ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে বুলেটিন দেয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৫ মে ২০১৯

     খালেদার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে বুলেটিন দেয়া

উচিত ছিল ॥ ফখরুল স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ এবং তিনি এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতেই পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যু শয্যার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের উচিত ছিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে বুলেটিন দেয়া। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা এমন কিছু করেনি। তারা কি খালেদা জিয়াকে জেলখানায় মেরে ফেলতে চাচ্ছে? আমি আবারও বলতে চাই দেশনেত্রীর কোন ক্ষতি হলে তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে সরকার। ফখরুল বলেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যেটাকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বলা হয়। ইনসুলিন নেয়ার পরও তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সুগার লেভেল ১০ থেকে ১৬তে ওঠানামা করছে। তার এই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে পরিণতি কী হতে পারে, তা আমরা সবাই জানি। আগে তার বাঁ কাঁধ ফ্রোজেন ছিল, এখন ডান কাঁধ ফ্রোজেন হয়ে যাচ্ছে। আর পা সোজা থাকলে তিনি বাঁকা করতে পারছেন না। হাত-পা নাড়াতে পারছেন না। এছাড়া তার পেশীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে বা অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তার রিউমেটিকস আর্থারাইটিস যেটা আছে সেটাও অনেক বেড়ে গেছে। অন্যের সাহায্য ছাড়া খালেদা জিয়া এখন বিছানা থেকে উঠতেই পারছেন না। তার প্রতি সরকারের আচরণ অমানবিক, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার লংঘনের শামিল। আমরা অবিলম্বে তার সুচিকিৎসা ও মুক্তি দাবি করছি। সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার এত দুর্বল কেন? রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে সবকিছুতে আইন-আদালত ব্যবহার করছে। যেসব মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার কথা সরকার আদালতকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলোতেও জামিন দিচ্ছে না। সরকার রাজনৈতিক কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারাবন্দী করে রেখেছে। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির সঙ্গে বিএনপির সংসদে যোগদানের কোন সম্পর্ক নেই। তার মুক্তি তো কনডিশনাল হবে না, আইনগতভাবে হবে। জামিনে মুক্তি তার পাপ্য। আমরা সেটা চাই। আমরা বলেছি, রাজনৈতিক, গণতন্ত্র এবং আমাদের পার্টির স্বার্থে আমরা সংসদে গিয়েছি। আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তির বিষয়ের সঙ্গে এটাকে কখনো জড়াইনি। তাই সংসদে যাওয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির কোন সম্পর্ক নেই। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এ নিয়ে এত চিন্তার কি আছে? তার যে প্রাপ্য সেই জামিনটা আমরা চাই। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন তার হেলথ বুলেটিন দেয়া দরকার কিন্তু দেয়া হচ্ছে না। এমনকি আত্মীয়-স্বজনদেরও নিয়মিত তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আগে ৭ দিনে দেখা করতে দিত, এখন ১৫ দিনেও দেয় না। আমরা দ্’ুএকবার দেখা করেছি, এখন সেই সুযোগটাও দেয়া হয় না। তিনি তো সাধারণ কেউ নন। তিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলের নেতা এবং এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তারপরও তার সঙ্গে কেন এমন আচরণ করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নর জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া তো মুক্তিযোদ্ধা বটেই। কারণ, তার স্বামী স্বাধীনতা ঘোষণা করার অপরাধে যদি তাকে জেলে থাকতে হয়, তাহলে কি তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন? তিনি বলেন, আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আসার আগে আমরা বলেছিলাম, খালেদা জিয়া আসতে চাচ্ছেন না। তিনি বাইরে থেকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করতে চান। কিন্তু সেখানে তাকে চিকিৎসা করতে দেয়া হয়নি। কেন দিচ্ছে না? আর যে মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে, সেই মামলায় তো তিনি জামিনযোগ্য। তিনি জামিন পেতে পারেন। এ ধরনের মামলায় সবাই জামিন পেয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে সরকার আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরেছি। তবে সংবাদে দেখলাম আমাদের দলের কয়েকজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, এম এ কাইয়ূম প্রমুখ। খালেদার মুক্তির দাবিতে মহিলা দলের মিছিল ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে মিছিল করেছে মহিলা দল। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু করে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে আবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ করা হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মিছিল শেষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১০ মাস পূর্বেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়েছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা নিরাপদ করার জন্য তাদের দুঃশাসন নিয়ে কেউ যেন টুঁ শব্দ করতে না পারে সে কারণেই খালেদা জিয়াকে বন্দী করে এখন বাকশালের গুণকীর্তন শুরু করেছে। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি জেবা খান, মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, সংগঠনের নেতা শামসুন্নাহার বেগম, শাহজাদী কহিনুর, মিনা বেগম, নাজনীন, গুলশান আরা মিতা, নিলুফা ইয়াসমিন নিলু, সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ। ড্যাবের কাউন্সিল ॥ বিএনপি জামায়াতপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিনব্যাপী এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি ॥ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী দল বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুক্রবার বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।
×