ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবায়িত হলে মৃত ময়ূর নদীতে প্রাণ সঞ্চার হবে নিরসন হবে শহরের জলাবদ্ধতা

জলাবদ্ধতা নিরসনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৫ মে ২০১৯

 জলাবদ্ধতা নিরসনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প

অমল সাহা, খুলনা অফিস ॥ জলাবদ্ধতা খুলনা মহানগরীর একটি প্রধান সমস্যা। পানি নিষ্কাশনের খাল, নদী ভরাট ও সকল স্থানে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতাজনিত জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য খুলনা সিটি কর্পোরেশন ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মৃতপ্রায় ময়ূর নদীসহ ৯টি খাল খনন ও পাড় বাঁধাই, প্রাইমারি ড্রেন, সেকেন্ডারি ড্রেন, স্লুইচ গেট, পাম্প হাউস, ব্রিজ নির্মাণসহ বহু কাজ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৯- ২০২৩ পর্যন্ত। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সুগম হবে। নিরসন হবে জলাবদ্ধতা সমস্যা। প্রাণ সঞ্চারিত হবে মৃত ময়ূর নদীতে। জানা গেছে, প্রায় তিন দশক আগে বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের আলুতলা নামক স্থানে কাজিবাছা নদীর শাখা নদী হাতিয়ার মুখে ক্লোজার নির্মাণ করা হয়। ক্লোজারের অপারেশনাল কাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় হাতিয়া ও তার সংযোগ নদী ময়ূরের অপমৃত্যু ঘটতে থাকে। এ দুইটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোতেও পানি প্রবাহ না থাকায় তা ভরাট হয়ে যায়। অবৈধ দখলদারদের কব্জায়ও চলে যায় ময়ূর নদী ও খালের বিভিন্ন জায়গা। খুলনা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ, রূপসা নদী এবং হাতিয়া ও ময়ূর নদীতে নগরীর পানি নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। ভৈরব ও রূপসায় স্রোতধারা থাকলেও এক সময়ের খরস্রোতা ময়ূর নদী এখন মৃত। হাতিয়া নদী ইতিপূর্বে খনন করায় এর অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও ময়ূর নদী ও খালগুলোর দুরবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে তেমন কোন উন্নতি হয়নি। দখল ও দূষণে ময়ূর নদীর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। ময়ুর ও হাতিয়া নদী এবং সংযোগ খাল থেকে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় বৃষ্টির দিনে খুলনা শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক গত নির্বাচনের পূর্বে নগরবাসীকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি ছিল। নির্বাচনে জয়লাভের পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে তিনি মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর পর সিটি কর্পোরেশন থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়। নগরীতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ নিরসনের জন্য গ্রহণ করা হয় ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদনও পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদীসহ ৯টি খাল খনন করা হবে। এর মধ্যে ময়ূর নদী ও খুদে খাল খনন এবং ক্ষেত্রখালী খাল, ছড়িছড়া খাল, হরিণটানা খাল, নারকেলবাড়িয়া খাল, তালতলা খাল, তালতলা সংযোগ খাল ও লবণচরা ২নং স্লুইচ গেট খাল খনন ও পাড় বাঁধাই করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৬২.৯৪ কিলোমিটার প্রাইমারি ড্রেন, ১২৯.৪২ কিলোমিটার সেকেন্ডারি ড্রেন, ৮টি স্লুইচ গেট নির্মাণ, আউটলেট খনন ও পাড় বাঁধাই করা হবে। নতুন নর্দমা সৃষ্টি করে শহরের মধ্য হতে নদী কিংবা খালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ৪.৪৮ একর জমি অধিগ্রহণ, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, ময়ূর নদীর ওপর ৩টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়সহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, খুলনাবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য তিনি সচেষ্ট রয়েছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সড়ক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করায় শহরে আগের মতো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়না। তিনি বলেন, সরকারী অর্থায়নে ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এর জন্য অর্থের সংস্থানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে তার আওতায় নদী-খালে অনেক অবৈধ দখলদার আছে। আসন্ন ঈদের পরে অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। এ বছর স্বল্প পরিসরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। আগামী বছর থেকে পুরোদমে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলবে বলে সিটি মেয়র জানান। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) চীফ প্লানিং অফিসার আবির-উল-জব্বার বলেন, খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। কনসালটেন্ট (পরামর্শক) নিয়োগের পর কনসালটেন্ট এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিশেষজ্ঞ টিম নক্সা তৈরি করে দেবে। এর পর টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে কনসালটেন্ট ও কুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দেয়া নক্সা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
×