ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিশ্চুপ এসবি কর্মকর্তারা

রোহিঙ্গাদের জন্য গোপনে পাসপোর্ট তৈরি করছে মানব পাচারকারীরা

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২০ মে ২০১৯

  রোহিঙ্গাদের জন্য গোপনে  পাসপোর্ট তৈরি করছে  মানব পাচারকারীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রোহিঙ্গাদের জন্য গোপনে পাসপোর্ট তৈরি করছে মানব পাচারকারীরা। মানব পাচারকারীরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী ও চট্টগ্রামের অধিবাসী বলে গোপনে পাসপোর্ট তৈরি করছে। পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তি ও জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের (ডিএসবি) সদস্যরা মানব পাচারকারীদের সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে রবিবার রোহিঙ্গাদের জন্য ৫০টি পাসপোর্ট তৈরি করার বিষয়টি স্বীকার করেছে গ্রেফতার হওয়া ৪ জন । এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ট্রেন যাত্রী বেশে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া শিশু নারী ও পুরুষসহ চার জনকে আটকের পরও নানা তথ্য পেয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। এদিকে, ৫০টি পাসপোর্ট নিয়ে গ্রেফতার হওয়া মোঃ নূরুল ইসলাম, মোঃ সফিক উল্লাহ, ওমর আরফাদ ও আবদুল কুদ্দুস। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, জব্দকৃত পাসপোর্টগুলো ব্যবহার করে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারের সিদ্দিক মার্কেটের হামজা এভিগেশন নামক এজেন্সির মালিক এগুলো তৈরি করিয়েছে। এসব পাসপোর্ট কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে তারা। অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু চট্টগ্রাম শহর হয়ে রোহিঙ্গারা পরিবার পরিজন নিয়ে পালানোর অনেক ঘটনা রয়েছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর রোহিঙ্গাদের ভিকটিম বলে আবার ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ নিত্যনতুন নয়। তবে ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লেই শুধু রোহিঙ্গাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যেসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ক্যাম্প ছেড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা সমুদ্রপথে ও আকাশপথে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট দিয়ে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন হয়ে ঢাকা যেতে একে রোহিঙ্গা পরিবার ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠার প্রাক্কালে জিআরপির হাতে ধরা পড়ে। মা ও দুই মেয়ে এবং তাদের মামাসহ মোট ৪জন ঢাকা যাওয়ার জন্য কুতুব ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরস এজেন্সির প্রতিনিধি জেয়াবুল হোসেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়। এ সময় জিআরপি সদস্যদের সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছে। এরা হলো এনামুল্লাহ, তার বোন সুরিয়া বেগম, সুরিয়া বেগমের দুই মেয়ে সাহিদা আক্তার এবং শিশু কন্যাসহ মোট ৪জন। এই চারজনকে নিয়ে ওই ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধি জেয়াবুল হোসেন ঢাকায় যাচ্ছিল। নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের পাখি গলির এই এজেন্সি থেকে আবদুল হাকিমের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গারা মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছে। ঢাকায় পাঠাতে জেয়াবুলকে ব্যবহার করছে হাকিম। রোহিঙ্গা নারী সাহিদা জানিয়েছে, তার স্বামী দুবাই থাকে। বছরখানেক আগে তার মোবাইল ফোনে বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে তার বয়স ১৫ বছর। এই এজেন্টের মাধ্যমে তাদের চার জনের জন্য পাসপোর্ট ও ভিসা করিয়েছে। ঢাকায় পৌঁছালে সেখানে হাকিমের লোকজন তাদের পাসপোর্ট ও ভিসা দিবে। তারপর তারা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিদেশ চলে যাবে। এ বিষয়ে জেয়াবুল গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের জিআরপি থানায় জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, সে এর আগেও এ ধরনের রোহিঙ্গা শরনার্থী নিয়ে ঢাকায় গিয়েছে। এ জন্য হাকিম তাকে ৫ হাজার টাকা করে দেয়। এই চারজনকে ঢাকায় হাকিমের লোকজনের কাছে তুলে দিতে পারলেই তার দায়িত্ব শেষ। জেয়াবুল ওই এজেন্সিতে চা নাস্তার বিলি বণ্টনের কাজ করে।
×