ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের পোশাকে ভিন্নতা, নজর কাড়ছে ‘টিস্যু গ্রাউন’ ‘গারারা’

প্রকাশিত: ১১:২২, ২২ মে ২০১৯

শিশুদের পোশাকে ভিন্নতা, নজর কাড়ছে ‘টিস্যু গ্রাউন’ ‘গারারা’

রহিম শেখ ॥ নতুন পোশাক ছাড়া ঈদের আমেজ থাকে না শিশুদের মাঝে। বাবা-মাও তাই গুরুত্ব দেন সন্তানদের পছন্দসই পোশাক কিনতে। এবার শিশুদের পোশাকেও এসেছে ভিন্নতা। বৃষ্টি ও গরমের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে শিশুদের ঈদের পোশাক। এবার নজর কাড়ছে ‘টিস্যু গ্রাউন’ ‘গারারা’ এবং ‘ডিজে সেট’ নামের পোশাকে। রমজানের শুরু থেকেই ফ্যাশন হাউসগুলো ছোট্ট সোনামণিদের জন্য সাজিয়েছে তাদের ঈদ আয়োজন। নবজাতক থেকে শুরু করে ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সী বাচ্চাদের পোশাক বিক্রিও হচ্ছে দেদার। রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ঈদের পোশাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র ভিত্তিক পোশাকের আধিপত্য চলছে। ঢাকাসহ সারাদেশের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে দেশী পোশাকের তুলনায় বিদেশী পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের বেশি মনোযোগ। এবার ঈদের বাজারে এসেছে হিন্দী চলচ্চিত্রের নামে একাধিক পোশাক। বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে রয়েছে প্রধানত বিদেশী পোশাকের সম্ভার। মার্কেটের কিডস ওয়ার্ল্ডের বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবারও গত কয়েক বছরের মতো বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ভারতীয় পোশাক। দোকানিরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে সোনামণিদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ‘টিসু গ্রাউন’। কাতান কাপড়ের ওপরের তৈরি করা জামাটার ওপরের পার্ট কামিজÑ যা ঝুলে ছোট। সেলোয়ার ঢোলা যার হাঁটুর দিকে ঘোরানো জরি চুমকির কাজ করা। ওড়নায়ও ভারী কাজ। এ পোশাকটি এবারের ঈদে ছোট্ট সোনামণিদের পছন্দের পোশাক। দোকানিরা জানিয়েছেন, ৮ মাস থেকে ১২ বছর বয়সের বাচ্চাদের এই পোশাকটি পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এবার ছেলে সোমামণিদের জন্য মাকের্টে এসেছে ‘ডিজে সেট’। পোশাকটির প্যান্টের পকেট ও শার্টের পকেটে লাইট ও মিউজিক বসানো। সাইজের ওপর নির্ভর করে এর দাম ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও মোদি সেট, বাবাসেট পাঞ্জাবি-পায়জামা-কটি, শার্ট-প্যান্ট, কুরতা, ফতুয়া ও গেঞ্জি সেট। এসব পোশাকে ডিজাইন ও কাট ছাঁটের পাশাপাশি নামেও রয়েছে ভিন্নতা। ঈদে সোনামণিদের পোশাকে পিছিয়ে নেই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও। নবজাতক থেকে শুরু করে ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সী বাচ্চাদের পোশাক বিক্রিও হচ্ছে দেদার। রাজধানীর নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, মেয়ে শিশুদের জন্য গ্রাউন, গারারা, রাজ-থি, বাহুবলি-২ বেবি স্টাইল টপস, পার্টি ফ্রক, গ্রাউন থ্রিপিস, লং-ফ্রক, লং-কামিজ, ঘাগড়াচোলি, টিউনিক ক্যাপি, ডিভাইডার, লেগিংসের পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন পোশাকও কিনছেন অভিভাবকরা। এদিকে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এবার ছেলে শিশুদের ফতুয়া ও টি-শার্টের পাশাপাশি পাঞ্জাবির নকশায় এনেছে নতুনত্ব। পাঞ্জাবিতে কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এ্যান্ডি কটন, সিল্ক, মসলিন ও খাদি। উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন রকম হাতের কাজ দিয়ে। ৭টি বিলুপ্ত প্রায় পাখির থিমে তারা রাঙিয়েছে ছেলেদের শার্ট ও টি-শার্ট। ফতুয়ায় প্রাধান্য পেয়েছে এ্যান্ডি ও সুতি কাপড়। