ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদীর পাড়ে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২০ মে ২০১৯

  নদীর পাড়ে স্থাপনা  নির্মাণের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপায় আবার রামনাবাদ নদীর পাড় দখলের ঘটনা ঘটেছে। এবার ইট ও বালি ব্যবসায়ীরা নদীর পাড় দখল করে বালি দিয়ে তা ভরাট করে নিয়েছে। গড়ে তুলেছে ‘ইট-বালু মহল’। উঠেছে দোকানপাট। জমেছে ইট-বালির ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভূমি দফতরের লোকজন তাদের এখানটায় ইট-বালু মহল গড়ে তোলার অনুমতি দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকার করেছেন। গলাচিপায় রামনাবাদ নদীর পাড় দখলের সূচনা ঘটে ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির আমলে। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কাবিখা-কাবিটার চাল-গম বিক্রি করে খেয়াঘাট সংলগ্ন আড়তপট্টি এলাকায় রামনবাদ নদীর পাড় দখল করে তা নদী থেকে তোলা বালি দিয়ে প্রায় সাড়ে চার একর জমি ভরাট করা হয়। মার্কেট করার জন্য নদীর পাড় দখলের এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পরিবেশ সংগঠন ‘বেলা’ বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর আদালতের রীট পিটিশন দাখিল করে। উচ্চতর আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয় নদীর পাড় দখল কার্যকম। পরবর্তীতে উচ্চতর আদালত প্রশাসনকে নদীর পাড় পূর্বের অবস্থায় নেয়ার আদেশ প্রদান করে। এরইমধ্যে নদীর ভরাট করা পাড় ইট-বালির ব্যবসায়ীরা দখল করে নেয়। সর্বশেষ মাস দু’য়েক আগে স্থানীয় প্রশাসন ইট বালি ব্যবসায়ীদের নদীর ভরাট করা ওই পাড় থেকে উচ্ছেদ করে। এরপরই ইট বালি ব্যবসায়ীরা পুরনো লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশে গোলখালী ইউনিয়নের হরিদেবপুর মৌজার রামনাবাদ নদীর পাড় দখল করে নেয়। ইট বালি ব্যবসায়ীরা সংলগ্ন রামনাবাদ নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে নদীর পাড় ভরাট করে। ইতোমধ্যে নদীর পাড়ের কোন কোন স্থানে বালি দিয়ে চার-পাঁচ ফুট উঁচু করা হয়েছে। কেউ কেউ বাঁশের বেড়া দিয়ে বালি আটকে রেখেছে। অনেকে ভিটি বানিয়েছে। ইটের স্তূপ গড়ে উঠেছে। কয়েকটি দোকানঘর এবং আড়ত উঠেছে। অনেকে ‘ইট-বালু মহল’ নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে। অর্থাৎ ইটবালির বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, স্থানীয় ভূমি দফতর মোট ১৭ জন ইট বালির ব্যবসায়ীকে নদীর পাড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। তাদের প্রত্যেককে প্রস্থে ১৯ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে ৩৫০ ফুট জমি দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় তারা ৩ একর জমি নিয়েছেন। বাস্তবে এ জমির পরিমাণ আরও বেশি। ইট ব্যবসায়ী মোঃ কামাল খান জানান, খেয়াঘাট সংলগ্ন নদীর ভরাট করা পাড় থেকে যখন তাদের উচ্ছেদ করা হয়, তারপরই স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের এ নদীর পাড় ভরাট করে নিতে বলেছেন। সে ভিত্তিতে তারা নদীর পাড় ভরাট করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বালি ব্যবসায়ী মোঃ খলিল বলেন, এখানে ইট বালির ব্যবসা অনেক বড়। কিন্তু সে তুলনায় তাদের স্থায়ী কোন মার্কেট বা বাজার নেই। তাই প্রশাসনের সহযোগিতায় এই বাজার গড়ে তুলেছেন। পাড়সংলগ্ন রামনাবাদ থেকে বালু তোলায় অপর পাড়ের হরিদেবপুর গ্রামটি ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন হুমকির মুখে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে তারা দু’জনেই তা অস্বীকার করে জানান, এখান থেকে তারা বালি তোলেননি। তবে এখানে দুটি ড্রেজার কেন, এর কোন উত্তর এখানকার কোন ব্যবসায়ীই দেননি। এ বিষয়ে হরিদেপুর মৌজার উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জি এম মাহাবুব আলম বলেন, নদীর পাড় দখলের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। এভাবে নদীর পাড় দখল সম্পূর্ণ অন্যায়। সরেজমিন সাত অবৈধ দখলদারের নাম পেয়েছি। তাদের উচ্ছেদ করার জন্য শীঘ্রই নোটিস করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ইট বালির ব্যবসায়ীরা এর আগে আড়তপট্টি এলাকায় রামনাবাদ নদীর তীরে অবৈধ ভাবে দখল করে ব্যবসা করছিল। উপজেলা প্রশাসন তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা তাদের ইট বালি অস্থায়ীভাবে রাখার জন্য অনুরোধ করেন। তবে উপজেলা প্রশাসন ওই এলাকায় ইট বালির মার্কেট গড়ে তোলার জন্য কোন ধরনের অনুমতি দেয়নি। ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে সরকারী জমি দখলের কাজটি করেছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
×