ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুনরায় নরেন্দ্র মোদি

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৬ মে ২০১৯

পুনরায় নরেন্দ্র মোদি

হারজিত নিয়ে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনা ছিল, প্রধান দুটি পক্ষ অতীতের তুলনায় ছিল বেশি আক্রমণাত্মক। ফলে বেশ জমে উঠেছিল ভোটযুদ্ধ। যদিও শেষ পর্যন্ত ভারতের জনগণ ক্ষমতাসীনদের প্রতিই তাদের রায় দিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। তার এই ক্যারিশম্যাটিক বিজয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইতোমধ্যে একটি সুপ্রতিবেশী রাষ্ট্রের মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আগামী দিনে এই সম্পর্ক আরও উচ্চতর এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। কয়েক মাস আগে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, এবার লোকসভা নির্বাচনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে দলটি। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউপিএ ২০১৪ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার বেশি আসন পেলেও এনডিএ জোটের সঙ্গে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেনি। নির্বাচনে ভারতজুড়ে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের উত্থান লক্ষণীয়। স্বভাবতই ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে এ প্রবণতা দেশটির ভেতরে-বাইরে বড় একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে- যে বহু মত, পথ, ভাষা, ধর্ম, জাতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে ভারত রাষ্ট্রটি দাঁড়িয়ে আছে, সেই আদর্শ হোঁচট খাবে কিনা! এই নির্বাচন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দল কংগ্রেসের জন্য কাক্সিক্ষত ফল বয়ে আনেনি। দলটির শীর্ষ নেতারা চেষ্টা করেছিলেন, দলের প্রার্থীরা যাতে তুলনামূলক ভাল ফল করে। কিন্তু ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একটি অন্যতম বিকল্প শক্তি হিসেবে তারা নিজেদের কাক্সিক্ষত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়নি। নির্বাচনের চুলচেরা বিশ্নেষণ করলে দেখা যাবে, কংগ্রেস নির্বাচনকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখেছে। বিজেপি ও ভারতের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ কংগ্রেসকে সম্পূর্ণভাব নিশ্চিহ্ন করার কথা বলেছেন এবং তারা সে ধরনের ছক কষে কাজও করেছে। বাঙালীপ্রধান পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বাকপটুতায় ধারণা হচ্ছিল যে তার দলই সেখানে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, তার দল তৃণমূল কংগ্রেস আগের সেই আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। তাদের আসন সংখ্যা কমেছে। অপরদিকে মোদির দল বিজেপির আসন সংখ্যা বেড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে বলা যেতেই পারে, মোদিঝড়ে প্রতিপক্ষের সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেছে। গোটা ভারতে বড় পরাজয়ের পরও সরকার গঠনে ব্যর্থ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি লক্ষণীয়। ভোটযুদ্ধে তারা সংকোচহীন বাক্যবাণে প্রতিপক্ষকে বিদ্ধ করলেও নির্বাচনের পর বাস্তব পরিস্থিতিকে তারা মেনে নিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ সবাই নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির এই সুশোভন সংস্কৃতি সত্যিই অনুসরণীয়। বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। দিল্লী বাংলাদেশের কাছে করিডর, ট্রান্সশিপমেন্ট, শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে, তখনই তা পেয়েছে। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা সর্বদাই স্মরণ করা হয়ে থাকে। সে তুলনায় বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রাপ্তি অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, উজানে পানির প্রবাহ ও প্রাপ্তির কথা। নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকার দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধানে এবার সক্রিয় হবে- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×