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ছেলে শিশুদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে- পাঞ্জাবি ৮০০-৩০০০, মোদি সেট ২০০০-৩৫০০, টি-শার্ট ১৫০০-৩০০০, ফতুয়া ৭০০-১০০০ টাকার মধ্যে। গরমের কারণে মেয়ে শিশুদের পোশাকে এবার হাল্কা ও সুতি কাপড়ের প্রাধান্য থাকলেও জমকালো পোশাকগুলোতে ঠিকই ব্যবহৃত হয়েছে কাতান, টিস্যু, মসলিন ও সার্টিন কাপড়। ডিজাইনেও রয়েছে ভিন্নতা। আর বাচ্চাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে বরাবরের মতো এবারও প্রাধান্য পেয়েছে গাঢ় উজ্জ্বল রং। সাইজ আর রঙের ভিন্নতা অনুসারে এসব পোশাকের দামেও রয়েছে বেশ হেরফের। এর মধ্যে ফ্লোর টাচ ৩০০০-৭০০০, লং ফ্রক ২০০০-৫০০০, পার্টি ফ্রকগুলো পাওয়া যাচ্ছে ২৫০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। তবে এবার গরমের কথা মাথায় রেখে অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের কিনে দিচ্ছেন সুতির আরামদায়ক পোশাক। রাজধানীর ফরচুন মার্কেটের তৃতীয় তলার চৈতী স্টাইলের কর্ণধার পরিমল দেবনাথ বলেন, এবারের ঈদে সোনামণিদের জন্য এসেছে ভিন্ন রং আর ডিজাইনের সব পোশাক। মেয়ে বাচ্চাদের জন্য এসেছে টিস্যু কাপড়ের ওপরে বিভিন্ন ডিজাইনের সব পোশাক। এ ছাড়া বাজিরাও মাস্তানি, দোপাট, শাড়ি ফ্রক, ওয়েস্টার্ন ডিভাইডার, শাড়ি ফ্লোর টাচ, লং-ফ্রক, লেহেঙ্গাসহ ভিন্ন নামের পোশাক। এসব ড্রেসের দাম পড়বে ২৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা। পোশাকের গুণগত মান ও ডিজাইন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ভাল। রবিবার বসুন্ধরা সিটিতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈদের শপিং করতে এসেছিলেন ধানম-ির বাসিন্দা লুবনা রহমান। শুরুতেই শিশুদের পোশাকে দাম নিয়ে অভিযোগ করেন তিনি। কি আর করা বাচ্চাদের আবদার মেটাতে পছন্দসই পোশাকই কিনতে হয়েছে। বসুন্ধরা সিটির কিডস ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী মোঃ খোকন বলেন, বিক্রি এখন আগের তুলনায় বেড়েছে। বসুন্ধরা সিটির বেবিস গ্যালারিতে কথা হয় বিক্রয়কর্মী মোঃ তাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার তাদের দোকানে ঈদে ছোটদের জন্য এসেছে চীন, থাইল্যান্ড ও ভারতীয় পোশাক। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের থ্রি কোয়ার্টারের মূল্য ৯৮০ থেকে ২২৫০ টাকা। সালোয়ারের বিশেষ একটি সেটের মূল্য ২৪৮০ থেকে ১৮৫০ টাকা, ডিভাইডার ফ্রক ১২০০ থেকে ১৮৫০ টাকা। ছেলেদের টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ১৪৯০ টাকায়। এছাড়া নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ঈদের বাজারের জন্য ভিড় করছেন ফুটপাথে। নিউমার্কেট সংলগ্ন ফুটপাথের ছোটদের পোশাক ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ঈদের বিক্রির হিড়িক এখনও শুরু হয়নি, এমনকি এখনও বিক্রি স্বাভাবিকের তুলনায় কম। বাজারদর আগের তুলনায় সব পোশাকে বেড়েছে গড়ে বিশ ভাগ। তিনি জানান, তার দোকানে জিন্স প্যান্টের মূল্য ২০০ থেকে ৬০০ টাকা, হাফ প্যান্ট ১৫০ টাকা, শার্ট ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টি-শার্ট ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, ফ্রক ৩০০ টাকা, স্কার্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও সালোয়ার ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা।
×