ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাবার সঙ্গে মায়ের নাম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৩ মে ২০১৯

 বাবার সঙ্গে মায়ের নাম

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সন্তানের পরিচিতির ক্ষেত্রে এক সময় পিতার নাম উল্লেখ করাই ছিল নিয়ম। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ২০০০ সালের ২৭ আগস্ট বাধ্যতামূলকভাবে বাবার সঙ্গে মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এর পর থেকে সন্তানের পরিচয় দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পিতার সঙ্গে মাতার নামও উল্লেখ করা হয়। তবে তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এক আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার বাবার সঙ্গে মায়ের নাম সংযুক্ত করার নির্দেশনা থাকলেও কেন এতদিন বাস্তবায়ন করা হয়নি তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১ মাসের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯ বছর আগে করা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজ্ঞাপন এখনও পর্যন্ত যথার্থভাবে কার্যকরী না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারায় দেশটাকে এগিয়ে নিতে যে সব কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন, সেখানে অর্ধাংশ নারী জাতির ভূমিকাকে আরও সময়োপযোগী এবং যথার্থ ধারায় বেগবান করে সন্তানের পরিচিতির ক্ষেত্রে মায়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় তুলে ধরেন। সেই লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে গত কয়েক বছর ধরে সন্তানের স্কুলে ভর্তি থেকে আরম্ভ করে কর্মজীবনে প্রবেশসহ আরও প্রয়োজনীয় পর্যায়ে পিতার পাশে মায়ের নামটি যোগ করা হচ্ছে। এমন মহৎ কর্মযোগ কিছু জায়গায় প্রয়োগ করা হলেও সর্বজনীন হতে সময় লাগছে। রক্ষণশীল সমাজের গতানুগতিক মূল্যবোধ, সংস্কারই নতুন কোন আইন বা নির্দেশনা যথার্থভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়। তারই দায়ভাগ এসে পড়ে পুরো সামাজিক আঙ্গিনায়। সন্তানের জন্য মায়ের যে দায়বদ্ধতা, স্নেহপ্রীতির অকৃত্রিম বাঁধন সেখানে পরিচিতির বেলায় মায়ের প্রাধান্য বাবার সমমর্যাদা হওয়াই তো বাঞ্ছনীয়। বাবা-মা উভয়ের সান্নিধ্য, মায়া-মমতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সর্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে গড়ে ওঠা সন্তানের ওপর অধিকার, দাবি দু’জনেরই সমান। সেটা পারিবারিকভাবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বৃহত্তর সামাজিক আঙ্গিনায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে কেন এত দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে পড়তে হয় সেটা বোধগম্য নয়। সন্তান গর্ভে ধারণ থেকে শুরু করে জন্ম দেয়া, লালন পালনে সর্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা মায়েদের অধিকারকে কোনভাবেই খর্ব করা যায় না। মা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নারী স্বাধীনতার ব্যাপারও বৈকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের সর্ববিধ অধিকার, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার আলোকেই ক্ষমতায় আসার পরই সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের নাম একই সঙ্গে সংযুক্তকরণে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা মাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির একটি বিশিষ্ট মাইলফলক। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের দায়-দায়িত্ব, দাবি, অধিকার একেবারে সমান। বরং মায়ের ক্ষেত্রে একটু বেশি বললেও ক্ষতি নেই। মায়ের গর্ভে, স্নেহছায়ায় সন্তানের বড় হওয়া সেও এক অভাবনীয় প্রাপ্তি। মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ির টান সেটাও অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। সে ক্ষেত্রে মায়ের যথাযথ পাওনা তাকে দিতেই হবে।
×