ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হজযাত্রীদের জন্য এবার থাকছে একগুচ্ছ সুযোগ সুবিধা

জেদ্দায় দুর্ভোগ নয় আর শাহজালালেই সম্পন্ন হবে ইমিগ্রেশন

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৫ মে ২০১৯

 জেদ্দায় দুর্ভোগ নয় আর শাহজালালেই সম্পন্ন হবে ইমিগ্রেশন

আজাদ সুলায়মান ॥ এবারের হজযাত্রীদের জন্য আসছে একগুচ্ছ সুবিধার প্যাকেজ। ঢাকা থেকে শুরু করে জেদ্দা পর্যন্ত আল্লাহর মেহমানদের জন্য থাকছে প্রি ডিপারচার ইমিগ্রেশন, মক্কা, মদিনায় লাগেজ পৌঁছে দেয়ার নিশ্চয়তা, দ্বিতল খাটের ঝক্কি-ঝামেলা থেকে রেহাই দেয়া, নিকটবর্তী হোটেলে রাখার আগাম নিশ্চয়তা এবং প্রতিটি এজেন্সিকে ন্যূনতম ১শ’ হজযাত্রী বহনের অনুমতিসহ আরও কিছু সুিবধা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পরই হজ ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন শেখ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, এখন থেকে প্রতিবছরই হজযাত্রীদের কল্যাণে নতুন নতুন সুবিধা বাড়ানো হবে যাতে আল্লাহর মেহমানরা অত্যন্ত নিরাপদে ও স্বস্তির স্েঙ্গ তাদের জীবনের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ধর্মীয় কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে ফ্লাইটের ভেতর। জেদ্দা বা মদিনায় গিয়ে তাদেরকে আর কোন ইমিগ্রেশন করতে হবে না। আগে যেটা করতে প্রত্যেক হজযাত্রীকে ১০/১২ ঘণ্টা জেদ্দা বিমানবন্দরে চরম দুর্দশায় পড়তে হতো। এ বছর আর তাদেরকে ইমিগ্রেশনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। এটা তাদের জন্য বড় স্বস্তি। জানা গেছে, এ বছর ঢাকায় বসেই সম্পন্ন করা হবে জেদ্দার ইমিগ্রেশন। এরই মধ্যে হযরত শাহজালালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ডেস্ক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। দিনরাত সেখানে চলছে অফিস ইকুইপমেন্ট ও অটোমেশনের কাজ। একদল তথ্য প্রযুক্তিবিদ সৌদি থেকে ঢাকায় এসে তাদের নিজস্ব কৌশলে সাজাবেন ইমিগ্রেশনের নিজস্ব ডেস্ক। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর দৃষ্টিতে হজ ব্যবস্থাপনায় এটা বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটা বড় ধরনের অর্জন বলা যায়। বলতে পারেন এটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সর্বোপরি হজ একটি টিম ওয়ার্কের কাজ। এখানে একাধিক দেশ, মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করতে হয়। সবার সহযোগিতাতেই এটা সফল করতে হয়। আশকোনা হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে- এ বছর সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হজ যাত্রীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা চালু করছে। ঢাকায় প্রি ডিপারচার ইমিগ্রেশনের পাশাপাশি হজযাত্রীদের লাগেজ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মক্কা-মদিনার হোটেলে পৌঁছে দেয়ার মতো বহুল প্রত্যাশিত সুবিধা দেয়া হবে। হজযাত্রীরা সৌদি আরবে পৌঁছার পর যে ইমিগ্রেশন হয় সেটা বিমানে ওঠার আগেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই সম্পন্ন করা হবে। তবে এ দু’টি সুবিধাই পাবেন কেবল ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইট অর্থাৎ যেই ফ্লাইটে শুধু হজযাত্রী পরিবহন করা হবে সেই ফ্লাইটের যাত্রীরা। এ ব্যাপারে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিষয়টি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে হাব সভাপতি শাহাদত হোসাইন তসলিম জানিয়েছেন- এ সুবিধাগুলো এখন বাধ্যতামূলক নয়। যারা চাইবেন তারাই পাবেন। বিশেষ করে শুধু হজযাত্রীদের জন্য যেসব ফ্লাইট হবে তাদের জন্যই এই সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। এ জন্য অবশ্য কর্তৃপক্ষকে একটি নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। তবে সোয়া লাখ হজযাত্রীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই এ সুবিধার আওতায় আসবেন। ডেডিকেটেড হজযাত্রীর সংখ্যা এমনই। বাকিরা নিজ নিজ সুবিধায় সিডিউল ফ্লাইটে যাওয়ার কারণে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ জন্য বিশেষ শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলোকে এ সুবিধাগুলো পেতে হলে ৩০ রমজানের মধ্যে তাদের বাড়ি ভাড়ার কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি বিমানের টিকেটও নিশ্চিত করতে হবে। জানতে চাইলে এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেছেন, হজযাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে এই বছর থেকেই লাগেজ হোটেলে পৌঁছে দেয়া এবং ঢাকায় হজযাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার ব্যাপারে সম্মত হয়। তারা সেভাবেই সব কিছু বাস্তবায়ন করছেন। এটা আমাদের বড় সাফল্য। জানা গেছে হজযাত্রীদের লাগেজ ঝামেলাহীন ও নিরাপদে নিজ নিজ হোটেলে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছে বেসরকারী এজেন্সি ইউনাইটেড এজেন্টস। এই এজেন্সি জেদ্দা ‘রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’এর আওতায় হজযাত্রীদের মালামাল হোটেলে পৌঁছে দেয়ার কাজটি করবে। একটি ফ্লাইটে একাধিক হোটেল বা আবাসনের হজযাত্রী গেলে সে ক্ষেত্রে হজযাত্রীর লাগেজ প্রথমে মক্কায় একটি নির্ধারিত গুদামে জমা করা হবে। পরবর্তীতে লাগেজে লাগানো স্টিকার অনুযায়ী নির্দিষ্ট হোটেলে প্রেরণ করা হবে। এ সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগ্রহী হজযাত্রীদের জন্যই এ ব্যবস্থা থাকছে। এ মালামাল পরিবহনের জন্য ইউনাইটেড এজেন্টস অফিস কর্তৃক ঘোষিত তিনটি প্যাকেজের যেকোন একটি গ্রহণ করতে হবে এবং এ জন্য ওই অফিসের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। আবার ওই ফ্লাইটেও তিনটির বেশি বাড়ির হজযাত্রী পরিবহন করা যাবে না। সৌদি সিস্টেমে প্রদত্ত ঠিকানা অনুযায়ী মক্কা-মদিনার বাড়িতে বা হোটেলে হজযাত্রী ও তাদের লাগেজ পৌঁছানো হবে। এ জন্য হজ এজেন্সিগুলোকে একই সঙ্গে যৌথভাবে বড় বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের পেছনে মক্কা-মদিনার হোটেলের ঠিকানাসংবলিত স্টিকার লাগানোসহ হাজীদের সঙ্গে বাড়িভিত্তিক নির্দিষ্ট রঙের আইডি কার্ড ঝুলানো এবং তাদের লাগেজে পৃথক রঙের স্টিকার লাগানো নিশ্চিত করতে হবে। ভুল বা ভুয়া ঠিকানা দেয়া হলে সেগুলো হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভাড়া করা একটি নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কাছ থেকে ভাড়ার অর্থ আদায়সহ বেআইনী কাজের জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এ নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এজেন্সি মালিক বা মোয়াজ্জেমকে হজ ভিসায় আবশ্যিকভাবে তাদের ব্যবস্থাধীন হাজীদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে গমন এবং হজ শেষে একই ফ্লাইটে দেশ ফিরতে হবে। এরই আগেও বাংলাদেশী হজযাত্রীদের জন্য পরিবহনকারী বিমানের তত্ত্বাবধানে হজযাত্রীদের লাগেজ মক্কা-মদিনায় নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয়া ও ফেরার সময় নির্ধারিত স্থান থেকে গ্রহণ করে বিমানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে অনিয়মের অভিযোগ ও কিছু ভোগান্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর থেকে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় নির্ধারিত এজেন্টের মাধ্যমেই হজযাত্রীদের মালামাল পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পুরো বিষয়টি অনলাইনে আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে করা হবে বলে বলা হচ্ছে। জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন- ঢাকায় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন ও সৌদিতে নিরাপদে লাগেজ পৌঁছানো ছাড়াও এবছর থেকে এজেন্সিগুলোও বেশ কিছু সুবিধা পাবে। এজেন্সিগুলো আগে কমপক্ষে দেড় শ’ হজযাত্রীর কম হলে নিজ ফার্মের নামে হজের ব্যবসা করতে পারত না। এটা আমরা এবার দেড়শত থেকে এক শ’তে নামিয়ে এনেছি। এতে আরও বেশি এজেন্সির সম্পৃক্ততা ঘটবে এ ব্যবসায়। গত বছর অনেক হজযাত্রীকেই মক্কা- মদিনায় দ্বিতল তেতলা খাটে রাখতে বাধ্য করা হতো। এতে বয়স্ক হজযাত্রীদের অনেক কষ্ট হতো। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এই সঙ্কট দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছি। মোট কথা, হজযাত্রীদের কল্যাণে এখন থেকে প্রতিবছরই সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে সার্বিক দিকনির্দেশনায় হজযাত্রীদের কল্যাণে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের সবাইকে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। আর যদি কেউ আল্লাহর মেহমানদের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতির মতো অপকর্ম করে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×