ঈদের আগাম বাসের টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাস কাউন্টারে শুরু হয়েছে টিকেট কেনা তথা পাওয়ার যুদ্ধ। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সারিতেও চোখে পড়ে দীর্ঘলাইন। যে বা যারা কাক্সিক্ষত দিনের টিকেট হাতে পান তাদের চোখে-মুখে যেন যুদ্ধ জয়ের, নিদেনপক্ষে লটারী বিজয়ের আনন্দ। আর যারা পান না তাদের সংখ্যাই বেশি। তাদের মুখ মলিন ও হতাশাগ্রস্ত। এসব ব্যক্তির অভিযোগের অন্ত নেই, যার অনেকাংশ সত্যও বটে। শতকরা ৯৫ জন যানবাহনের টিকেট না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ। টিকেট নিয়ে তা সে হোক না বাস, ট্রেন, লঞ্চ, এমনকি বিমানের, সেসব নিয়ে নয়-ছয়, স্বজনতোষণ ও কালোবাজারি একরকম ওপেনসিক্রেট। ২২ মে থেকে ঢাকার পাঁচটি পয়েন্টে এবং জয়দেবপুর থেকেও ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২২ রোজা থেকে দেয়া হবে লঞ্চ-স্টিমারের টিকেট। অনলাইন ও এ্যাপের মাধ্যমে ১০ শতাংশ টিকেট বিক্রির কথা থাকলেও সেখানেও নেই স্বস্তি। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানী ছেড়ে যাবে লাখ লাখ মানুষ। উদ্দেশ্য, শেকড়ের টানে গ্রামগঞ্জের বাড়িতে যাওয়া এবং মা-বাবা-ভাই-বোন-দাদা-দাদি-নানা-নানিসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি ও উপভোগ করা। এ নিয়ে প্রতিবছর দুর্ভোগ ও ভোগান্তিও কিছু কম হয় না। বাস-ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমার সর্বত্রই টিকেট পেতে চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এই সুযোগে বিমানের টিকেটও বিক্রি হয় চড়া মূল্যে। তবুও যদি স্বস্তি মেলে! রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত। তদুপরি অসহনীয় যানজট। রাজধানীতে মেট্রোরেল এবং মহাসড়কগুলো চারলেনে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনায় এবার ভোগান্তি বাড়বে বহুগুণ। বাড়বে সড়ক দুর্ঘটনা। লঞ্চ-স্টিমার-ট্রেনেও ভোগান্তির অন্ত নেই। প্রতিবছরের এ এক গলদঘর্ম ও প্রাণান্তকর চিত্র। সে অবস্থায় এর বিকল্প ভাবা যায় কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে। বিদেশে ইউরোপ-আমেরিকায় ক্রিসমাস ও খ্রিস্ট নববর্ষ উপলক্ষে প্রলম্বিত ছুটির উদাহরণ আছে। চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ায়ও চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘ অবকাশ যাপনের সুযোগ মেলে। দলে দলে মানুষ সে সময় বেরিয়ে পড়ে রাজধানী ছেড়ে। দেশেও অনুরূপ সুব্যবস্থা করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। পাশাপাশি ঈদে ঘরে ফেরার টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করতে হবে নিয়মশৃঙ্খলা।
×