ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পোষা পাখিতে তারুণ্যের আনন্দ

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২১ মে ২০১৯

 পোষা পাখিতে তারুণ্যের আনন্দ

আবু হোরায়রা সাব্বির আটিবাজার, কেরানীগঞ্জ ॥ সাব্বির যেদিন প্রথম পাখি নিয়ে আসে। তার আম্মু খুব রাগারাগি করে। এসব কি খাঁচায় পালে নাকি? ছেলে বুঝি বিপথেই গেল। ভ্রু কুচকে বলেছিল রাবেয়া বেগম। এখন দিন বদলে গেছে। সাব্বির বাসায় নেই। পাখির দেখভাল করে তার মা। বেজায় খুশী তিনি। কাজিনের পাখি দেখে সাব্বির উৎসাহিত হয়। এক জোড়া বাজরিগার পাখি কিনে। এখন তার সংগ্রহে বাজরিগার, রেডরাম্ম, ককাটেলসহ প্রায় ৫১টি পাখি। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে পড়ে সে। অবসর সময় তার পাখির সঙ্গে কাটে। পাখি বিক্রি করে হাত খরচের টাকা আসে তার। ছোটখাটো প্রয়োজনে মা-বাবার কাছে হাত পাততে হয় না তাকে। সাব্বির জানাল, পোষাপাখি নেশার হাত থেকে তারুণ্যকে বাঁচাতে পারে। বন্ধুরা আগে বলত, পাখিপালা ঝামেলার কাজ। এখন অবশ্য তাদের অনেকেই পাখিপালে। সাব্বির তাদের অনুপ্রেরণা। পথ প্রদর্শক। এ রকমই কয়েকজন হলো তাজল, সামছি। ক্লাস শেষ। বন্ধুরা আড্ডা দেয়। সাব্বির সোজা বাসায় চলে আসে। পাখিকে খাবার দিতে হবে যে। খাঁচা পরিষ্কার করার কাজ। নতুন বাচ্চাদের দেখভাল। এসবের জন্য ঘরের বাইরে সে থাকে কম। সাব্বিারের মা বললেন, ছেলে পাখি পালন করে। আমার ভালই লাগে। . আবীর মোঃ আজহার আলী চট্টগ্রাম বন্ধুরা যখন আড্ডা দেয়। এটা সেটা আলোচনা করে। মোবাইলে বুদ হয়ে পড়ে থাকে। তখন আবীর পাখিকে খাবার দেয়। পানি পরিবর্তন করে দেয়। বাচ্চাগুলো ঠিক আছে তো? একটু হাতে নিয়ে চেক করে দেখে। আবীরের মা-বাবাও বেশ খুশি। ছেলে ভাল কাজে ব্যস্ত। আড্ডাবাজিতে নেই। ভার্সিটি থেকে এসে ছেলে ঘরেই থাকে। রাতে বাইরে থাকে না। রাত করে ফিরেও না। পোষা পাখি নিয়েই তার ব্যস্ততা। বিপথে যাবার সময় কোথায়? ছেলেকে নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় তারা। আবীর প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ে। অবসর সময় তার পোষাপাখি সঙ্গে কাটে। তার সংগ্রহে আছে বাজরিগার, ফিঞ্চসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সংখ্যায় তা ৭০টির মতো। চট্টগ্রামের কদমতলী তার বাসা। বাসার মধ্যে একটুখানি জায়গা করে নিয়েছে। সেখানে পাখির খাঁচা। রং বেরঙের পাখি। জানা গেলো, শখ তো বটেই। তবে পাখি ডিম দেয় সেখান থেকে বাচ্চা। বাচ্চা বড় হলে বিক্রি করে অর্থ আসে। আবীরের হাত খরচের যোগান এতেই মিটে। আবার পাখির যত খরচ তাও পাখি বিক্রির টাকাতেই হয়। প্রথম দিকে কত কথাই না বলতো মানুষ। ছেলে পাখি পালে? পাখি কি পালার জিনিস নাকি? পাখি থাকবে বনে। আবীর চুপ থাকত। সে ভেবেছিল, একদিন পাখি পালনে তার সফলতা সব প্রশ্নের জবাব দেবে। হলো তো তাই, পোষাপাখিতে আবীরের সফলতা গোটা চট্টগ্রামে বড় চমক। নিন্দুকেরাই এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। খাঁচার বিদেশী পোষাপাখি পালা আমাদের দেশে বৈধ। আকিব, ইমরান, আদনান, ফাহিম আবীরের বন্ধু। তারাও পোষাপাখি পালন করছে। আবীরের দেখাদেখি। আবীর বলল, পাখিপালাও নেশা। তবে ভাল নেশা। শুধু অবসর আনন্দে কাটানোই নয় এই নেশার মাধ্যমে অর্থ উর্পাজনও সম্ভব। মানুষের কল্যাণেও আবীর কাজ করছে। ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপের মডারেটর সে। পাখি সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়। অভিজ্ঞতা থেকেই। . মো. নাজিম হাসান জিয়াদ, শামসুর রাহমান রোড, খুলনা অরেঞ্জ চিকড ওয়াক্সবিল দুর্লভ খাঁচার পাখি। এশিয়া মহাদেশে মাত্র দু’জন এই পাখি খাঁচায় ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সফল হয়েছে। নাজিম তার মধ্যে একজন। এত অল্পবয়সে এই পাখি সারাবিশ্বে আর কেউ ব্রিড করাতে পেরেছে এমন খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, খুলনায় এইচএসসি পড়ে সে। নাজিমের সংগ্রহে রয়েছে, জেব্্রা ফিঞ্চ, লং টেইল, গোল্ডিয়ান, মাস্কেড গ্রাসফিঞ্চ, অরেঞ্জ চিকড ওয়াক্সবিল, পার্ল বেঙ্গলি, চকোপাইড, স্টার ফিঞ্চ, ডায়মন্ড ফায়ারটেল ইত্যাদি। তরুণদের হাতে যখন টাকা থাকে তখন তারা বিপথে যেতে পারে। কিন্তু যে তরুণ পাখি পালন করে, সে চাইবে পাখির সংখ্যা বাড়াতে। নতুন কোন প্রজাতির পাখি সংগ্রহ করতে। এমনটাই বললেন নাজিম হাসান। নাজিমের মা-বাবা সব সময় তাকে সহায়তা করে। পাখির দেখ ভালও করে যখন নাজিম বাসায় থাকে না। যদিও প্রথমে তাদের ঘোর আপত্তি ছিল। অবশ্য পরে তারা ভুল বুঝতে পেরেছেন। পাখির বাচ্চারা নাজিমকে আনন্দ দেয়। চোখের সামনে তার যত্নে বাচ্চারা বড় হয়। তার হাতে বসে খুনসুটিও করে। দি ফিঞ্চ সোসাইটি অব বাংলাদেশ। ফেসবুকে পাখির জনপ্রিয় গ্রুপ। এই গ্রুপের মডারেটর নাজিম। পাখি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান বাতলে দেন।
×