ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব্যসাচী দাশ

ঈদের সিনেমা বনাম ক্রিকেট বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৩ মে ২০১৯

ঈদের সিনেমা  বনাম  ক্রিকেট বিশ্বকাপ

ইংরেজী বছরের ছয় নম্বর মাসে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। কিছুদিন আগে নতুন যে বছরটি ক্যালেন্ডারের পাতায় যোগ হয়েছিল দেখতে দেখতে তার বয়স এখন ১৮০ দিন! এমনি করে কিছুদিন পর আমরা হয়ত হিসাব কষতে বসব পাওয়া না পাওয়ার প্রাপ্তি নিয়ে। এসব নিয়ে ‘সময়’ এর কোন মাথাব্যথা নেই। সে তার মতো চলমান। ২ হাজার ১৯ সাল যখন শুরু হয়েছিল প্রথম দুই মাসে হাতেগোনা দু’একটি নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। নতুন বছরের সিনেমা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে কোন আগ্রহ না থাকলেও সংবাদ মাধ্যমগুলোর আগ্রহের কমতি ছিল না। কিন্তু ফলাফল শূন্য! চলতি বছরের এই অর্ধকালে এখনও পর্যন্ত কোন সিনেমা দর্শকদের সেই অর্থে বিনোদিত করতে পারেনি। মাস খানেক আগে যখন নতুন সিনেমা মুক্তির ক্রান্তিকাল তখন বাধ্য হয়ে হলমালিক এবং পবিবেশকদের থেকে ঘোষণা আসে দিনের পর দিন অর্থদ- দিয়ে এভাবে হল চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। হয় বিদেশী সিনেমা দেখানোর অনুমতি দেন, না হয় সারাদেশে হল বন্ধ করে দেব। তাদের বেঁধে দেয়া আলটিমেটামের খবর দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়িত হয়। প্রসঙ্গে হল মালিক, পরিবেশক এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দেয়া যুক্তিতর্ক এক রকম বৃথা বাৎচিতে পরিণত হয়। শেষে অসন্ন ঈদকে উপলক্ষ করে উভয়পক্ষ তাদের অবস্থান থেকে আপাতত সরে আসে। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের এই যখন অবস্থা তখন আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তাও এখন আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দাপটে অনেকটা ম্লান মনে হচ্ছে। কারণ কাগজে কলমে স্বীকৃতি না থাকলেও ক্রিকেট খেলা আমাদের ধ্যান জ্ঞান। দেশের চৌকস খেলোয়াড়রা নিজেদের আগেই প্রমাণ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটে সামর্থ্য। আসলে সবই হয়েছে খেলোয়াড়দের দৃঢ় প্রত্যয় এবং অসংখ্য মানুষের ভালবাসায়। এক সপ্তাহ বাকি নেই এই মহারণের। দেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন এবং পত্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশিত হচ্ছে বিশ্বকাপের আলাদা আলাদা খবর। এই যখন অবস্থা তাহলে ঈদ উপলক্ষে সিনেমা নিয়ে যে স্বপ্ন-তবে কি সে আশায় গুড়ে বালি! রোজার আগে একাধিক মাধ্যম থেকে শোনা গিয়েছিল এবারের ঈদে কমপক্ষে পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পাবে। দিনে দিনে এই সংখ্যা কমে গিয়ে ঠিক কয়টায় এসে দাঁড়িয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সভাপতি ইফতেখারউদ্দিন নওশাদের কাছে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয়, কি ভাবছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং ঈদের সিনেমার প্রেক্ষাপট নিয়ে? নওশাদ; দেখেন চার বছর পর ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর। আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীর ক্রিকেট অনুরাগীরা এই আসরের অধির অপেক্ষায়। এমন সময় আবার ঈদের ছুটি। সিনেমার বাজারে তো মন্দা প্রভাব পরবেই। এমনিতেই সিনেমার বর্তমান যে হাল তাতে করে যে সংখ্যক হল অবশিষ্ট আছে সেগুলো সব যে খোলা থাকবে তা নিশ্চত করে বলা যাচ্ছে না। ঈদের পরও নতুন সিনেমার খবর নেই। আমরা চেষ্টা করছি হলে খেলা দেখানোর, সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছি। বিশেষ করে আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলা যে পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে তাতে করে এই খেলাকে কেন্দ্র করে হলেও দর্শক হলে আসুক। জানেনই তো আমাদের দেশের চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনয় শিল্পীদের দিন দিন যে হাল হচ্ছে তাতে করে সারাবছর হল খোলা রাখা আদৌ সম্ভব নয়। তারা একে একে সম্ভাবনার সব রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। এভাবে সম্ভব নয়। অন্যদিকে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিষয়টা নিয়ে তারা অবগত আছেন কিনা। জবাবে গুলজার বলেন, হ্যাঁ। বিষয়টা নিয়ে আমরা অবগত আছি। এটা এক রকম দুর্ভাগ্য বলা চলে। যেহেতু বিশ্বকাপ তারওপর নিজের দেশের অংশগ্রহণ। মানুষের কৌতূহল তো আকাশচুম্বী! এর মধ্যে ঈদের নতুন সিনেমা, কি করার আছে। এখানে তো কারও কোন হাত নেই। প্রথমে শুনেছিলাম এবারের ঈদে পাঁচটা সিনেমা মুক্তি পাবে, এই সংখ্যা কী ঠিক থাকবে? এটা আপাতত বলা যাচ্ছে না। হল মালিকদের থেকে বলা হচ্ছে তারা মিলনাতায়নে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখাবে। এ ব্যাপারে আপনারা কি ভাবছেন? হলে সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি আছে। তারা যদি খেলা দেখায় সেটা হবে বেআইনী। সরকার তো তাদের সিনেমা প্রদর্শনের জন্য অনুমতি দিয়েছে। খেলা দেখানোর জন্য নয়। তাছাড়া খেলা দেখালেও এর টিকেটের মূল্য কিভাবে নির্ধারিত হবে। আর টাকাই বা কারা পাবে। এমন বিষয়গুলো কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার। তারপর সরকার যদি তাদের অনুমতি দেয় তাহলে দেখাবে। আসন্ন ঈদের সিনেমা নিয়ে এই যখন সিনেমেটিক অবস্থা তখন আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের অদূর ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আপাতত বলা মুশকিল। অন্যবারের মতো নয় এবারের ঈদের সিনেমায় ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রভাব থাকবে তা পরিষ্কার। কারণ দেশের তরুণ সমাজ থেকে প্রবীণরাও এখন দেশের ক্রিকেট নিয়ে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত। সব মিলিয়ে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে এবারের ঈদ উৎসবের সিনেমা। তারপরও কথা থাকে। সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা সব সময়ই আমাদের কাছে অন্যরকম। সবকিছুর পরও আমরা সিনেমার দর্শক। এখন কথা হলো- দর্শকদের মনের ক্ষুদা নিবারণের ঠিক ঠিক রসদ যদি ঈদের সিনেমা যোগ হয় তবে হলে দর্শক আনতে বা সাফল্য অর্জন করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে বলে মনে হয় না।
×