ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি ও জরিপ বিভাগ

১৬ বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ কানুনগো পদে

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৫ মে ২০১৯

 ১৬ বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ কানুনগো  পদে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জরিপ বিভাগের কানুনগো পদে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ আছে। আর সরাসরি নিয়োগ বন্ধ আছে ২৯ বছর ধরে। পদটিতে প্রায় ১২শ’ জনবল ঘাটতি। পদোন্নতি প্রত্যাশীরা পদোন্নতি চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করলে আদালত চার বছর আগে তাদের পক্ষে রায় দেন। সেই রায়ও কার্যকর হচ্ছে না। রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি কার্যক্রম থেমে আছে। এমন ঘটনায় পদোন্নতিপ্র্রত্যাশী সার্ভেয়ারদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। কাজকর্মেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে সারাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি চালু করার সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার গতি ধীর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিএসইবি) ও ম্যানেজমেন্ট সার্ভেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ এমনটাই দাবি করেছেন। যদিও এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী বলছেন, যারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য তাদের সবাইকে পদোন্নতি দিয়ে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে চাই। এই পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিভিন্ন গ্রুপ আদালতে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করার ফলে পদোন্নতি প্রক্রিয়াটি আটকে গেছে। তবে সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনা শেষে বর্তমানে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সারাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি চালু করা ও অটোমোটেড কমপেনসেশন পেমেন্ট সিস্টেমের (এসিপিএস) মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুধু ঢাকা জেলায় এসিপিএসের পাইলট কার্যক্রম চলছে। অচিরেই সারাদেশে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এই কার্যক্রমসহ সামগ্রিক ভূমি ব্যবস্থাপনায় কানুনগো খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ জটিলতা তৈরি হয়েছে। সারাদেশে জরিপ বিভাগ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে মোট ১ হাজার ৪১১টি কানুনগো পদের বিপরীতে মাত্র ২১০ জন কর্মরত আছেন। মাঠ প্রশাসনে কানুনগোর প্রায় ১২শ’ পদ শূন্য আছে। কানুনগো পদের ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ ও ৫০ শতাংশ ফিডার পদধারীদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে কানুনগো পদে নিয়োগ দেয়ার পর দীর্ঘ ২৯ বছরেও আর কোন নিয়োগ দেয়া হয়নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালে ফিডার পদধারী সার্ভেয়ার, তসিলদার ও ড্রাফট্সম্যান পদ থেকে ২৩৫ জনকে কানুনগো পদে পদোন্নতি দেয়ার পরও ১৬ বছর কেটে গেছে। পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মচারীরা ২৫ থেকে ৩০ বছর একই পদে কর্মরত থেকে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। পদবঞ্চিতরা ২০১১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগ পদোন্নতি কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদানসহ রায় প্রদান করেন। এরপরও ভূমি মন্ত্রণালয় পদোন্নতি প্রদান করেনি। ২০১২ সালে আদালত অবমাননা মামলা (কনটেম্পট) হয়। ২০১২ সাল থেকে প্রায় বছর যাবৎ পদোন্নতি প্রদান না করে বারবার সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আইডিএসইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম খলিল জানান, ভূমিমন্ত্রী গত ২৬ এপ্রিল ৫৭৩ জনকে পদোন্নতি দেয়ার নথি অনুমোদন করেন এবং নির্দেশনা জারির (জিও) জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই সময় ভূমি সচিব জিও জারি না করার কারণে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এতে সারাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি চালু করার যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার তার কাজের গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর কানুনগোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ জটিলতা তৈরি হয়েছে।
×