ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নেহরু-গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন

মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা শপথ নিতে পারে ২৯ মে

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৫ মে ২০১৯

 মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা শপথ নিতে  পারে ২৯ মে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীর পর নরেন্দ্র মোদি হতে যাচ্ছেন প্রথম ভারতীয় নেতা যিনি টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ঘোষিত ফলে বিজেপির বড় জয়ের পর তার শপথ নেয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন পর্যন্ত বিজেপির পক্ষ থেকে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। নয়া মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মোদির দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। আমেথি থেকে নির্বাচিত বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি বলেছেন, নয়া মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব পাবে বাংলা। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, ২৯ মে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ নেবে মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। এদিকে এ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর কংগ্রেস পার্টিতে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গেছে। নেহরু-গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে দলের অভ্যন্তরে প্রশ্নও ওঠা শুরু হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও নারীদের শ্লীলতাহানির খবর পাওয়া গেছে। খবর টাইমস নাউ নিউজ ও ইয়াহু নিউজের। সাত দফায় অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা হয় ২৩ মে। এদিন নির্বাচন কমিশনের দেয়া ফল অনুযায়ী ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৩৫১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট এগিয়ে রয়েছে ৯১টি আসনে। এরইমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। একের পর এক বিশ্বনেতাও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের মে মাসে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদি। তবে এবারে তিনি বিশ্ব নেতাদের শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাঠাবেন। এরইমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ওই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে বিজেপি। লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে একক দল হিসেবে বিজেপি পেয়েছে ৩০৩ আসন। বিশাল এই জয়ের পর শুক্রবার প্রবীণ বিজেপি নেতা এলকে আদভানির বাসভবনে গিয়ে দেখা করেছেন মোদি। ২৮ মে বারানসিতে নিজের নির্বাচনী আসনের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে যাবেন মোদি। সেখান থেকে ফিরে ২৯ মে দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন মোদি। কংগ্রেস পার্টিতে পদত্যাগের হিড়িক ॥ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দলের শোচনীয় পরাজয়ের পর হতাশ হয়ে একের পর এক পদত্যাগ করে যাচ্ছেন কংগ্রেস পার্টির নেতারা। এরইমধ্যে উত্তর প্রদেশের প্রেসিডেন্ট রাজ বাব্বরসহ তিন রাজ্যের দলীয় প্রধানরা কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। শনিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে রাহুল নিজেও পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি রাজ বাব্বর নিজের কেন্দ্রে তো হেরেছেনই, সার্বিকভাবে ওই রাজ্যে দলেরও শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। এর দায় নিয়ে দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন বাব্বর। জানা যাচ্ছে, খোদ রাহুল গান্ধীও ইস্তফা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কংগ্রেসে এ হেন ভরাডুবিতে এ বার ইস্তফা দেয়ার হিড়িক পড়েছে দলের অন্দরে। ওড়িশা এবং কর্নাটকেও ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। এখনও কর্নাটকে রাজ্য সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস-জেডিএস জোট। এরপরও লোকসভা নির্বাচনে সেখানে ভরাডুবি হওয়ায় কর্নাটকের কংগ্রেসের প্রচার-প্রবন্ধক এইচ কে পাতিল ইস্তফা দিয়েছেন। ওড়িশায় ২১টি আসনে মাত্র একটি দখল করতে পেরেছে কংগ্রেস। নবীন পট্টনায়েকের বিজেডির দাপটে কংগ্রেস এবং বিজেপি ওড়িশায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সে রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি নীরাঞ্জন পট্টনায়েকও ইস্তফা দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশায় রয়েছে রাহুল গান্ধীর সভাপতি পদটি। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তাকে প্রশ্ন করা হলে রাহুল বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এটি কার্যনির্বাহী কমিটি ও তার বিষয় বলে এদিন স্পষ্ট করেন রাহুল। শনিবার বসবে কমিটির বৈঠক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিজের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয়বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজিত হওয়ার পর কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে তার মা কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইউপিএ জোট নেতা সোনিয়া গান্ধী এই প্রস্তাবে সায় দেননি। গান্ধী পরিবারের দুর্গ বলে পরিচিত আমেথিতে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে যান রাহুল। অন্য একটি কেন্দ্র ওয়েনাড় থেকে অবশ্য বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-তৃণমূল কর্মীদের সংঘর্ষ ॥ সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পরদিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হামলা-পাল্টা হামলা ও বাড়িতে ঢুকে নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। খবর ইয়াহু নিউজের। দুর্গাপুরের লাউদোহা এলাকার পাটশাওড়া গ্রামে তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিজেপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রাতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়িতে ঢুকে রড দিয়ে মারধরের পাশাপাশি নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ করেছে দলটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত এই রাজ্যে বিজেপির প্রবল উত্থান ঘটেছে এবারের নির্বাচনে। গত নির্বাচনে এই রাজ্যে মাত্র দুটি আসনে জয়ী হলেও এবার ১৮ আসন বগলদাবা করেছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। দলের এমন উত্থানের পর রাজ্যের বিজেপি নেতাকর্মীরা সামনে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে চাঙ্গা হয়ে উঠছে। এর মাঝেই শুক্রবার ভোরের দিকে পাটশাওড়া গ্রামে তৃণমূলের কর্মী প্রতিমা বাগদির বাড়িতে রড, শাবল ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বিজেপির নেতাকর্মীরা। ভাঙচুর তা-বের পর মারধর করা হয় প্রতিমার পরিবারের সদস্যদের। মারের হাত থেকে রেহাই পায়নি বাড়ি নারী সদস্যরাও। তৃণমূল বলছে, বিজেপির নেতাকর্মীরা তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। ঘর থেকে টেনে বের করে নারীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করা হয়। এই ঘটনায় দুর্গাপুরের ফরিদপুর থানায় তৃণমূল অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার শালতোড়া এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে বিজেপির এক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে তৃণমূল নেতার বাড়ি। শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিদ্যুৎ দাস নামের স্থানীয় বিজেপি নেতার বাম কানে গুলি লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে শালতোড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতা কালীপদ রায়ের নির্দেশে পুলিশের সামনেই গুলি চালিয়েছে শাসকদলের কর্মীরা। ঘটনার পর কালিপদ রায়কে গ্রেফতার ও শালতোড়া থানার ওসির বদলির দাবিতে থানা ঘেরাও করেন বিজেপি কর্মীরা। তবে গুলি চালানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কালীপদ রায়। তার পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির কর্মীরা অতর্কিত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।
×