ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শরীফা খন্দকার

সুন্দরের কবি কাজী নজরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৫ মে ২০১৯

 সুন্দরের কবি কাজী নজরুল ইসলাম

কবি নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্য প্রিয়াকে অভিহিত করেছেন সুন্দর নামে। সেই মানসীর খোঁপায় তিনি জড়িয়ে দিয়েছিলেন তারার ফুল আর পদযুগলে পরিয়েছিলেন রংধনু ছানা আলতার রং। কাব্য প্রিয়াকে তিনি কতভাবেই না সাজিয়েছিলেন বিবিধ বর্ণে কত না রূপ-রসে। কিন্তু বঙ্গে জন্মগ্রহণকারী একদল দুর্বৃত্ত নজরুলের সেই রানীর খোঁপা থেকে খুলে নিয়েছিল তারার ফুল, রংধনু ছানা আলতার রং নিংড়ে তার চারযুগলকে করেছিল বর্ণহীন। পাষন্ডের হৃদয় নিয়ে তারা সুন্দরের কবি নজরুল কাব্য সম্ভারকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করেছে অসুন্দরের এক বৃত্তে। সেই সময় বিস্মৃতির ঘোরে নিমগ্ন কবি সেই অশ্রুমতী কাব্যলক্ষ্মীকে কেউ মুক্ত করে আনতে পারেননি। কিন্তু একদিন যখন ঝড়ের বেগে ‘কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে কর কররে লোপাট’ বলে মুক্ত করা হলো দেশ জননীকে- তখন আমরা বিশ্বাস করেছি নজরুলের কাব্যপ্রিয়ারও হয়ত মুক্তি ঘটেছে তখন। কিন্তু প্রবাসে এসে দেখলাম অতীতের মতোই কাজী নজরুলকে মনমতো কোন পরিচয় দান কিংবা ধর্মের ভড়ংয়ে আবদ্ধ করার প্রচেষ্টার অবসান বর্তমানকালেও হয়নি। যাদের পূর্বপুরুষরা একসময় কবিকে আখ্যা দিয়েছিল কাফের হিসেবে আজ তাদেরই উত্তরপুরুষ দল সাজছেন ধর্ম ভাই হিসেবে। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য অভিজ্ঞতার মধ্যে থেকে ছোট্ট একটির বিবরণ দেই। প্রায় এক যুগ ধরে এই নগরের বাঙালী অনুষ্ঠানগুলোতে সময় অভাবে- ইচ্ছের অভাবে বড় একটা যাতায়াত ঘটে না। কিন্তু কি করে যেন সেদিন হঠাৎ যাওয়া হয়েছিল নজরুল জন্ম-জয়ন্তীর একটি অনুষ্ঠানে। নজরুল গানের একজন খ্যাতিমান গায়িকা, দেশ থেকে আরও অনেক শিল্পীসহ এসেছিলেন কবির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে গান গাইতে। সেই বিশিষ্ট শিল্পী সেদিন তার গানে অবশ্যই মুগ্ধ করেছিলেন দর্শক-শ্রোতাকে। তারপর শেষ গানের মুখে এসে বললেন- সামনে আসছে রোজার ঈদ। এবার আমি নজরুলের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটা গেয়ে শেষ করব গাইবার পালা। আসুন, এখন আমরা সবাই মিলে এই গানটি গাইতে গাইতে নিজ নিজ বাড়ি চলে যাই। আমরা তো সেই ছোটবেলা থেকে রমজানের ঈদ উপলক্ষে এই গান শুনতে শুনতে শুধু বেড়ে উঠেছি নয়- এ গানটি না হলে যেন ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হতো না। আমরা প্রায় সকল শ্রোতাই শিল্পীর অনুরোধে এ গানে কণ্ঠ মেলালাম ঈদ আনন্দে। কিন্তু গানের পালা শেষ করে নজরুল গবেষক ও শিল্পী একটি বক্তব্য রাখলেন- এ গানটি বলে দেয় নজরুল ছিলেন ইসলামেরই একজন কবি। এই সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল কবির কাছে কত ঘৃণার বিষয় সেটা ছড়িয়ে আছে তার সাহিত্যজুড়ে : ‘গাহি সাম্যের গান- যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রিশ্চান। গাহি সাম্যের গান! কে তুমি? পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো? কন্ফুসিয়াস্? চার্বাক চেলা? বলে যাও, বলো আরো! বন্ধু, যা-খুশি হও, পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও, কোরান-পুরাণ-বেদ বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক- জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব পড়ে যাও, যত সখ- কিন্তু, কেন এ প-শ্রম, মগজে হানিছ শূল? ’ মানবতার কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম নিজের সম্পর্কে আরও বলে গেছেন, ‘আমি কবি যত ইতরের মুটে মজুরের’ এমনি আরও অজস্র বিশেষণ রয়েছে তার সাহিত্যে। তাকে আজও কেন নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ করা? শিল্পীর মন্তব্যটি যেন গানের জগত থেকে আচমকা ফিরিয়ে নিয়ে গেল অতীতের পাকিস্তানি জমহুরিয়াতের ধর্মীয় লেবাস পরা অধর্মের দিনগুলোতে। একসময় কবির ধর্ম নিয়ে কেউ তাকে বলেছে যবন কেউ বলেছে কাফের- আর সেই পাকিস্তানী জমানায় চলল কবিকে ইসলামীকরণের নানা তামাশা। তার ভালবেসে বিয়ে করা স্ত্রী এবং সন্তানের জননী নিয়ে, মাহে নও’ ওয়ালাদের কটূক্তির শেষ ছিল না। মাঝে মাঝেই কেউ না কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে লিখত-হিন্দুরা ষড়যন্ত্র করে মুসলিম কবির সঙ্গে এই হিন্দু বিবাহটির ব্যবস্থা করেছিল। শুরু থেকেই, পাকিদের ধর্মোন্মাদ কর্মকা-ে শামিল ছিল একদল বাংলা জবানের পাকিস্তানী। তারা নিজ ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেউ ঘৃণা করা তথাকথিত তাহজীব তমুদ্দিন মজলিশে মশগুল লোকজন। উর্দুকে বাংলার ভেতর পুরে দিতে এ অনুচরদের পরিশ্রম ছিল উদয়াস্ত। প্রভুদের দ্বারা এসব তালিমপ্রাপ্তর কাজই ছিল তালিম দিয়ে সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই। এই শিল্পীও মনে হয় সেদিন কিঞ্চিত একটা তালিম দিলেন দর্শক-শ্রোতাদের! আমাদের পাঠ্যবস্থায় রংপুর কারমাইকেল কলেজের তদানীন্তন বাংলার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দুল হাই ক্লাসে তাদের অনেকের নাম ধরে আঙ্গুল উঁচিয়ে আমাদের জানাতেন তাদের নাম। ক্লাসে সাহিত্য পড়াতে পড়ানোর ভেতর দিয়ে এই ব্যাপারটি পরিষ্কার করতে গিয়ে ক্লাস লেকচারারের সঙ্গে যা বলতেন তাতে এদের চেনার জন্য উন্মোচিত হয়েছিল আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানচক্ষু। সে সময় তিনি পড়াতেন র্ফরুখ আহমেদের সাত সাগরের মাঝি। সেই উর্দু আরবী ফার্সির জঙ্গলে আকীর্ণ বাংলা ভাষা সম্পর্কে অবগত তিনি ছাত্রদের অবগত করেছিলেন এই সব কবিরা বাংলার সঙ্গে আরবী উর্দু ভাষার এ রকম অবৈধ বিবাহ অহরহ দিয়ে যাচ্ছেন তথাকথিত কবিসাহিত্যিক। কোন ভাষায় যে কোন বিদেশী শব্দ ব্যবহৃত হতে পারে তখনই যখন একটি বিশেষ পরিবেশকে বিদ্ধৃত করার প্রয়োজন হয়। বাংলা ভাষায় কাজী নজরুল নানা বিদেশী শব্দ এনেছেন তার লেখনীর বিদেশী চিত্রপটকে সমৃদ্ধ করতে। কিন্তু প্রভুদের পদলেহনকারী এসব লেখক কবি শিক্ষক নামধারী অর্থলোভে ও বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের বশবর্তী হয়ে ধ্বংস আনছেন দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনে। এরা শুধু নিজেদের কলমের লেখায় নয়- অনন্য সাধারণ বর্ণাঢ্য এক কবির কাব্য সম্ভারের ওপর তারা চালিয়েছিল ডাকাতির ছুরি। কবি নজরুলের ব্যবহৃত বাংলা শব্দ বদলে দিয়ে মনমতো উর্দু, আরবি, ফারসি শব্দ এরা বসিয়ে দিয়েছেন নিজ গুণেই। অথচ হাজার হাজার বছর আগে রচিত গ্রিক এপিক কবিতা ইলিয়াড ওডিসির কিংবা কালিদাসের মেঘদূত মূল কাব্যগুলোর বদল করার কথা কেউ কি ভেবেছে কখনও? নজরুলের বেলায় সেটাই ঘটে চলছিল অবিরত। সেই সময়কার সচেতন ছাত্রছাত্রীদের