ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

১৫৫ কিলোমিটার নৌ-পথ খনন প্রকল্পের উদ্ভোধন কাল

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২২ মে ২০১৯

১৫৫ কিলোমিটার নৌ-পথ খনন প্রকল্পের উদ্ভোধন কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে নৌ-পথ পুনরুদ্ধারে এক মহাপরিকল্পনা গ্রহন করেছে সরকার। দেশের অভ্যন্তরে সাড়ে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ পুনরুদ্ধার করা হবে। এতে খনন করে প্রবাহমান করা হবে ১৭৮টি নদী। নীর্বাচনী ইসতেহার অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে সকল ধরণের কার্যক্রম শুরু করেছে। ১৬টি প্রকল্পে বিভক্ত করা হয়েছে সাড়ে দশ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ। এর মধ্যে তুমুল গতিতে এগিয়ে চলেছে তিনটি প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্পে চলমান রয়েছে ৪২টি নদীর ২ হাজার ৮৫ কিলোমিটার নৌ-পথ খনন প্রক্রিয়। ২০২১ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। বিআইডাব্লিটিএ সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীন নৌপথের ৫৩ টি রুটের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ১ম পর্যায়ে ২৪ টি নদীর নৌপথ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১১৫০ কিলোমিটার নৌ পথ পুনরুদ্ধার হয়েছে। মোংলা হতে চাঁদপুর ভায়া গোয়ালন্দ হয়ে রুপপুর পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার নৌ-পথ পুনরুদ্ধার পক্রিয়া চলামান রয়েছে। এছাড়া অন্য এলাকায় বিছিন্নভাবে ১২টি নদীর খনন কাজও চলছে। চট্ট্রগ্রাম হতে আশুগঞ্জ-বরিশাল ৯০০ কিলোমিটার নৌ-পথের খনন কাজ আগামী অর্থ বছরে শুরু হবে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক। এই প্রকল্পটি ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এছাড়া আগামী অর্থবছরে আরেকটি প্রকল্পে শুরু হবে আরও ৪টি নদীর খনন কাজ। এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১৮ সালে। এই প্রকল্পে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর ৪৯৩ কিলোমিটার নৌ পথের নাব্যতা ফিরিয়ে আন হবে। পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৫টি নদী। গোমতী, নামাকুড়া, ধনু, ধলেশ্বরী ও মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াইতরা, বোলাই শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ১৬২ কিলোমিটার নৌ-পথ দুইটি প্রকল্পে বিভক্ত করা হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণে জিনাই ,ঘাঘট, বংশী, নাগদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, রাঙ্গামাটি-থেগামুখ, বুরিশ্বর-পায়রা, সোয়া, সুতিয়া ও কাঁচামাটিয়া নৌ-পথের নব্যতা উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। এই উপলক্ষে তিনটি প্রকল্পে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে । এখানে প্রস্তাবিত হয়েছে ১১২৮ কিলোমিটার নৌপথ বলে সূত্রে জানা গেছে । হাওর অঞ্চলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং দ্বারা নাব্যতা বৃদ্ধি, নিস্কাসন ব্যবস্থার উন্নতি, পর্যটন, জলাভূমি ইকোসিস্টেম, সেচ এবং ল্যান্ডিং সুবিধাদী সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনার অওতায় থাকবে ১৮ টি নদী। এখানে ৬৯০ কিলোমিটার নৌ পথের ডিপিপিও প্রস্তুত করা শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে ন্যাভিগেশন উন্নতি ও ল্যান্ডিং সুবিধার আওতায় আনা হবে ১২টি নদী। খুলনা বিভাগে ল্যাংডিং সুবিধা, ওয়েটল্যান্ড ইকোসিস্টেম, সেচ, নাব্যতা বৃদ্ধি, ড্রেনেজ কনজেশন, এবং এমজি ক্যানের সহায়তার জন্য ১৯টি নদী খনন করা হবে। বরিশাল বিভাগেও একই সুবিধার আওতায় ৩১টি নদী খনন করা হবে। এছাড়া আরও ৪৭টি নদীর ২ হাজার ৭৫৪ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে সরকার। এদিকে এই মহাপরিকল্পনার আওতায় আজ বৃহস্পতিবার আরও ১৫৫ কিলোমিটার নৌ-পথ খনন প্রকল্পের উদ্ভোদন করবেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী জনাব খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এম.পি.। এই প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে ৭ টি রুটের খনন প্রক্রিয়া। চলমান রয়েছে ১৭টি রুটের খনন কার্যক্রম। এতে দেখা যায় মোট কাজের প্রায় ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। নেত্রকোনার ঝাঞ্জাইল উপজেলার জারিয়ায় সকাল ১১ টায় এই অনুষ্ঠানের উদ্ভোদন করবেন প্রতিমন্ত্রী। মোহনগঞ্জ হতে নালিতাবাড়ি পর্যন্ত ভোগাই কংস নদীতে এই খনন কাজ চালান হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রাণলয়ের অধীনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিটিএ) এই কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। ২৫ থেকে ৩০ মিটার প্রস্থে নদীটি খনন করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া শুস্ক মৌসূমে এর গভীরতা ৮ ফুট রাখার জন্য খনন পরিকল্পানা গ্রহন করেছে বিআইডাব্লিটিএ। মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, পূর্বধলা, ফুলপুর এবং নালিতাবাড়ি উপজেলা এলাকায় এই খনন কাজ চালান হবে। এ নৌ-পথটি খনন করা হলে এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কৃষি কাজে ও মৎস চাষে ব্যাপক উন্নতি ঘটবে বলে আশা করেছে স্থানীয় সাধারণ জনগণ। বিআইডাব্লিটিএ সূত্রে জানা যায়, ভোগাই কংশ নদীটি একটি সীমান্ত নদী। নৌ-পথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার। নদীটি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মধ্য দিয়ে ভোগাই নদী নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে ভোগাই নদীর মূল প্রবাহ ইছামতি নদীর গতিপথে প্রবাহিত হয়। শুধুমাত্র বর্ষাকালে কংশ নদী পথে সামান্য পানি প্রবাহিত হয়। ফলে এই গতিপথ বর্তমানে মরা চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। ভাটিতে নদীটির প্রস্থ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং তলদেশ ভরাট হয়ে আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। জারিয়া নামক স্থানে নদীর পারে সুইসগেট দিয়ে বিলের পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এককালে এই অঞ্চলের যোগাযোগ, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি এ নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল। কালের বিবর্তনে পলি পড়ে ভোলাই-কংস নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে বর্তমানে শুধুমাত্র বর্ষাকালে এ নৌ-পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী ও ছোট ছোট কার্গোয় মালামাল পরিবহন করা সম্ভব। শুস্ক মৌসূমে নাব্যতা সংকটের কারনে অল্প কিছু বিচ্ছিন্ন অংশ ছাড়া এ নৌ-পথ নৌ-চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কৃষিকাজ মারাতœকভাবে ব্যহত হয়। এ নৌ-পথে বেশ কিছু ব্যবসা কেন্দ্র অবস্থিত। নৌ-পথে নাব্যতা না থাকায় এসব ব্যবসা কেন্দ্রে সড়ক পথে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পরিবহন খরচ অনেকটা বেশী হচ্ছে। নৌ-পথে সার্বক্ষনিক নির্বিঘেœ কার্গো, নৌ-যান চলাচল অক্ষুন্ন রাখার নিমিত্তে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ-পথটির নাব্যতা ফিরিয়ে এনে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ করবে সরকার।
×