ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁসচক্রের হোতা ব্যাংক ম্যানেজার ও পুুলিশের এএসআইসহ গ্রেফতার ৪০

প্রথম ধাপে ২৫ জেলায় শান্তিপূর্ণ প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২৫ মে ২০১৯

 প্রথম ধাপে ২৫ জেলায় শান্তিপূর্ণ প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার নিয়োগের প্রথম ধাপে ২৫ জেলায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা মোটামুুটি শান্তিপূর্ণ হলেও সাতক্ষীরা ও লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৪০ অপরাধীকে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের আটক করেছে র‌্যাব। সাতক্ষীরায় প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হোতা আটক দুই ব্যাংক ম্যানেজারসহ ২১ জনকে ২ বছর করে সাজা দিয়েছে আদালত। পটুয়াখালীতে স্ত্রীকে সকল দিতে গিয়ে আটক হয়েছে পুলিশের এক এএসআই। এ ছাড়া কয়েকটি এলাকায় প্রশ্নপত্র, ওএমআর শিট বিতরণে বিলম্ব করেও অতিরিক্ত সময় না দেয়াসহ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবারের পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলার ২৪ লাখ এক হাজার ৯১৯ প্রার্থী প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেবেন। শুক্রবার প্রথম ধাপে ২৫ জেলায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুসারে প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য এক নম্বর এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে এবারের পরীক্ষায়। এবার নিয়োগ পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত জেলায় পরীক্ষার আগের রাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে প্রশ্নপত্রের সব সেট পাঠানো হয়। প্রতি ধাপের পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। আবেদনকারীর আসন বুয়েট অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্ধারণ করছে। একই সঙ্গে আবেদনকারীর আসন বণ্টন অনুযায়ী প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষা অধিকাংশ জেলায় শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু এলাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। টাঙ্গাইলে ভাল্লক্কান্দি হাজী আবুল হোসেন আদর্শ হাইস্কুল কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। প্রার্থীরা বলেছেন, ওএমআর শিট বিতরণে বিলম্ব করা হয়েছে এখানে। অথচ তার জন্য নিয়ম অনুসারে অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়নি। এছাড়্ াঘড়ি দেয়াসহ আরও বেশি কিছু অব্যবস্থাপনার তথ্য পেয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। আরও কয়েকটি জেলায় অতিরিক্ত সময় না দেয়াসহ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে কোন বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্যান্য কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়ি জাতীয় বস্তু, ইলেকট্রিক ডিভাইস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। প্রশ্ন ফাঁসসহ যে কোন অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল আগেই। তার পরেও থেমে থাকেনি অপরাধীরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অপরাধীরা সফল হতে পারেনি। জানা গেছে, পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টাকালে এনএসআই’র তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা ও লক্ষ্মীপুর থেকে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, সাতক্ষীরায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৫ হোতাসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। হোতাদের মধ্যে দুজন ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। সকালে কলারোয়া থানার পাশর্^বর্তী সোনালি সুপার মার্কেটে অবস্থিত কিডস কোচিং সেন্টারের ব্ল্যাক বোর্ডে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখে দেয়ার সময় অপরাধী চক্রকে আটক করা হয়। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে এই চক্রকে আটক করে। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুর রহমান প্রত্যেককে ২ বছরের সাজা প্রদান করেন। সাজা প্রাপ্তদের মধ্যে ৫ জন মূল হোতা ও বাকি ১৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। প্রতারক চক্রটির কাছ থেকে উদ্ধার করা প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নে হুবহু মিল পাওয়া গেছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আটক ৫ হোতা হলেন, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার পরানখালি গ্রামের মৃত আহসান আলীর ছেলে ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম, সাতক্ষীরার কলারোয়ার ঝাপাঘাটা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে জনতা ব্যাংক ম্যানেজার আফতাবুজ্জামান, একই উপজেলা একই গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম, একই উপজেলার কাকবাশিয়া গ্রামের রইছ উদ্দীনের ছেলে শিক্ষক তরিকুল ইসলাম। র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সৈয়দ নুর সালেহীন প্রেসব্রিফিং এ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কলারোয়া থানার পাশর্^বর্তী সোনালি সুপার মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ নারীসহ ২৮ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালা উপজেলার ধানদিয়া এলাকা থেকে আব্দুল হালিম নামের এই চক্রের আরও এক হোতাকে আটক করা হয়। এ নিয়ে মোট ২৯ জনকে আটক করে র‌্যাব। এর মধ্যে ২১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ বছরের সাজা প্রদান করা হয়। বাকি ৮ জনের (অভিভাবক) বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। র‌্যাব ৬ এর অধিনায়ক আরও জানান, ঢাকায় বসে একটি প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের কাছে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন ও তার উত্তর বলে দেবে বলে তাদের কাছে খবর আসে। এসব প্রশ্ন ও উত্তর ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। এজন্য সিন্ডিকেটের হাতে অগ্রিম পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। বাকি টাকা পরীক্ষা শেষে দেয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটির কাছ থেকে যে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে মূল প্রশ্নে হুবহু মিল পাওয়া গেছে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম জেনি প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টাকালে এনএসআই’র তথ্যের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। পাবনা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, পরীক্ষা চলাকালে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সকালে শহরের রাধানগর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় আটককৃতদের কাছ থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, শহরের রাধানগর এলাকায় শুভ ছাত্রাবাস থেকে একটি চক্র আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করছে এমন সংবাদে সকালে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই ছাত্রাবাস থেকে পরীক্ষা চলাকালীন জালিয়াতিকালে হাতেনাতে ৪ জন বহিরাগত যুবককে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে পাবনার সাঁথিয়ার মৃত হযরত আলীর ছেলে শাকিব উদ্দিন, একই উপজেলার জাকির হোসেন লেবুর ছেলে আব্দুস সোবাহান, চাটমোহরের আব্দুস সামাদ সরকারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও সাহেব আলীর ছেলে সানাউল্লাহ সানি। পটুয়াখালী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নকল সরবরাহের অভিযোগে পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক মাহবুবুর রহমানকে একমাসের কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শহরের রশিদ কিশালয় বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে নকল সরবরাহকালে হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। পরীক্ষা শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত করেন।
×