ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোদির দাবার চালে বিরোধী শিবিরের কিস্তি মাত

ফের গেরুয়া ঝড়

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২৪ মে ২০১৯

ফের গেরুয়া ঝড়

বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ভোট উৎসবের ফল প্রকাশিত হয়েছে। কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক প্রচারেও বিজেপি শিবিরে ধস নামেনি। বরং পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অন্যান্য অ-বিজেপি রাজ্যেও এবার গেরুয়া শিবিরের জয়জয়কার। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, দলটির অপর নেতা রাজনাথ সিং এবং খোদ নরেন্দ্র মোদির দাবার চালের কাছে বিরোধী শিবিরের কিস্তি পুরোপুরি মাত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার পর এই প্রথম ভাল অবস্থানে রয়েছে বিজেপি। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। খবর এনডিটিভি, পিটিআই ও ইন্ডিয়া টুডে অনলাইনের। পাশাপাশি তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, ওড়িশা ও বিহারেও এবার মোদি ঝড় বয়ে গেছে। এসব রাজ্যে বিজেপি বরাবরই খারাপ অবস্থানে ছিল। তবে এবার এসব রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের জয়জয়কার। কংগ্রেস শিবিরের কাছে মূলত তুরুপের তাস ছিল উত্তরপ্রদেশ। প্রদেশটিতে এবার মোদি ঝড় থামাতে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের দল এক হয়ে নির্বাচন করেও ভাল ফল করতে পারেনি। প্রদেশটিতে বিজেপি সামান্য খারাপ করলেও পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্য থেকে এবার বেশি আসন পেয়ে তা পুষিয়ে নিয়েছে। মোদিবিরোধী মহাজোটের নেতৃৃত্ব দেয়া অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু নিজের রাজ্যেই কার্যত ধরাশায়ী হয়েছেন। ভোটের ফলের প্রবণতায় রাজ্যের ২৫ আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসন পেয়েছে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। প্রতিবেশী রাজ্য তেলেঙ্গানাতেও ভাল ফল করেছে বিজেপি। বিরোধী জোটের অগ্রগণ্য মুখ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এ রাজ্যে ব্যাপক আসন কমেছে তৃণমূলের। সেই জায়গায় উঠে এসেছে বিজেপি। ওড়িশাতেও বিজু জনতা দলকে বিরাট ধাক্কা দিয়ে ভাল ফল করেছে বিজেপি। কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিসগড়ের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। বিরোধী শিবিরের আশা ছিল, এই তিন রাজ্যে বিজেপির ফল ব্যাপক খারাপ হবে। কিন্তু তিন রাজ্যে কার্যত ২০১৪ সালের ফলের চেয়ে খুব একটা হেরফের হয়নি। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে বিহারে বিজেপি-জেডিইউ-আরএলএসপির জোট কার্যত বিরোধীদের বিদায় করে দেয়ার পথে। ঝাড়খ-েও প্রায় একই অবস্থা। উত্তর-পূর্বে বিজেপির ফল ভাল ছিলই। সেই প্রবণতা এবারও বজায় রয়েছে। তা হলে বিজেপি তথা এনডিএর এই বিরাট সাফল্যের সমীকরণ কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কারণ একাধিক। প্রথমত, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করলে গোবলয়ে বিজেপির ভোটবাক্সে ব্যাপক ধসের ইঙ্গিত থাকলেও, তা হয়নি। দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে নিজেদের আসন ধরে রেখেছে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী দলগুলো। গোবলয়ে যে সামান্য সংখ্যক আসন কমেছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বিহারের মতো রাজ্য। দাক্ষিণাত্যে বিজেপি কখনই শক্তিশালী ছিল না। তবু এবার কর্ণাটক, তেলেঙ্গানায় ভাল করেছে এনডিএ জোট। এই সব কিছুর যোগ ফলেই মুখ থুবড়ে পড়ছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। এদিকে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারতের অসংখ্য মানুষ। এ তালিকায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক টুইটার বার্তায় সুষমা লেখেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এমন বিপুল ভোটে বিজেপির জয়ের জন্য অনেক অভিনন্দন। জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সুষমার পাশাপাশি দলটির অন্য নেতারাও মোদিকে অভিনন্দন জানান। এবারের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে মোট সাতপর্বে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গত রবিবার সপ্তম পর্বের ভোট শেষে দেশটির সকল গণমাধ্যমের বুথ ফেরত জনমত জরিপে বিজেপি জোটকে এগিয়ে রাখার আভাস মেলে। এরপর থেকে বিরোধী শিবির সরব হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী থেকে শুরু করে কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধী ও তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এসব জনমত জরিপের আভাস আমলে নিতে চাননি। কিন্তু বুথ ফেরত জরিপই সত্যি হলো।
×