ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর ৫০ টন আম রফতানির প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২০ মে ২০১৯

 রাজশাহীর ৫০ টন আম  রফতানির প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দেশের চাহিদা মিটিয়ে কয়েক বছর ধরেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে রাজশাহীর আম। এ বছরও রাজশাহীতে বিদেশে রফতানিযোগ্য আমের উৎপাদন হবে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। তবে এর মধ্যে অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। এদিকে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী আজ সোমবার থেকে রাজশাহীর বাজারে আসবে সবচেয়ে মিষ্টি আম গোপালভোগ। রফতানি করতে জেলায় এখন প্রায় ৫০ হাজার আম উন্নত প্রযুক্তিতে ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ করা হচ্ছে। এর বাইরেও ভাল জাতের কিছু আম উৎপাদন করা হচ্ছে রফতানি করার উপযোগী করে। গত বছর নানা জটিলতায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করা আমের রফতানি কমে গেলেও এবার চাষী ও কৃষি কর্মকর্তারা আশাবাদী। তাই এই মুহূর্তে রাজশাহী মহানগরী ও জেলার বাঘা উপজেলায় ফ্রুট ব্যাগিং করা হচ্ছে। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, আম রফতানি করতে হলে ২৬টি শর্ত মানতে হয়। ব্যাগিং হচ্ছে ২৬টি শর্তের একটি। তবে ব্যাগিং করা না হলেও আমের মান ভাল হলে বাইরে রফতানি করা যায়। তবে বিদেশ যেতে হলে সব আম কোয়ারেন্টান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এ জন্য রফতানিকারকরা আম ঢাকার শ্যামপুর প্ল্যান কোয়ারেন্টান উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে নিয়ে যান। আমের মান ভাল হলে সেখানে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই জাহাজের কন্টেনারে করে আম বিদেশে যায়। গত বছর কোয়ারেন্টান পরীক্ষার কড়াকড়িতে আম রফতানি কম হয়েছে। সব শর্ত মেনে গত বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২৫ মেট্রিক টন আম রফতানি করেছেন রাজশাহীর ১৪ ব্যবসায়ী। এর আগে ২০১৭ সালে রফতানি করেছিলেন ৩০ মেট্রিক টন। গত বছর রফতানিযোগ্য আম ছিল প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। বিপুল পরিমাণ আম রফতানি করতে না পেরে কম দামে দেশের বাজারেই সেসব আম বিক্রি করতে হয়। অথচ এসব আম উৎপাদনে চাষীদের বাড়তি খরচ করতে হয়েছিল। তাই এ বছর আম রফতানি করে লাভের মুখ দেখতে চান স্থানীয় চাষীরা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদেশীদের শর্ত মেনে গত বছর আমরা ১৪ ব্যবসায়ী একসঙ্গে আম রফতানি করি। তাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ আসেনি। এবারও আমরা ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে ভালভাবে আম চাষ করেছি। আশা করছি, পাঠাতে পারব। কারণ, রাসায়নিক মুক্ত এই আমের গুণগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদা রয়েছে। তবে রাজশাহী এ্যাগ্রো ফুড এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, ২০১৬ সালে বেশি পরিমাণে আম রফতানি করা সম্ভব হয়েছিল। এর পরের দুই বছর কোয়ারেন্টানের কড়াকড়ির কারণে খুব বেশি পরিমাণ আম রফতানি করা যায়নি। এবার পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আনোয়ারুল জানান, স্থানীয় বাজারের চেয়ে আমের দ্বিগুণ দাম পাওয়া যায় বিদেশে রফতানি করা গেলে। অবশ্য উন্নত প্রযুক্তিতে এই আম চাষে খরচও হয় বেশি। গত বছর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় তিন কোটি আম ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে চাষ করা হয়। কিন্তু আম পাঠাতে না পারার কারণে অনেক চাষী এতে আগ্রহ হারিয়েছেন। ফলে এ বছর ফ্রুট ব্যাগিং আমের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারে। তবে ক্রেতাদের সাড়া পেলে আগামী বছর আবারও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার বাড়বে। অবশ্য এ বছর বাইরে আম পাঠানো না গেলেও দেশেই যেন বিক্রি করা যায় তার জন্য ভোক্তা তৈরি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাজশাহী এ্যাগ্রো ফুড এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, আমরা এ আমের দেশীয় ভোক্তা তৈরি করেছি। তারা ব্যাগিং প্রযুক্তির দেশীয় আম খাওয়ার জন্য খুবই আগ্রহী। তাই বিদেশে রফতানি করা না গেলেও এবার আম বিক্রি করা যাবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, আম রফতানি আমাদের সক্ষমতা রয়েছে কমপক্ষে ১০০ মেট্রিক টন। তবে আম মানসম্মত হলে যত বেশিই উৎপাদন হোক না কেন, সবই রফতানি করতে পারব। মান ভাল হলে ফ্রুট ব্যাগিং ছাড়াও আম রফতানি করা যায়। আশা করছি, এবার অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম আমরা বাইরের দেশে পাঠাতে পারব। এদিকে অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গেল কয়েক বছরের মতো এবারও আম পাড়ার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিয়ে কঠোর নজরদারি করছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে রাজশাহীতে গুটি জাতের আম নামতে শুরু করেছে।
×