ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমিনূর রশীদ বাবর

চাই নারীবান্ধব সমাজ

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৩ মে ২০১৯

  চাই নারীবান্ধব সমাজ

নারী স্রাষ্টা, নারী শক্তি, নারী পারে না এমন কোন কাজ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুরুষশাসিত এই সমাজ ব্যবস্থা চরমভাবে নারীবিরোধী। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই খারাপ। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজ ব্যবস্থা নারীকে সব সময় সেবাদাসী হিসেবে দেখে। তার নমুনাস্বরূপ দেখবেন ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় আর মেয়ের বেলা তার সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করে। পর্দার দোহাই দিয়ে মেয়েকে ঘরে রেখে দেয়। কারণ মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠালে পর্দা নষ্ট হবে। এতে পাপ হবে। এ পাপের জন্য মা-বাবা বেহেস্তে যেতে পারবে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় নারীর আচরণের ওপর বেহেস্ত পাওয়া না পাওয়া নির্ভরশীল। আবার বলা হয় মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। ঠিক একইভাবে নারীকে ‘তেতুল’ খেতাব দিয়ে নারী নিপীড়নকে উৎসাহিত করা হয়েছে। করা হয় নারী জাতিকে অপমান। মোটকথা পুরো সমাজটাই নারীবিরোধী। অথচ নারী সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট আইন কানুন আছে। এমন কি সর্বোচ্চ শাস্তিরও বিধান আছে। এত সবের পরও নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। দিন দিন এই কুকর্ম বেড়েই চলছে। প্রতিদিন খবরের কাগজে বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখবেন কোথাও না কোথাও নারী ধর্ষণের দুঃসংবাদ। এই তো গত ৬ মে পিরোজপুরগামী স্বর্ণলতা নামক বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া নাম্মী এক স্টাফ নার্সকে বাসচালক ও হেলপারসহ অন্যরা মিলে গণধর্ষণ করে হত্যা করে। কি বীভৎষ কি নির্মম! একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র কতটা সভ্য, কতটা উন্নত তা নির্ভর করে সে সমাজ - রাষ্ট্রের প্রতিটি সূচকে নারীর অবস্থানের ওপর। এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা দুঃখজনক। আর এই সব নরাধমদের কারণে সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকা- আড়ালে চলে যায়। আর এই সব কুকর্মের মূল কারণ হিসেবে জনগণ দায়ী করছে বিচারহীনতাকে। জনগণের সামাজিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু যারা সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তারা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ সোনাগাজীর নুসরাত। নুসরাতের সঙ্গে ওখানকার পুলিশ ও প্রশাসন যে আচরণ করেছে তা দেশবাসীর জানা আছে। এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। কিন্তু সরকারের অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মান্য করে না। দেশের সর্বক্ষেত্রে চেতনাবিরোধী কর্যকলাপ চলছে। স্বাধীনতার চেতনাবিরোধীদের সঙ্গে তাদের গভীর সখ্য। তার বাস্তব প্রমাণ নুসরাতের ঘটনা। অতএব, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীকে মর্যাদার আসনে স্থান দিতে হলে প্রতিটি পরিবারের মা-বাবা সন্তানদের নীতি, নৈতিকতা, মানবিকতা শিক্ষা দিতে হবে। নারীর নিরাপত্তার লক্ষ্যে সকল গণপরিবহনে নারী সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার বাধ্যতামূলক করতে হবে। গীর্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে
×