ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইলা তান্ডবের ১০ বছর

উপকূলে খাবার পানির হাহাকার ॥ ভাঙ্গন ঝুঁকিতে বাঁধ

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২৫ মে ২০১৯

 উপকূলে খাবার পানির হাহাকার ॥ ভাঙ্গন ঝুঁকিতে বাঁধ

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ ২৫ মে আজ আইলা তান্ডবের ১০ বছর। দীর্ঘ দশ বছর পরও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূল এলাকাজুড়ে এখনও রয়েছে তান্ডবের ক্ষতচিহ্ন। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আইলাকবলিত হাজার হাজার পরিবার এখনও পুনর্বাসিত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত জনপদে এখনও চলছে বাসস্থান ও খাবার পানির জন্য তীব্র হা-হা-কা-র। লবণাক্ততার কারণে নলকূপ সফল হয়নি। মিষ্টিপানির আধার (পুকুর) গুলোও যখাযথভাবে সংরক্ষিত নেই। দীর্ঘদিনেও সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ হয়নি কয়েকশ’ কিলোমিটার জরাজীর্ণ বাঁধ। ছোট বড় ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। বাঁধ ভাঙ্গা আতঙ্কে দিন কাটে উপকূলবাসীর । ২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট আইলা আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদিপশু আর ঘরবাড়ি। গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। লাখ লাখ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আইলার আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু, আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। প্রলয়ঙ্করী আইলা আঘাত আনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। আইলাকবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এখনও ঠিকমতো সংস্কার হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত আইলাকবলিত এ বিশাল জনপদে খুবই কম সংখ্যক সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আইলার ভয়াবহতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বসবাসরত মানুষের চোখে মুখে এখনও ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি। আইলার আঘাতের পর থেকে এই উপকূলীয় জনপদ লবণাক্ত এলাকায় পরিণত হয়। এলাকার সবুজ বেষ্টনী হারিয়ে গেছে। লবণাক্ততা আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মরে যাচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। খাবার পানির জন্য নারী-পুরুষরা ছুটছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।
×