ভারতে সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর ইভিএম যন্ত্রের সুরক্ষা নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। মঙ্গলবার রাতভর দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ইভিএম যন্ত্র সংরক্ষিত স্ট্রং রুমের বাইরে পালাক্রমে পাহারা দিয়েছে বিরোধী শিবির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদি বিরোধীদের এই পদক্ষেপকে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। রবিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বুথ ফেরত সকল জনমত জরিপে ফের মোদির ক্ষমতায় আসার ইঙ্গিত মেলে। এ জন্য মঙ্গলবার রাতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর বাড়িতে ভোজসভার আয়োজন করা হয়। ভোজসভায় যোগ দিয়ে মোদি বলেন, ইভিএম কারচুপির বিতর্ক ঠিক নয়। এসব অপ্রয়োজনীয়। ওই ভোজসভায় আগামী পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান তৈরি করে বিজেপি শিবির। লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি বিরোধী জোটগঠন প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়েছে। বুধবার থেকে এই প্রক্রিয়ায় হাত লাগিয়েছেন দেশটির প্রবীণ নেতা, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের অন্যতম নেতা শারদ পাওয়ার। বুধবার সকালে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু জনতা দলের প্রধান নবীন পট্টনায়েক, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্র শেখর রাও ও ওয়াইএস আর কংগ্রেস নেতা জগন রেড্ডির সঙ্গে আলোচনা করেন। বিজেপি একা সরকার গঠনে ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে না পারলে যাতে এসব দলকে কাছে টানতে না পারে এ জন্য শারদ পাওয়ার বুধবার এই আগাম উদ্যোগ নেন। আবার বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর উদ্যোগ আরও জোরালো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির কর্নাটক রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও কর্নাটকের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারাস্বামীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দেবগৌড়া ও কুমারাস্বামী কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধীকে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে এক সূত্র জানিয়েছে। খবর এনডিটিভি ও পিটিআই অনলাইনের।
নাইডুর সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে দেবগৌড়ার ধর্ম নিরপেক্ষ জনতা দলের কর্মকর্তা রমেশ বাবু বলেন, বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দিল্লীতে কংগ্রেস আহূত বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি দেবগৌড়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই বৈঠকে নাইডু তার সঙ্গে রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, মমতা ব্যানার্জি, মায়াবতী, শারদ পাওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অন্যান্য নেতার বৈঠকের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। নাইডু বলেন, বিজেপিকে যে কোন উপায়ে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। তাদের কোনভাবেই ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠন করতে দেয়া যাবে না। মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা, মধ্যপ্রদেশের ভোপালের লোকসভা প্রার্থী দ্বিগি¦জয় সিংহ তার স্ত্রীকে নিয়ে ভোটিং যন্ত্র রাখা কক্ষের সামনে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। উত্তর প্রদেশের মেরুত ও রায়বেরিলিতে কংগ্রেস সদস্যরা রাতভর ভোটিং যন্ত্রের কক্ষের সামনে পাহারা দেয়। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে কংগ্রেসসহ ভারতের অন্তত ২২টি রাজনৈতিক দলের নেতারা ভিভিপ্যাট যন্ত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাদের সন্দেহের কথা জানায়। অবশ্য নির্বাচন কমিশন তাদের কথায় গুরুত্ব দেয়নি। সোমবার রাত থেকেই চন্ডিগড়ের কংগ্রেস নেতারা স্ট্রং রুমের বাইরে পাহারা বসিয়েছে। ওই প্রদেশে ২৪ ঘন্টা পালাক্রমে এই পাহারা কার্যক্রম চলছে। মুম্বাইয়ের কংগ্রেস প্রধান মিলিন্দ দেওরা নির্বাচন কমিশনের কাছে মঙ্গলবার পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, স্ট্রং রুমের বাইরে পাহারার মাত্রা আরও বৃদ্ধি করা হবে। আর স্ট্রং রুমের সিসিটিভির পাসওয়ার্ড দিলে প্রার্থীরা গণনা কক্ষের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারত। মুম্বাইয়ের দক্ষিণের একটি আসন থেকে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মিলিন্দ দেওরা। একই দিন মুম্বাই দক্ষিণের প্রার্থী সঞ্জয় নিরুপম ভোটযন্ত্র রাখার কক্ষের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।