ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে মিলার ও ওসির যোগসাজশ

খাদ্যগুদামে নতুনের নামে পুরনো চালের স্তূপ

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২৩ মে ২০১৯

 খাদ্যগুদামে নতুনের নামে  পুরনো চালের স্তূপ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ মিলারের যোগসাজশে নিম্নমানের পুরনো চাল নতুন দেখিয়ে রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামে গুদামজাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাল সররবাহকারী চুক্তিবদ্ধ মিলার ও গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিলেমিশে এই কান্ড করছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এরই মধ্যে জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভুঁইয়া একটি গুদাম সিলগালা করে দেন। পরে চাল পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তিনি। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে গুদাম কর্মকর্তার (ওসি, এলএসডি) বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামের নতুন চাল সরবরাহের জন্য শাহমখদুম রাইস মিলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। ইতোমধ্যে ১৫৮ টন চাল সরবরাহ করেছে শাহমখদুম রাইস মিল। তবে গুদামটির তত্ত্বাবধায়ক (ওসি, এলএসডি) মাজেদুল ইসলামের যোগসাজশে সেই চালের একটি বড় অংশই পুরনো দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে খাদ্য গুদামটিতে গিয়ে দেখা যায়, ৪ নম্বর গুদামে রয়েছে সরবরাহ করা চাল। সেখানে পুরাতন চাল রয়েছে প্রায় ৪৪৯ টন। এবার নতুন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৪৯ টন। সেই লক্ষ্যে গুদামে নতুন করে আরও চাল ভর্তি বস্তা ঢোকানো হচ্ছে। প্রতিটি বস্তার ওজন ৩০ কেজি। পাটের তৈরি বস্তাগুলো সরকারের সরবরাহ করা। মিল থেকে সেই বস্তায় চাল ভরে নিয়ে এসে সারিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে গুদামে। অভিযোগ, ৪ নম্বর গুদামের চালের বস্তার পাঁচটি স্তূপের মধ্যে নতুন সংগ্রহকৃত চালের একটি স্তূপে রয়েছে অনিয়ম। সেখানে নতুন চালের আড়ালে লুকানো রয়েছে পুরাতন চালের বস্তা। একটি সূত্রের দাবি, পুরনো চালের বস্তার সংখ্যা আনুমানিক ১ হাজার ৩০০টি। আর চালের পরিমাণ ৩৯ টন। জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভুঁইয়া গুদামে গিয়ে কয়েক শ্রমিককে দিয়ে চালের বস্তা খুলে খুলে দেখেন। গুদামের মাঝের অংশের ৪ হাজার বস্তা চালের মধ্যে এভাবে ৫৩২ বস্তা দেখা সম্ভব হয়। এতে ২০ থেকে ২২ বস্তা নির্দেশনার বাইরের চাল পাওয়া যায়। খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলছেন, বাকি চাল দেখা সম্ভব নয়। কারণ, এগুলো চেক করার মতো তাদের জনশক্তি নেই। গুদামের শ্রমিকরা জানান, খাদ্য গুদাম থেকে চাল বা গম রেশন হিসেবে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অনুদান সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয়। তবে রেশনের সেই চাল বা গম সংশ্লিষ্টরা অনেক সময় না নিয়ে গোপনে মিল মালিক বা গুদাম সংশ্লিষ্টদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবে খাদ্য শস্যগুলো গুদামেই পড়ে থাকে। আর হাতবদল হয় শুধু বিপুল অঙ্কের অর্থ। পরবর্তীতে সেই খাদ্যশস্যগুলো চুক্তিবদ্ধ মিলারদের মাধ্যমে গুদামে সরবরাহ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়ে থাকে। এভাবে মিলার ও গুদাম কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই চলে পুরাতন খাদ্যশস্য চক্রাকারে গুদামজাত করার প্রক্রিয়া। শ্রমিকরা জানান, গুদামে নতুন চাল এলে প্রতিটি বস্তায় রং দিয়ে সিল করে একটি নির্দিষ্ট নম্বর বসানোরা নিয়ম রয়েছে। যেটিকে বলা হয় ‘স্টেনসিল’। এ জন্য শ্রমিকদের টিন কেটে একটি ফর্মা তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তবে সরেজমিনে শ্রমিকদের সেই কাজটি করতে দেখা যায়নি। তারা স্টেনসিল না করিয়েই টনকে-টন চালের বস্তাগুলো গুদামে তুলছেন। শ্রমিকরা এই স্টেনসিল না করার বিষয়েও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। গুদামের তত্ত্বাবধায়ক (ওসি, এলএসডি) মাজেদুল ইসলাম বলেন, গুদামে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। তবে চালের যে স্তূপ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, তা চেক করার অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, এখন চেক করা সম্ভব না। অভিযোগের বিষয়ে শাহমখদুম রাইস মিলের ব্যবস্থাপক তানভীর সুলতান কোন কথা বলতে চাননি। জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভুঁইয়া বলেন, নতুন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে আমরা মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছি। পুরাতন চাল দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমি সদর খাদ্য গুদামের চালের বস্তা খুলে খুলে দেখেছি। কিছু পুরনো চাল পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×