ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে দশ হাজার কিমি নৌপথ পুনরুদ্ধার করা হবে

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৪ মে ২০১৯

 সাড়ে দশ হাজার কিমি নৌপথ পুনরুদ্ধার করা হবে

হাসান ইমাম সাগর ॥ সারাদেশে নৌপথ পুনরুদ্ধারে এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের অভ্যন্তরে সাড়ে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করা হবে। এতে খনন করে প্রবহমান করা হবে ১৭৮ নদী। নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে সকল ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। ১৬ প্রকল্পে বিভক্ত করা হয়েছে সাড়ে দশ হাজার কিলোমিটার নৌপথ। এর মধ্যে তুমুল গতিতে এগিয়ে চলেছে তিন প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্পে চলমান রয়েছে ৪২ নদীর ২ হাজার ৮৫ কিলোমিটার নৌপথ খনন প্রক্রিয়া। ২০২১ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। বিআইডব্লিটিএ সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩ রুটের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ১ম পর্যায়ে ২৪ নদীর নৌপথ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১১৫০ কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার হয়েছে। মংলা হতে চাঁদপুর ভায়া গোয়ালন্দ হয়ে রূপপুর পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া অন্য এলাকায় বিছিন্নভাবে ১২ নদীর খনন কাজও চলছে। চট্টগ্রাম হতে আশুগঞ্জ-বরিশাল ৯০০ কিলোমিটার নৌপথের খনন কাজ আগামী অর্থবছরে শুরু হবে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এছাড়া আগামী অর্থবছরে আরেক প্রকল্পের আরও ৪ নদীর খনন কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১৮ সালে। এই প্রকল্পে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর ৪৯৩ কিলোমিটার নৌপথের নাব্য ফিরিয়ে আনা হবে। পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৫ নদী। গোমতী, নামাকুড়া, ধনু, ধলেশ্বরী ও মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াইতরা, বোলাই শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ১৬২ কিলোমিটার নৌপথ দুইটি প্রকল্পে বিভক্ত করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণে জিনাই, ঘাঘট, বংশী, নাগদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, রাঙ্গামাটি-থেগামুখ, বুড়িশ্বর-পায়রা, সোয়া, সুতিয়া ও কাঁচামাটিয়া নৌপথের নাব্য উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। এই উপলক্ষে তিন প্রকল্পে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে প্রস্তাবিত হয়েছে ১১২৮ কিলোমিটার নৌপথ বলে সূত্রে জানা গেছে । হাওড় অঞ্চলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং দ্বারা নাব্য বৃদ্ধি, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি, পর্যটন, জলাভূমি ইকোসিস্টেম, সেচ এবং ল্যান্ডিং সুবিধাদি সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় থাকবে ১৮ নদী। এখানে ৬৯০ কিলোমিটার নৌপথের ডিপিপিও প্রস্তুত করা শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে নেভিগেশন উন্নতি ও ল্যান্ডিং সুবিধার আওতায় আনা হবে ১২ নদী। খুলনা বিভাগে ল্যান্ডিং সুবিধা, ওয়েটল্যান্ড ইকোসিস্টেম, সেচ, নাব্য বৃদ্ধি, ড্রেনেজ কনজেশন এবং এমজি ক্যানের সহায়তার জন্য ১৯ নদী খনন করা হবে। বরিশাল বিভাগেও একই সুবিধার আওতায় ৩১ নদী খনন করা হবে। এছাড়া আরও ৪৭ নদীর ২ হাজার ৭৫৪ কিলোমিটার নৌপথের নাব্য ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এদিকে এই মহাপরিকল্পনার আওতায় বৃহস্পতিবার আরও ১৫৫ কিলোমিটার নৌপথ খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। এই প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে ৭ রুটের খনন প্রক্রিয়া। চলমান রয়েছে ১৭ রুটের খনন কার্যক্রম। এতে দেখা যায়, মোট কাজের প্রায় ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। নেত্রকোনার ঝাঞ্জাইল উপজেলার জারিয়ায় বেলা ১১টায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রতিমন্ত্রী। মোহনগঞ্জ হতে নালিতাবাড়ি পর্যন্ত ভোগাই কংস নদীতে এই খনন কাজ চালান হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) এই কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। ২৫ থেকে ৩০ মিটার প্রস্থে নদীটি খনন করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে এর গভীরতা ৮ ফুট রাখার জন্য খনন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিআইডব্লিটিএ। মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, পূর্বধলা, ফুলপুর এবং নালিতাবাড়ি উপজেলা এলাকায় এই খনন কাজ চালান হবে। এ নৌপথটি খনন করা হলে এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কৃষি কাজ ও মৎস্য চাষে ব্যাপক উন্নতি ঘটবে বলে আশা করেছে স্থানীয় জনগণ। বিআইডব্লিটিএ সূত্রে জানা যায়, ভোগাই কংস একটি সীমান্ত নদী। নৌপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার। নদী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মধ্য দিয়ে ভোগাই নদী নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে ভোগাই নদীর মূল প্রবাহ ইছামতি নদীর গতিপথে প্রবাহিত হয়। শুধু বর্ষাকালে কংস নদী পথে সামান্য পানি প্রবাহিত হয়। ফলে এই গতিপথ বর্তমানে মরা চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। ভাটিতে নদীর প্রস্থ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং তলদেশ ভরাট হয়ে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। জারিয়া নামক স্থানে নদীর পাড়ে স্লুইসগেট দিয়ে বিলের পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এককালে এই অঞ্চলের যোগাযোগ, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি এ নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কালের বিবর্তনে পলি পড়ে ভোগাই-কংস নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে শুধু বর্ষাকালে এ নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী ও ছোট ছোট কার্গোয় মালামাল পরিবহন করা সম্ভব। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সঙ্কটের কারণে অল্প কিছু বিচ্ছিন্ন অংশ ছাড়া এ নৌপথ নৌ-চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এ নৌপথে বেশ কিছু ব্যবসা কেন্দ্র অবস্থিত। নৌপথে নাব্য না থাকায় এসব ব্যবসা কেন্দ্রে সড়কপথে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পরিবহন খরচ অনেকটা বেশি হচ্ছে। নৌপথে সর্বক্ষণিক নির্বিঘেœ কার্গো, নৌযান চলাচল অক্ষুণœ রাখার নিমিত্তে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌপথটির নাব্য ফিরিয়ে এনে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ করবে সরকার।
×