ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২১ মে ২০১৯

 খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ২৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মিল মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক বিগত ৯ মে থেকে চাল গুদামজাত শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আরিফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ৯ মে থেকে চাল গুদামজাত শুরু হয়েছে। মিলারদের সঙ্গে চাল ক্রয়ের চুক্তি প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা দেড় লাখ টন ধানের চেয়ে আরও বেশি ধান কেনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এছাড়া সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল, দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান যা চাল আকারে এক লাখ মেট্রিক টন এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম। সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৩৬, আতপ ৩৫ টাকা, ধান ২৬ টাকা এবং গম ২৮ টাকা। এবার দেড় লাখ টন কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনা হবে। বিগত মার্চ মাসে সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকের এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন গম কেনা হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। তবে গোডাউনে ক্যাপাসিটি থাকলে আরও কেনা হবে। বর্তমানে খাদ্যমজুদ ভাল রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই কৃষকরা যেন নায্যমূল্য পায়। গত বছর ৩৮ টাকা কেজি দরে বোরো চাল এবং ২৬ টাকায় ধান কেনে সরকার। কৃষকরা যেন বাজারে ধান ওঠার পর নায্যমূল্য পায় সেজন্য আগেই কত টাকা দরে সরকারিভাবে চাল-ধান কেনা হবে, তা মোটামুটি ঠিক করা হয়। সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা দেড় লাখ টন ধানের চেয়ে আরও বেশি ধান কেনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এছাড়া সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সারাদেশে ধানের দাম নিয়ে কৃষকদের হতাশার মাঝে সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভূ, মোঃ আয়েন উদ্দিন এবং আতাউর রহমান খান অংশ নেন। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, এবার ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। আমরা এ জন্য সরকারকে বলেছি, দেড় লাখ টন ধান কেনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে যেন বেশি কেনা হয়। কমিটি ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানি করার সুপারিশ করেছে। এছাড়া কমিটি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য বলেছে, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা কোন সুযাগ না পায়। কমিটির সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বিবেচনা করবে মন্ত্রণালয়। সারাদেশে ২০০টি ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার ‘প্যাডি সাইলো’ নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ১৪ শতাংশ আর্দ্রতাসম্পন্ন ধান কিনছে। যে কারণে অনেক কৃষককে বাধ্য হয়ে চাতাল মালিকদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। প্যাডি সাইলো নির্মাণ করা হলে কৃষক সেখানে নিজের ধান শুকিয়ে বিক্রি করতে পারবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে। খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ধান যাতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয় তা তদারকির জন্য ২০ মনিটরিং টিম কাজ করবে। তারা কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করবে। এছাড়া বৈঠকে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে অভিযান সারাবছর অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম শক্তিশালী করতে লোকবল বৃদ্ধি এবং প্রতিটি জেলায় এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়েও কমিটির বৈঠকে সুপারিশ করা হয়।
×