ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচন্ড তাপপ্রবাহে চাঁচড়া মৎস্যপল্লীতে মাছের পোনা উৎপাদনে বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২৪ মে ২০১৯

 প্রচন্ড তাপপ্রবাহে চাঁচড়া মৎস্যপল্লীতে মাছের পোনা উৎপাদনে বিপর্যয়

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ দেশের মাছের রেণু পোনার ৬০ শতাংশ উৎপাদিত হয় যশোরের চাঁচড়ায়। প্রতি বছর এখানকার হ্যাচারিগুলো সর্বমোট ৫৪ হাজার কেজি বিভিন্ন মাছের রেণু উৎপাদন করছে। এছাড়া ১ হাজার ২শ’ মিলিয়ন সাদা মাছের পোনা ও ৫০ মিলিয়ন পাঙ্গাসের পোনা উৎপাদন করে। কিন্তু এবার তাপপ্রবাহের কারণে রেণু উৎপাদনে ধস নেমেছে। হ্যাচারি মালিকরা রেণু পোনা উৎপাদন করতে পারছে না। পানি গরম হয়ে যাবার কারণে হ্যাচারি থেকে রেণু পোনা দিতে পারছে না পুকুরে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর হ্যাচারিগুলোতে রেণু উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে এ হ্যাচারিতে রেণু পোনা মারা যাচ্ছে। এতে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন হ্যাচারি মালিকরা। এ অবস্থায় মাছের রেণু উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহে যশোরে হ্যাচারি মালিকসহ পোনা মাছ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার ওপর। মৎস্য চাষীদের সূত্রে জানা যায়, চৈত্র থেকে মধ্য আষাঢ় রেণু পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আর তাপপ্রবাহের কারণেই রেণু পোনা উৎপাদনে এ বিপর্যয় বলে জানিয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। সহনীয় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়ায় ছোট পুকুর বা খানাগুলোতে প্রতিদিন পোনা মাছ মারা যাচ্ছে। এজন্য তারা হ্যাচারি থেকে মাছ সংগ্রহ ও বিক্রি করা কমিয়ে দিয়েছেন। আর চাহিদা কমে যাওয়ায় হ্যাচারিগুলোও উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। শহরের চাঁচড়া এলাকার মাছ চাষী অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, গরমের কারণে পুকুর মালিকরা রেণু বা পোনা ক্রয় কমিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ না থাকায় তাপ নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। তিনি জানান, শীঘ্র বৃষ্টি না হলে হ্যাচারি মালিকদের পাশাপাশি পুকুর মালিকরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার জানান, সাধারণত এ সময়ে যশোরের সব হ্যাচারি মিলিয়ে সপ্তাহে গড়ে দেড় কোটি টাকার রেণু ও চারা পোনা উৎপাদন হয়। অথচ গত দুই সপ্তাহে তার নিজের হ্যাচারিতেই প্রায় ২ লাখ টাকার রেণু ও মা মাছ মারা গেছে। তার মতো যশোরের অধিকাংশ হ্যাচারিই একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণে উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই গত দুই সপ্তাহে তাদের ক্ষতি কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে কয়েকদিন ধরে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা মাছ চাষের জন্য খুবই প্রতিকূল। এমন তাপমাত্রায় রেণু উৎপাদন সম্ভব হয় না। তিনি জানান, বছরের এই সময়টা মাছ চাষীদের জন্য খুবই খারাপ। এ সময়ে রেণু উৎপাদনকারীদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে বা তাপমাত্রা কমে গেলে রেণু উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে। তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে তারা মাছের রেণু উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের ছায়া দেখে রেণু রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া পুকুরে কিছু অংশ ছায়া করে রাখার জন্য বলেছেন। যশোরে বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে যশোরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শনিবার ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই; বরং বাড়তে পারে।
×