ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বাড়বে

২২ হাজার কোটি টাকা চুক্তি হবে ॥ প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর

প্রকাশিত: ১১:২২, ২২ মে ২০১৯

২২ হাজার কোটি টাকা চুক্তি হবে ॥ প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর

এম শাহজাহান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরের সময় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি করা হবে। বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্প বিশেষ করে বিদ্যুত, জ্বালানি, অবকাঠামো নির্মাণে জাপানী বিনিয়োগ রয়েছে। আগামী পাঁচ বছর জাপানের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে এদেশে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপান সব সময় বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ মে টোকিও’র উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। ২৯ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে সরকার প্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে জাপানের অতিরিক্ত আড়াই বিলিয়ন ডলার বা ২২ হাজার কোটি টাকা দেয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতা সই হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠক ছাড়াও টোকিওতে আগামী ৩০ মে অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের সমাপনীতে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন তিনি। এছাড়া সরকার প্রধান পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠকেও রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাপানের আরও সক্রিয় সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাপান সফরের সময় উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও সঙ্গে থাকছেন। এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা জাপান সফর করবেন। দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও এবারের সফরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বিড) কাজী এম আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, জাপান বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে জাপান বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, জাপান-বাংলাদেশ ডায়লগে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বিষয়ে আলাপ আলোচনা হবে। জানা গেছে, হলি আর্টিজানের দুর্ঘটনার পর সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগে সন্তুষ্ট জাপান সরকার। আগামী রমজানের ঈদের আগেই জাপানের অর্থায়নে কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী সেতু উদ্বোধন করা হবে। এই সেতু তিনটি উদ্বোধনের পর ঢাকা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট অনেকাংশে নিরসন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, জাপান বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। হলি আর্টিজানের পর সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপে জাপান আবার ফিরে এসেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা তিনটি সেতুর কাজ শেষ করে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগে সেতু তিনটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। ঈদের আগে দেশবাসীর জন্য এটি একটি ভাল খবর। এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরে দুই দেশের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসিসটেন্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। যা গত বছরের চাইতে ৩৫ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি জাপানের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এ কথা জানান। তিনি আরও বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জাপানে তার আসন্ন সফরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী ৫ বছর বাংলাদেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে। তিনি জানান, জাপানের সহায়তার নির্মাণাধীন কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতিতে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এদিকে, জাপান থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরব সফর করবেন। ৩১ মে মক্কায় অনুষ্ঠেয় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে (ওআইসির) অংশ নিবেন তিনি। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ রমজানের শেষ নাগাদ মক্কায় অনুষ্ঠেয় ১৪তম ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওই সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওআইসি সম্মেলনে অংশ নেয়া ছাড়াও সরকার প্রধানের ওমরাহ পালনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরব থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ফিনল্যান্ড সফরে যাওয়ার আলোচনা চলছে। সে ক্ষেত্রে ঈদের পর তিনি দেশে ফিরবেন।
×