ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২০ মে ২০১৯

 মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানুল মুবারাকের আজ ১৪তম দিবস। এ মৌসুমে কোন কোন পরিবার থেকে রোজার ফিদয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সে সম্পর্কে আজ দু’চারটি কথা। এ বিষয়টি নিয়ে প্রায় সময় সমাজে আলেম-ওলামাকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ইসলামী আইনের কিতাবসমূহে রয়েছে, অতিশয় বৃদ্ধ ব্যক্তি যে রোজা রাখতে অক্ষম অথবা এমন রুগ্ন ব্যক্তি যার সুস্থতার আশা করা যায় না তাদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হলো; তারা রোজার পরিবর্তে ফিদ্য়া দেবে। অর্থাৎ প্রত্যেকদিনের রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে দু’বেলা পেট ভরে আহার করাবে অথবা সাদাকায়ে ফিতরের সমপরিমাণ গম, যব, খেজুর বা তার বাজারমূল্য কোন মিসকিনকে প্রদান করবে (ফাতওয়ায়ে শামী)। একটি পূর্ণ ফিদ্য়া একজন মিসকিনকে দেয়াই উত্তম। কিন্তু যদি একটি ফিদ্য়া ভাগ করে একাধিক মিসকিনকে প্রদান করা হয় তবে ইমাম আবু ইউসূফ (রহ.)-এর মতে তাও দুরস্ত আছে (শামী)। আমরা এমনটিও করতে পারি। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে, বৃদ্ধ যদি পুনরায় কখনও রোজা রাখার শক্তি ফিরে পায় অথবা নিরাশ রুগ্ন ব্যক্তি যদি আরোগ্য লাভ করে এবং রোজা রাখতে সক্ষম হয় তবে যেসব রোজার ফিদ্য়া প্রদান করা হয়েছে পুুনরায় এগুলোর কাযা করতে হবে। আর সে ফিদ্য়াটা সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে (শামী ও আলমগীরী, ১ম খ-)। কারো জিম্মায় কাযা রোজা থাকলে সে যদি তার ওয়ারিশদেরকে ওসিয়ত করে যায় যে আমার এই পরিমাণ রোজার কাযা আছে, তোমরা এর ফিদ্য়া আদায় করে দেবে। এরূপ অসিয়ত করে গেলে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হতে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করার পর ঋণ পরিশোধ করে যে পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা সম্পূর্ণ ফিদ্য়া আদায় করা সম্ভব হলে তা আদায় করা তাদের ওপর ওয়াজিব হবে। ফিদ্য়ার পরিমাণ যদি তার অবশিষ্ট সম্পদের এক -তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি হয় তবে মৃত ব্যক্তির সম্পদ দ্বারা যে পরিমাণ ফিদ্য়া আদায় করা যায় ওই পরিমাণই আদায় করা ওয়াজিব হবে। অতিরিক্ত পরিমাণ ফিদ্য়া আদায় করা ওয়ারিশদের ওপর ওয়াজিব নয়। বাকি ফিদ্য়া আদায় করতে অতিরিক্ত যে সম্পদ লাগবে তার জন্য ওয়ারিশদের অনুমতি প্রয়োজন হবে। (শামী, ২য় খণ্ড ও আলমগীরী, ১ম খণ্ড)। যদি মৃতব্যক্তি অসিয়ত না করে যায় এবং এমতাবস্থায় যদি তার ওলি ওয়ারিশগণ নিজেদের মাল থেকে তার নামাজ-রোজার ফিদ্য়া আদায় করে দেয় তবে তা জায়েজ আছে। আশা করা যায় যে, আল্লাহতা’য়ালা হয়ত নিজগুণে তা কবুল করে নেবেন এবং তার অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। মৃতব্যক্তির অসিয়ত না করা অবস্থায় তার পরিত্যক্ত মাল থেকে ফিদ্য়া আদায় করা জায়েজ নেই। অনুরূপ ফিদ্য়ার পরিমাণ যদি তার মালের এক-তৃতীয়াংশ অপেক্ষা বেশি হয় তবে অসিয়ত করা সত্ত্বেও ওয়ারিশদের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত ফিদ্য়া পরিত্যক্ত মাল দ্বারা পরিশোধ করা জায়েজ হবে না। অবশ্য যদি ওয়ারিশগণ সকলেই খুশিমনে অনুমতি দেয় তবে পরিত্যক্ত মাল থেকেও অবশিষ্ট ফিদ্য়ার অবশিষ্ট আদায় করা জায়েজ হবে। রোজার মাসে আমাদের উচিত এসব মাসায়ালার জ্ঞান অর্জন করা এবং আমল করা। এসব প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জন করাও সওয়াবের কাজ।
×