ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষক রুখতে হবে

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৩ মে ২০১৯

 ধর্ষক রুখতে হবে

সম্প্রতি চলন্ত বাসে নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তার শঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। আমরা সবাই খুবই শঙ্কায় রয়েছি। গণপরিবহনে যাতায়াতকালে প্রত্যেক নারী তার নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত। তেমনি দায়িত্বশীল পুরুষরাও তাদের আপনজন মা, বোন, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয় নারী সদস্যদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা নিয়ে শঙ্কিত। নরপিশাচরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে নারীর বয়স, পেশা, অবস্থান, সময় কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। আরও আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে- ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা। আলামত নষ্ট করে শাস্তি থেকে বাঁচতে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের পর আরও একটি মহাঅপরাধের ঘটনা ঘটছে। গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার মতো অবস্থা হুট করে তৈরি হয়নি। কয়েক বছর থেকে গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রধান ইস্যুগুলোর একটি ইস্যুতে পরিণত হয়েছে মাত্র। গণপরিবহনে যে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা সমাজের দুরবস্থাকে ইঙ্গিত করে। চলন্ত বাসে ধর্ষণের কারণ চলন্ত বাস নয়। চলন্ত বাসে ধর্ষণের কারণ ‘সুযোগ’। ধর্ষক উপযুক্ত সময়ের সন্ধান করতে থাকে। কোথায় ধর্ষণ হচ্ছে না? স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট শিক্ষকের হাতে, কোচিংয়ের শ্রেণীকক্ষে, কর্মস্থলে, রাস্তা-ঘাটে, বাড়িতে একা পেয়ে, অপহরণ করে আটকে রেখে, কোথায় হচ্ছে না? ধর্ষক চায় সুযোগ। ধর্ষকের যদি সুযোগ থাকে তবে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ঠিক তেমনি চলন্ত বাসে একা পেয়ে ধর্ষক সেই সুযোগের ব্যবহার করে। চলন্ত বাসে যে ধর্ষকেরা ধর্ষণ করেছে তারা অন্য কোথাও একই সুযোগ পেলে একই কাজ করত। ধর্ষকদের জন্য নতুনভাবে যোগ হয়েছে ‘চলন্ত বাস’ নামক ‘সুযোগ’। নতুন এই সুযোগ সৃষ্টি ও একের পর এক ঘটনা ঘটার ফলে আমরা সবাই আতঙ্কিত। চলন্ত বাসে ধর্ষণ ঠেকাতে কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই। কোন বাস কোন রুটে কখন যাচ্ছে, বাসের চালক ও সহকারী কারা, কখন, কোথায় দায়িত্ব পালন করছে তার তথ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। বেনামে কোন চালক, সহকারী কোন গণপরিবহন নিয়ে যেন সড়কে নামতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রতিটি যানবাহনের ভেতরে ও সড়কে গোপন ক্যামেরার (সিসিটিভি) ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের কাছে প্রতিটি যানবাহনের তথ্য রয়েছে। লাইসেন্সবিহীন যানবাহন ও চালক দুটোই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার, মালিকপক্ষ ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো চাইলে খুব সহজে অল্প সময়ের মধ্যেই একটি ডাটা সংরক্ষণাগার তৈরি সম্ভব। পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার মনেই ভয় ঢুকাতে হবে। এই ভয় নজরদারির ভয়। চালক ও সহকারীরা যখন নিশ্চিত জানবে তাদের নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে তখন চলন্ত বাসে তৈরি হওয়া ধর্ষণের ‘সুযোগ’ পন্ড হবে। সেইসঙ্গে সতর্ক হতে হবে নারীদের। সতর্কতার বিকল্প বর্তমান সময়ে আপাতত নেই। বাসে অনেক নারী যাত্রী কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে আনমনে গান শুনতে থাকে, অনেকে মুঠোফোনের স্ক্রিনে হারিয়ে যায়। অনেকেই ‘আশপাশে যা হচ্ছে হোক, তাতে আমার কী’ ভাব নিয়ে থাকে। এমন মনোভাব থাকলে চলবে না। আশপাশে কী হচ্ছে তা খেয়াল করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা থেকে
×