ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বল এখন ইরানের কোর্টে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবায়ের

যুদ্ধ চায় না সৌদি আরব

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২০ মে ২০১৯

যুদ্ধ চায় না সৌদি আরব

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ এড়াতে চায় সৌদি আরব। সৌদি এ অঞ্চলে যুদ্ধ চায় না কিংবা যুদ্ধে জড়াতেও চায় না। কিন্তু গত সপ্তাহে সৌদি তেলের ট্যাঙ্কার ও স্থাপনায় হামলার জবাব সর্বশক্তি দিয়ে দিতে প্রস্তুত তারা। আর উপসাগরে উত্তেজনা এড়াতে বল এখন ইরানের কোর্টে বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। এদিকে সৌদি আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য আঞ্চলিক উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ ও আরব লীগের জরুরী বৈঠক ডেকেছে। খবর এএফপি ও ইয়াহু নিউজ। শনিবার সৌদি আরবের সরকারী সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, বাদশাহ সালমান এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ‘আগ্রাসন ও তার পরিণাম’ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ৩০ মে মক্কায় দুটি জরুরী বৈঠক ডেকেছেন। তিনি এ বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য উপসাগরীয় ও আরব দেশগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইরানের হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করায় অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুজাইরাহ উপকূলে রহস্যজনক নাশকতায় সৌদি আরবের দুটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারসহ চারটি জাহাজের ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার সৌদি আরবের একটি প্রধান তেলের পাইপলাইনে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ড্রোন হামলা চালায়। ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে এটা হবে তেল রফতানির বিকল্প রুট। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দায়িত্ব স্বীকার করা সত্ত্বেও দুটি তেল পাম্পে হামলার জন্য ইরানকে দোষারোপ করে আসছে রিয়াদ। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। এ অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি এবং তেলবাহী জাহাজ ও তেলের স্থাপনায় হামলার ঘটনায় এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সৌদি আরব এ অঞ্চলে যুদ্ধ চায় না কিংবা যুদ্ধে জড়াতেও চায় না।’ তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলে যুদ্ধ এড়াতে যা যা করা দরকার, সৌদি আরব সম্ভব সবকিছু করবে। আর যদি অন্য পক্ষ যুদ্ধকেই বেছে নেয়, তাহলে সৌদি আরব দৃঢ়তার সঙ্গে সর্বশক্তি দিয়ে এর জবাব দেবে এবং নিজেকে এবং এর স্বার্থ রক্ষা করবে। রবিবার সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য উপসাগরীয় এবং আরব নেতাদের জরুরী বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগামী ৩০ মে মক্কায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় উপসাগরীয় ও আরবের ঐক্য প্রয়োজন। সৌদি আরবের সুন্নী মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত তেলের ট্যাঙ্কারে হামলার জন্য কাউকে দোষারোপ করেনি। তারা এ হামলার বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তাদের দুটি সূত্র জানায়, গত সপ্তাহের হামলায় ইরান ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গ্রুপ কিংবা ইরাকের শিয়া মিলিশিয়াদের মদদ দিয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস। ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হুতি বিদ্রোহী গ্রুপ বলেছে, তারা সৌদি আরবের তেল পাম্পিং স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। যদিও ওই হামলার ফলে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়নি এবং রফতানির ওপর প্রভাব পড়েনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রুড অয়েল (অশোধিত তেল) রফতানিকারক দেশটির ওপর। নরওয়ের একটি প্রতিবেদন থেকে রয়টার্স জানতে পেরেছে, আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দরের কাছে জাহাজে হামলা ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর সহযোগিতায় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা ও তাদের স্বার্থের ওপর ইরানের হুমকির জবাবে উপসাগরে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া তেহরানের তেল রফতানি শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। রবিবার সৌদি আরবের তথ্য মন্ত্রণালয় এক টুইটে জানায়, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেন, আমরা এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। কিন্তু ইরানের অব্যাহত হামলার হুমকির প্রেক্ষাপটে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। বল এখন ইরানের কোর্টে। তাই সিদ্ধান্ত এখন তাদের নিতে যে, তাদের ভবিষ্যত কী হবে। তিনি বলেন, ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে বিকল ইরানের একটি জাহাজকে তেহরানের অনুরোধে এ মাসের শুরুতে উদ্ধার করে সৌদি আরব। সেটি এখনও সৌদি আরবে মেরামত করা হচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তেহরান সংঘাত চায় না এবং কোন দেশই ইরানের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চায় না। উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এক্সন মোবিল ইরানের প্রতিবেশী দেশ ইরাক থেকে তাদের বিদেশী সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সরিয়ে নিয়েছে। আর শনিবার বাহরাইন ইরান ও ইরাক ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে এবং যারা দেশ দুটিতে অবস্থান করছে তাদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। ফেডারেল এভিয়েশন এ্যাডমিনিস্ট্রেশন মার্কিন সব বাণিজ্যিক বিমানকে উপসাগর ও ওমান উপসাগরের জলসীমার ওপর দিয়ে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।
×