ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অমিত দাস

ওরা কি মানুষ!

প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৩ মে ২০১৯

  ওরা কি মানুষ!

ওতপেতে থাকা মাংসলোভী ক্ষুধার্ত নিশাচর প্রাণীর মতো একশ্রেণীর নররূপী নরপিশাচ পাবলিক পরিবহনে নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, নারীর সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের পাশবিকতা এখানেই থেমে নেই এমনকি আদিম কামনা-বাসনা চরিতার্থ করে নিঃসহায় নারীকে হত্যা পর্যন্তও করছে। আমি মনে করি এটা মানব সমাজে বর্বরতার চরম বহির্প্রকাশ। একটি সভ্য সমাজে এ ধরনের মানবসভ্যতার পরিপন্থী কর্মকান্ড চলতে দেয়া যায় না। আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। সমাজকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে অস্বীকার করার আজ কোন সুযোগ নেই। আর নারীকে ঘরে বসিয়ে রাখলে সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে কি করে? এমতাবস্থায় নারীর যদি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সবসময় একটা ফোবিয়া নিয়ে বাড়ির বাহিরে বেরুতে হয় তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবে তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পাদন করতে পারবে না। ফলাফল কি দাঁড়াল বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতভাবে বাধাগ্রস্ত। এই অস্বাভাবিক অসহনীয় উদ্বেগ থেকে উত্তরণের উপায় কি? দেশের উন্নয়ন নারীর ক্ষমতায়ন নারী অধিকার সবকিছু একসঙ্গে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং একইসঙ্গে গোটা সমাজকে এক মহাসমস্যার জালে জড়িয়ে ফেলছে। আমাদের মুক্তি কোথায়? নারীবান্ধব সমাজ কি তাহলে নারীকে আমরা উপহার দিতে ব্যর্থ। আজকে গণপরিবহনে যে মেয়েটি যে নারীটি নিপীড়নের নির্যাতনের নিগ্রহের শিকার হচ্ছে- সে অবশ্যই আমার-আপনার এই সমাজেরই কারও না কারও বোন। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে ইবলিশরা কেন হোলি খেলবে? যেসব জানোয়ার গণপরিবহনে নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ করে জাতির কপালে কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দিচ্ছে, আমাদের সামাজিক ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে, সোচ্চার হতে হবে এবং এহেন অসামাজিক অমানবিক কর্মকান্ড প্রতিহত করতে সমাজের সবাইকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে পারিবারিক পরিম-লে শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ সাধন করতে হবে। নারীর প্রতি সহযোগিতা সহমর্মিতা সৃষ্টি করতে হবে। বিকৃত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। অবাধ আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে আমরা যে অপসংস্কৃতি কুরুচির আমদানি করছি আমাদের আচরণে বেশ সচেতনভাবে সেটার কুফল সম্পর্কে আর বুঝি কোনভাবেই অবহেলা করার সময় নেই। এই সমস্যার সুরাহাও এত সহজে হবে বলে আমার মনে হয় না। কেবলমাত্র আইন প্রণয়ন করে আইনের ভয় দেখিয়ে আইনের ব্যবহার করে মানুষের আচরণের পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। আর ক্যামেরা দিয়ে আদিম কামনাবাসনার বশবর্তী মানুষের ক্যারেক্টার কারেক্ট করা যাবে না, যদি না তার বিবেকের বদ্ধ দুয়ার না খোলে। আমাদের নৈতিক চরিত্রে বলীয়ান হতে হবে। একজন মানুষ হিসেবে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি আমাদের প্রত্যাশিত আচরণ কী হওয়া উচিত? আর এটা মনে রাখতে হবে ব্যবহারে বংশের পরিচয়। আমি আমার আচার ব্যবহার দ্বারা যেন আমার বংশের জন্য আমার পরিবারের জন্য কোন প্রকার বদনাম কুড়িয়ে না আনি। এই ব্যাপারটি যদি আমি সবসময় মাথায় রাখি তাহলে আমার মন কোন ধরনের অন্যায় অপরাধে সায় দিবে না। ফলে সমাজও মুক্তি পাবে অহেতুক ঝামেলা থেকে। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×