ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটমুক্ত করার পদক্ষেপ দেখে খুশি বিদেশীরাও

চার মাসেও শেষ হয়নি মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২০ মে ২০১৯

চার মাসেও শেষ হয়নি মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পর্যটন শহরকে যানজটমুক্ত করতে পুলিশের অস্থায়ীভাবে বসানো রোড ডিভাইডার কাজে এসেছে। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি খুশি হয়েছেন বিদেশীরাও। জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে রোড ডিভাইডার বসিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। জানা যায়, শহরে চলাচলকারী টমটমসহ সব ধরনের যানবাহন স্ব স্ব লেইন মতে চলাচল করায় পর্যটন শহরে প্রতিদিনের যানজট অনেকটা কমে গেছে। কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট ও কালুর দোকান এলাকায় ট্রাপিক পুলিশ রোড ডিভাইডার বসিয়েছে। ওসব স্থানে সকাল-বিকেল যানজট লেগে জটলা সৃষ্টি হতো। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ত প্রতিনিয়ত। তবে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কের উন্নয়ন কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত না হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও দেশী-বিদেশী এনজিওর শত শত কর্মী। সূত্রে জানা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাসের কথা বলে উন্নয়নের খাতিরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল কলাতলীর এই সড়কটি। তিন মাসের স্থলে প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে চললেও সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে অর্ধ সংস্কার অবস্থায় পড়ে রয়েছে কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক। এতে প্রতিদিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াতকারী এনজিও’র ৪ শতাধিক ছোটবড় গাড়ি চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ঠিকাদারের ধীরগতি ও গাফেলতির কারণে বিদেশীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ সড়কের দ্রুত উন্নয়ন শেষে খুলে দেয়ার বিষয়ে পৌর মেয়রের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার ট্রাপিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল চন্দ্র বনিক জনকণ্ঠকে বলেন, পর্যটন শহরকে যানজটমুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজারের সৌন্দর্য দেখে বিদেশী পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করতে শহরের প্রতিটি সড়ক উপসড়কে অস্থায়ী ডিভাইডার বসানো হয়েছে বলে জানান ট্রাপিক পুলিশের এ কর্মকর্তা। স্থানীয়রা বলেন, কক্সবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কার করতে বিকল্প সড়কও না থাকায় যানবাহন ও জন চলাচলে এখন নির্ভর করতে হয় সামুদ্রিক জোয়ারভাটার উপর। সাগরে ভাটা থাকলেই কেবল মেরিন ড্রাইভ সচল থাকে, জোয়ার থাকলে ওই সড়কের সব যানবাহন শহরের সঙ্গে থাকে বিচ্ছিন্ন। জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ এ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা বলছেন। মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে শহরের একমাত্র সংযোগ সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে সড়ক ব্যবহারকারী বাসিন্দাদের। ইনানী হিমছড়ির পর্যটন ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মান্দাভাব। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি গত ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মেরিন ড্রাইভের শুরুর দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে বেইলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩শ’ মিটার সড়ক বিগত ২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৫/৬ সালে কলাতলী গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। পৌরসভা গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য কলাতলীর গ্রামীণ সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। যথারীতি ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হলে শহরের সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ মেরিন ড্রাইভের বেইলি হ্যাচারি পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ওঠানামার একটি বিকল্প পথ তৈরি করে দেয়। একইভাবে কলাতলী পয়েন্টেও মাটি দিয়ে একই ধরনের পথ তৈরি করে। কিন্তু সমুদ্র সৈকত ধরে সনাতনী উপায়ে যানবাহন চলাচল নির্ভর করছে এখন সমুদ্রের জোয়ার ভাটার উপর। প্রতিদিন দুইবার সামুদ্রিক জোয়ারের সময় ৩/৪ ঘণ্টা করে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে শহরের একাংশের হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানযাহন সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ভাটার সময় বালিযাড়ির উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে চলাচল করতে গিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের ধাক্কায় প্রতিদিন দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ অজুহাতে যাত্রীবাহী অটোরিক্সা ও ই-বাইকগুলো গাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী, দেশী-বিদেশী পর্যটক, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও ও স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীরা। এ পথে বর্তমানে হাজার হাজার পর্যটক ছাড়াও প্রতিদিন সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলাচলকারী দেশ বিদেশের ভিভিআইপিসহ স্থানীয় অধিবাসীরা চলাচল করেন। সড়কের কারণে ইনানী হিমছড়ির হোটেলগুলোতে যাচ্ছে না কোন পর্যটকরা। ফলে এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পেও। বিকল্প সড়ক হিসেবে এক কিলোমিটার সৈকতের উপর দিয়ে যান চলাচলের কারণে পরিবেশের মারত্মক ক্ষতির কথা বলছে পরিবেশবিদরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার বার প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন এবং সড়কে ড্রেইন নির্মাণে এলাকাবাসীর জমি না ছাড়ার কারণে কাজে এই ধীরগতি। তবে এ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
×