ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কর্পোরেশন-আইএফসি

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২০ মে ২০১৯

 আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কর্পোরেশন-আইএফসি

আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কর্পোরেশন বা আইএফসি বিশ্বব্যাংক সমষ্টির একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান অনুন্নত দেশসমূহের ব্যক্তিখাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বিনিয়োগ, পরামর্শ প্রদান এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনামূলক কর্তৃক প্রসারিত করে থাকে। প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৫৬ সাল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক সমষ্টির সদর দফতরে এর অবস্থান। এর কার্যক্রমে এই প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে লাভ অর্জন ও বাণিজ্যিক তৎপরতায় লিপ্ত ব্যক্তি উদ্যোগ ঋণ ও সমমূলধন রূপে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতি বা আইডিএর ঋণ ও অনুদান সহায়তা লাভের জন্য নির্দিষ্টকৃত দরিদ্র সদস্য দেশসমূহে বিনিয়োগ করে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন বিস্তৃত ও ত্বরান্বিত করতে প্রয়াসী। গত এপ্রিলের ৮ ও ৯ তারিখে বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলনে আইএফসির কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যগণ অবগত হয়েছি। ১৯৫০ সালে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী রবাট এল গার্নার বিশ্বব্যাংক সমষ্টির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দরিদ্র দেশে ব্যক্তি উদ্যমকে অর্থায়িত ও প্রসারিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কর্পোরেশন স্থাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার প্রস্তাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ভিত্তিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ মিলিয়ন ডলার মূলধন নিয়ে বিশ্বব্যাংক সমষ্টির একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই কর্পোরেশন ১৯৫৬ সালে গঠিত হয়। এর প্রথম মুখ্য নির্বাহী হিসেবে গার্নার দায়িত্ব বহন করেন। সমকালে এই কর্পোরেশনের সদস্য সংখ্যা ১৮৪, পরিচালক পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ২৫ এবং পরিচালক পর্ষদের প্রধান হিসেবে কাজ করেন বিশ্বব্যাংক সমষ্টির প্রেসিডেন্ট। পরিচালক পর্ষদের উপরে প্রতি সদস্য দেশ হতে ১জন করে প্রতিনিধি সমন্বয়ে নিযুক্ত শাসক পর্ষদ, যা আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকেরও শাসক পর্ষদ, এই প্রতিষ্ঠানের নীতিগত পরিচালন সিদ্ধান্ত দেয়। পরিচালক পর্ষদের নির্বাহী নীতির আওতায় এই কর্পোরেশন ১জন মুখ্য নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় কাজ করে। এ সময়ে এই কর্পোরেশনের মুখ্য নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন ফিলিপিলা হুয়েরো। বর্তমানে এই কর্পোরেশনে ৩৪০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করেন। এদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক বিভিন্ন সদস্য দেশে কর্পোরেশনের কাজকর্ম নির্বাহ করেন। এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধিত্ব খুব বেশি নেই। এই কর্পোরেশনের সমকালীন বিনিয়োগকৃতদের মধ্যে ঋণ, সমমূলধন, বাণিজ্য-অর্থায়ন, সিন্ডিকেটেড বা মিলিত ঋণ, কাঠামোগত ও জামিনে আবৃত অর্থায়ন, গ্রহীতার ঝুঁকি- ব্যবস্থাপনা, কোষাগারের কৃত্যকাদি ও তারল্য ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত। ২০১৮ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী এই কর্পোরেশনের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার- যা ১৮৪টি সদস্য দেশ কর্তৃক প্রদত্ত। এই মূলধনের ২২% ভাগেরও বেশি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। জাপান থেকে এসেছে ৬.৩৩%, জার্মানি থেকে এসেছে ৫.০২% যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স থেকে প্রত্যেকে দিয়েছেন ৪.৭২%, ভারত ও রাশিয়া থেকে প্রত্যেকে তেমনি দিয়েছেন ৪.১% এবং চীন থেকে এসেছে ২.৪১%। এর পরিচালনায় তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অন্যান্য সদস্য দেশের তুলনায় বেশি। ২০১৮ সালে এই কর্পোরেশন সদস্য দেশসমূহের ৩৬৬টি প্রকল্পে ১১.৬ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ মেয়াদী বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে দেয়া হয়েছে ৯.৮ বিলিয়ন ডলার এবং সমমূলধন হিসেবে প্রযুক্ত হয়েছে ১.৩ বিলিয়ন ডলার। সদস্য দেশসমূহের বাণিজ্য সমর্থন ও সম্প্রসারণে ৮৭টি সদস্য দেশের ২৮৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলা ও পরিশোধন নিশ্চয়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সহায়তা করে এসেছে এই কর্পোরেশন। ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠান গ্রীসের আলফা ব্যাংক, ইউরো ব্যাংক, পিরায়েস ব্যাংক ও জাতীয় ব্যাংকে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো পরিমাণ শেয়ার বিনিয়োগ করে তাদেরকে পুনর্বাসিত ও শক্তিশালী করেছে। ২০০৭ সালে ভারতের এনজেল ব্রুকিং নামক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এই কর্পোরেশন ১৮% শেয়ার কিনে তাকে সম্ভাব্য দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা করেছে। এই কর্পোরেশন প্রদত্ত ঋণ সাধারণত ৭ থেকে ১২ বছর মেয়াদী হয়। প্রয়োজন বিশেষে এসব ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়ে থাকে। ইজারা অর্থায়ন ও আর্থিক মাধ্যমায়নে এই কর্পোরেশন ঋণ ও সমমূলধন সহায়তা দিয়ে এসেছে। কর্পোরেশনের ঋণ ও সমমূলধন সহায়তা প্রধানত ডলার কিংবা ডলারসম কঠিন মুদ্রায় দেয়া হয়। ক্ষেত্র ও প্রয়োজন বিশেষে গ্রহীতা দেশের মুদ্রায়ও এই কর্পোরেশন সহায়তা দিয়ে থাকে। এরূপ সহায়তার ক্ষেত্রে অবশ্য সহায়তা পরিমাণ কঠিন মুদ্রা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকে জমা রেখে সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা অবমুক্ত করা হয়। স্থানীয় অর্থ বা শেয়ারবাজার উন্নয়নকে সম্প্রতি এই কর্পোরেশন তার অন্যতম কৌশলীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্র বলে ব্যবহার করে আসছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহায়তা দেয়ার মোড়কে এই কর্পোরেশন প্রতিশ্রুতিপত্র, বিনিময়ী বিল, ঋণপত্র, দরপত্রীয় নিশ্চয়তাপত্র ও সম্পাদনবিষয়ক বন্ড এবং মূলধন দ্রব্যাদি আমদানিকরণে প্রয়োজনীয় অগ্রিম পরিশোধন স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহযোগে ব্যক্তি-উদ্যমভিত্তিক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে দিয়ে থাকে। ২০০৯ সালে এই কর্পোরেশন নিজ মালিকানায় একটি পৃথক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি) স্থাপন করেছে। এই কোম্পানি উঠতি বাজারে প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগীয় মূলধন তহবিলের ব্যবস্থাপনার ভার নিয়ে থাকে। ২০১৮ সালে এই কর্পোরেশন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতিতে (সেই সমিতি থেকে) সহায়তা প্রাপ্যতার অংশীদার দেশসমূহের ব্যক্তি-উদ্যোগে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২৩.৩ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থায়ন করেছে। এর আগের বছর এরূপ অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১৯.৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালের অর্থায়নের প্রায় ৩০% প্রযুক্ত হয়েছে দরিদ্রতম দেশে যারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতির নিরিখে সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। জলবায়ু সম্পর্কিত বিনিয়োগ হয়েছে একই বছরে সার্বিক বিনিয়োগের ৩৬%। ২০১৮ সালে আইএফসির নিট আয় হয়েছে ১২৮০ মিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ অর্থ থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার আইএফসি, আইডিএ নিরূপিত সহায়তা পাওয়ার জন্য দরিদ্র দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অনুদান হিসেবে দিয়েছে। পরিচালন উৎকর্ষের মাপকাঠিতে মুডিস ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস এবং স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড পুওর এই কর্পোরেশনকে ২০১৮ সালে আর্থিক সফলতা ও মূলধন আহরণীয়তার বিবেচনায় সর্বোচ্চ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গত বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলনে আইএফসির তরফ থেকে বেশ সন্তোষের সঙ্গে বাংলাদেশ, মেক্সিকো ও লেবাননের ক্ষুদ্র ব্যক্তি-উদ্যোগের সঙ্গে এই কর্পোরেশনের সম্পর্ক ও তাদের সফলতা প্রতিভাত করা হয়। বাংলাদেশে ঢাকায় ওয়াসীম আলীম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘চাল-ডাল’ নামক ই-মুদি বিপণি এর সফলতা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০১৩ সালে যানজটে জর্জরিত ও অতিরিক্ত লোকে ভরা ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় আলীম অন লাইনে তার প্রতিষ্ঠান থেকে চাল, ডাল, শাক সবজি, মাংস, মাছ সরবরাহ শুরু করেন। এখন অনলাইননে ‘চাল-ডাল’ প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন ১৫০০ অর্ডার পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতিষ্ঠিত মুদি দোকানের চেয়ে কম মূল্যে, কম সময়ে ও যৌক্তিক লাভে টাটকা খাবার, রান্নার পণ্য ও উপকরণ সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। আলীমের ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে, তার প্রতিষ্ঠানে ৫০ জন শ্রমিক ও সহযোগীর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং উদ্যোক্তা এখন নতুনতর ব্যবসার কথা ভাবছেন। বাংলাদেশে ‘চাল-ডাল’সহ আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগকে ঝুঁকি মূলধন সরবরাহ করেছে এই কর্পোরেশন। মেক্সিকোতে সান্টিয়াগো জাবালা লাচাডোরেস নামীয় প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএফসির ঋণ সহায়তা নিয়ে লাভজনকতার সঙ্গে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদিগকে তার তরফ থেকে লাভজনকভাবে অর্থ সহায়তা ও প্রযুক্তিক দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। লেবাননে জিনা দাউদ তেমনি রাসায়নিকমুক্ত তাজা শাক-সবজি সুলভে ও দ্রুত সরবরাহের জন্য ই-মেইলভিত্তিক বিপণি সমষ্টির পত্তন ঘটিয়েছেন এই কর্পোরেশনের ঋণ সহায়তায়। বরকিনা ফাসুতে তেমনি আইএফসি ও আইডিএর যৌথ সহযোগিতায় ওসমান সাই সফিটেকস নামীয় ব্যক্তি-উদ্যোগভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে তুলা চাষ ও বিপণনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি লাভজনকভাবে চাষিদের দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। এসব তথ্যাদির আলোকে বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলনে উপস্থিত কতিপয় সংসদ সদস্যসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কর্পোরেশন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমি কর্পোরেশন কর্তৃক অনুসরণীয় ভূমিকা নিয়ে ব্যক্তিগত দায়িত্বের কাঠামোয় আলোচনা করি। আলোচনাক্রমে আমি বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যক্তি-উদ্যোগকে সহায়তা দেয়ার মোড়কে বৃহৎ ব্যক্তি উদ্যোগকে অধিকতর বিস্তৃত না করে অর্থনৈতিক সমতা প্রসারণমূলক ক্ষুদ্র প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগে বিনিয়োগ করার প্রয়োজন তুলে ধরি। প্রসঙ্গক্রমে আমি উল্লেখ করি যে, আইডিএর তরফ থেকে ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশে একটি সড়ক নির্মাণ কোম্পানি ও একটি পোকামাকড় মারার কার্বনভিত্তিক রাসায়নিক ছড়ানোর ক্যান তৈরির বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের অনুদান অবয়বে যন্ত্রপাতি দেয়া ও প্রতিস্থাপন করা এই দেশে সমতা প্রসারণী বিনিয়োগ বলে বিবেচনা করা যায় না। আইডিএ থেকে এই অনুদান সরকারের মাধ্যমে কোমল ঋণ হিসেবে সরকার কর্তৃক ফেরত নেয়ার শর্তে ঐ দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া এবং পরিশোধিত অর্থ ক্রমান্বয়ে একই শর্তে ভিন্নতর ব্যক্তি-উদ্যোগে প্রযুক্ত করে যাওয়া আইডিএ ও আইএফসির দর্শন অনুগামী ব্যক্তিখাতে ক্রমাগত ও ব্যাপকভাবে প্রদানীয় সহযোগিতা হিসেবে প্রযুক্ত করা যেত। আমি এও উল্লেখ করি যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে আমি তৎকালীন অর্থ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আইডিএর উপরোক্ত একপেশী বিনিয়োগ তৎপরতা সে সময়ের স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বিরোধিতার কারণে ওভাবে সংশোধন করতে সমর্থ হইনি। এই আলোচনায় বাংলাদেশের পটে আইএফসিকে অধিকতর সফল করার লক্ষ্যে কতিপয় পদক্ষেপ বিবেচনীয় বলে আমি মনে করি। এক. স্থানীয় ব্যাংক, বিশেষত কৃষি ব্যাংক, সঞ্চয় ব্যাংক, নির্বাচিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের মাধ্যমে কিংবা সহযোগে নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যক্তি-বিনিয়োগ প্রসারিত করার জন্য অধিকতর ঋণ সহায়তা দেয়া আইএফসির জন্য লক্ষ্যানুগ হবে। দুই. প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত ও প্রসারিত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র শিল্প কর্পোরেশন সহযোগে নতুনতর কিংবা লাগসই প্রযুক্তির সঙ্গে উদ্যোক্তাদের পরিচয় ঘটানো এবং তাদের সঙ্গে প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের সম্পর্ক স্থাপনে আইএফসির অর্থায়নের সঙ্গে পরামর্শমূলক সেবা লাভজনকভাবে দেয়া সঙ্গত হবে। তিন. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর, সুলভ ও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আইএফসি দরিদ্র দেশের সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ঋণপত্র, প্রতিশ্রুতিপত্র, খোলা ও ব্যবহার করার সহযোগী হিসাবে বিস্তৃত ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় বিদেশী ব্যাংকের উচু মূল্যের কৃত্যকাদি বিকল্পয়িত করতে পারে। চার. দরিদ্র দেশের রুগ্ন ব্যাংক সমূহে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকারী ব্যাংক থেকে সমমূলধনীয় বিনিয়োগ প্রযুক্ত না করে এদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শেষ বা চূড়ান্ত পর্যায়ের ঋণদাতা হিসেবে ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করা সার্বিকভাবে ব্যক্তি-খাতের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যক্ষম পদক্ষেপ হিসেবে অধিকতর ফলবতী ও যুক্তিসঙ্গত হবে। এবং পাঁচ. বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পুনর্গঠন, সংস্কার ও সম্প্রসারণে আইএফসি-এর অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতা অধিকতর ফলপ্রসূতার সঙ্গে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। শেয়ারবাজারের স্থিতিয় অংশ হিসেবে বন্ড বাজার সৃষ্টি ও প্রসার করে, ঝুঁকি মূলধন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নতুনতর লাগসই আর্থিক হাতিয়ার উদ্ভাবন ও প্রবর্তন এবং প্রচলন করে আইএফসি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রসারে এদেশে অধিকতর ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে। আমার ধারণা, উপরোক্ত লক্ষ্যে আমাদের দেশের তরফ হতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আইএফসির ও আইডিএর কাছে প্রস্তাবাদি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরলে সংশ্লিষ্ট সকলে অধিকতর সফল হবেন। এদিকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ হতে যথাসম্ভব দ্রুততম ও একাগ্রতার সঙ্গে দৃষ্টি দেয়া লক্ষ্যানুগ হবে। লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
×