মনে থাকার কথা কবির অসাধারণ জনপ্রিয় মার্চিং টিউনের ‘চল চল চল’ গানটির শব্দ বদলের কথা। আমাদের বোর্ডের বাংলা পাঠ্য বইয়ে ছিল ‘তাজাবতাজার গাহিয়া গান, সজীব করিব গোরস্তান’- কিন্তু সেই গানই যখন স্কুলের রবীন্দ্র-নজরুল অনুষ্ঠানে রেডিওর সুপরিচিত গায়ক অজিত রায়- আমাদের রথুদার গাইতেন তার গানের কথায় থাকত- ‘নবনবীনের গাহিয়া গান সজীব করিব মহাশ্মশান’ নিজেই তখন মনে মনে প্রশ্ন করতাম- যে রথুদার উদাত্ত কণ্ঠের নজরুলের গান লোপাট করে দেয় লিচুবাগান স্কুলের দিগন্ত, তিনি কেন গাইছেন ওই ভুল শব্দ দিয়ে পরিচিত গান? শুধু সেই একটি গান নয়, এ রকম অনেক উদাহরণ ছিল সে যুগে। নজরুলের বহু গান গাওয়া হতো প্রভুদের হাতে তালিমপ্রাপ্ত করিৎকর্মাদের দ্বারা খাঁটি বাংলা শব্দগুলো বদল করে। এই তালিমপ্রাপ্ত শব্দটি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল কলিম শরাফীর ‘সঙ্গীত ভবনের’ নজরুলগীতি ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষক যাকে তখন সবাই বলতেন ‘সুমন’ তার মুখে। তিনি বলেছিলেন এসব তালিম হোসনেরা নজরুলের নাম দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বহু অনৈতিক কাজ করেছেন পূর্ববর্তী জামানায় এবং তৈরি করে গেছেন বহু শিষ্য- যারা এখনও তৎপর। এই গায়িকা বললেন যেমন নজরুল ইসলামেরই কবি। কিন্তু শুধু ইসলাম ধর্মীয় নয় নজরুল গানের সমীক্ষা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা তার গানকে ভাগ করেছেন পাঁচ ভাগে-দেশাত্মবোধক, গজল-রোমান্টিক, ধর্মীয়, প্রকৃতি বিষয়ক ও কমিক গান। তিনি উভয় ধর্মের ভক্তি গীতি হিসেবে অসংখ্য গান সৃষ্টি করেছেন। বলা বাহুল্য, নজরুল ৫০০টিরও বেশি হিন্দু ভক্তিমূলক গান লিখে গেছেন। ইতিহাস বলে বহুমুখী প্রতিভাধর কবি নজরুল বাল্য বয়স থেকেই যখন যোগ দিয়েছিলেন লোটো গনের দলে তখন থেকেই শুধু গান রচনা করা নয়, সেই রচনাতে সুর প্রয়োগ করে হয়ে উঠেছিলেন বিস্ময়করভাবে পারদর্শী। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী হাবিলদার নজরুল ছাউনিতেই অসাধারণভাবে রপ্ত করেন ফার্সি ভাষা সাহিত্য। এ ছাড়া গজল নামে পরিচিত পারস্যের গীতে বিমুগ্ধ হয়ে গজল গানে দীক্ষা নেন। যখন নজরুল ইসলাম প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত সৈনিক তখন তার ভালবাসা সঙ্গীতের সঙ্গে। কাজেই তার আকাক্সক্ষা ছিল সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত কোন পেশার সঙ্গে নিজ জীবিকাকে যুক্ত করা। তার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের গুরু ওস্তাদ জমিরউদ্দিন তখন অবসর নিতে যাচ্ছিলেন তদানীন্তন কালের বিখ্যাত রেকর্ডিং কোম্পানি কলকাতা হিজ মাস্টার্স ভয়েস সংক্ষেপে যাকে বলা এইচএমভি থেকে। জমিরউদ্দিন তার প্রিয় এই পদে তার প্রিয় শিষ্য নজরুলকে নিয়োগ দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন এবং কোম্পানি সেই ইচ্ছা মেনে তদানীন্তন প্রথিতযশা সেই রেকর্ডিং কোম্পানিতে চাকরি দিল কবি ও গায়ক নজরুল ইসলামকে। এ কথা বলা আবশ্যক যে, কোম্পানি ইতোমধ্যে তাঁঁর কিছু গান রেকর্ডও করেছিল। ১৯৩০ সালে কাজী নজরুল ইসলাম প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার এইচএমভি রেকর্ডিং কোম্পানিতে। গায়ক আব্বাসউদ্দীন এইচএমভি স্টুডিওতে নজরুল ইসলামের আধুনিক বাংলা গানের গায়ক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সর্বপ্রথম বাঙালী রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের অন্তঃপুরে নিয়ে যান বাংলা গান। পরবর্তী সময়ে তিনি রেকর্ড করেন কোচবিহার ও রংপুর অঞ্চলের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া, খিরল ও চাটকা গান। এরপর গাইতে শুরু করেন আরও নানা রকম লোকগান যেমন জারি, সারি, ভাটিয়ালি ও মুর্শিদী, বিচ্ছেদী, মরসিয়া ইত্যাদি। এই সময় তিনি কবি নজরুলকে উদ্বুদ্ধ করেন ইসলামী গান রচনা করতে। নজরুলের হিন্দু ভক্তিমূলক গানের রেকর্ডিং বাণিজ্যিক সাফল্য ছিল এবং এবার তারাও তাদের গ্রামোফোন কোম্পানিতে ইসলামী গানের রেকর্ড বের করার আগ্রহ প্রকাশ করতে লাগল। আমার শুরুতে বর্ণিত সেই অনুষ্ঠানের আরও অর্ধযুগ আগে আব্বাসউদ্দীন শতবর্ষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তঁাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র একসময়ের প্রধান বিচারপতি প্রয়াত মোস্তফা কামাল। তিনি তার কাব্যময় ভাষা ও অপরূপ বাচন ভঙ্গিতে সেদিন বলেছিলেন এই সঙ্গীত রচনার পটভূমি। শত শত শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শ্রবণ করেছিল সেই সঙ্গীত ইতিহাস- যা আমাদের সঙ্গত জগতে বিরলতম। আজ কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তী এবং সামনে উপস্থিত হতে যাচ্ছে রমজানের রোজা শেষের ঈদ। মোস্তফা কামালের কণ্ঠে শোনা ‘ও মন রমজানের ওই রোজা গানটির ইতিহাস’ ভাগ করতে চাই পাঠকের সঙ্গে। সে সময় এইচএমভির রেকর্ডিং বিভাগের প্রধান (যতটুকু মনে পড়ছে) ছিলেন ভবভূতি বাবু নামের শেষ অংশটি তিনি বাবুই বলেছিলেন- তিনি রমজান এসে পড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই নজরুলের কক্ষে এসে, কবি নজরুল ও গায়ক আব্বাসউদ্দিনের কাছে প্রস্তাব রেখে বললেন সামনের ঈদ উপলক্ষে একটা ঈদের গান বের করলে কেমন হয়? যে গান লিখবেন নজরুল ইসলাম এবং গাইবেন আব্বাস উদ্দিন। কোম্পানির এমন উদ্যোগের কথায় উজ্জীবিত হলেন তারা দু’জনেই। হিন্দু শ্রোতাদের ঘরে আছে শ্যামা সঙ্গীত আর মুসলমানদের ঘরে ঈদের গান থাকবে না? অবশেষে গান রেকর্ডিং শেষ করে এ গানের ভাগ্য সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে ঈদ পালন উপলক্ষে কোচবিহার যাত্রা করলেন গায়ক। ঈদ শেষে বেশ অনেকদিন দেশে কাটাবার পর ছুটি শেষে তিনি ফিরলেন কলকাতায়। যাবেন তার কর্মস্থল এইচএমভিতে। কিন্তু মাথার চুলগুলো হয়ে গেছে অনেক বড় যে। তাই তিনি কাছাকাছি এক নাপিতের দোকানে ঢুকলেন চুল কাটাতে। হঠাৎ চোখে পড়ল দোকানের দেয়ালে নিজের ছবি সংবলিত বিরাট এক পোস্টার। চক্ষু ছানাবড়া করে নরসুন্দরকে প্রশ্ন করলেন এই ছবিটা এখানে কেন? নাপিত ব্যক্তিটি আব্বাসউদ্দীনকে চিনতে পারেননি এই ছবির মানুষ হিসেবে। নাপিতের কণ্ঠে আব্বাসউদ্দীন যে উত্তর পেলেন তাতে তার চক্ষু ছানাবড়া। শুনলেন আব্বাসউদ্দীন নামের এই গায়কের ‘রমজানের ওই রোজার শেষে’ নামে এক গানেই রেকর্ড ঈদের পূর্বেই বেরিয়ে মাত করেছে গানের বাজার- বিক্রি হচ্ছে দেদার। মুসলমান হিন্দু সব ধর্মের মানুষ এই রেকর্ড কিনেছে বিপুল উৎসাহে। আর এই রেকর্ড বিক্রি নাকি ভেঙে ফেলেছে এতদিনের যাবতীয় বিক্রিত রেকর্ডের সীমারেখা। গায়কের চুল আর কাটা হলো না। ওই অবস্থায় তিনি ছুটলেন কর্মস্থলে। সেখানে তাকে পেয়ে এইচএমভিতে যে উৎসবের বন্যা বয়ে গিয়েছিল সেটা কল্পনার চোখে দেখলেও হয়ত কম হতে পারে। লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী
×