ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবনের বাঘ

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৬ মে ২০১৯

 সুন্দরবনের বাঘ

বাংলাদেশের অন্যতম গর্ব এবং বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষিত সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে শীর্ষক সংবাদটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত বছর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তিন বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ১০৬টি। যৌথভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে এই জরিপ পরিচালনা করেছে বন বিভাগ, বেসরকারী সংস্থা ওয়াইল্ড টিম ও যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউট। স্মরণযোগ্য যে, বাঘ রক্ষার জন্য ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে বিশ্বে বাঘ আছে এমন দেশগুলোর সম্মেলনে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য করা হবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য সুন্দরবনের বাইরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে কয়েকটি বাঘ থাকা বিচিত্র নয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইন-২০১৭ অনুমোদন করেছে জাতীয় সংসদে। এটিও একটি আশাব্যঞ্জক খবর যে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও। ২০১৬ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বাঘ আছে এমন ১৩টি দেশের বন ও পরিবেশমন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রাক্কালে পরিবেশিত হয়েছে এই তথ্য। প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউ ডব্লিউ এফ) এবং গ্লোবাল টাইগার ফোরাম পরিবেশিত তথ্যে সর্বশেষ বাঘ সম্পর্কিত খবরাখবর মিলেছে। সংস্থা দুটি বলছে, বৈশ্বিক গণনায় বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৯০টি। ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২০০। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বন-জঙ্গলের আশপাশের স্থানীয় মানুষ এবং সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের তৎপরতায় ব্যাঘ্রকুলের এই সমৃদ্ধি। অন্যদিকে এ সময়ে বাঘের সংখ্যা কমেছে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায়। গত বছর প্রকাশিত বন বিভাগের এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬। অন্যদিকে সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও বাঘের সংখ্যা কমেছে ইন্দোনেশিয়ায়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- পাম তেল, কাগজের মন্ড তৈরির জন্য বিপুল পরিমাণ বন ধ্বংস করার কারণেই সেখানে কমেছে বাঘের সংখ্যা। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমার কারণ কী? এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন কার্যকারণ জানা না গেলেও বলা যায়, সুন্দরবনের ওপর স্থানীয়দের মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতাই বাঘের সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ। ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা জীবনজীবিকার জন্য প্রধানত বন ও বনসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। কেউ কাঠ কাটে, কেউ গোলপাতা সংগ্রহ করে, কেউ মধু অন্বেষণ করে, আবার কেউবা মাছ-কাঁকড়া ইত্যাদি ধরে থাকে। লবণাক্ত পানির কারণে চাষবাস হয় না বিধায় বনই তাদের জীবন জীবিকা। এর পাশাপাশি রয়েছে চোরা শিকারিদের উৎপাত-উপদ্রব, যারা প্রধানত হরিণ ও বাঘ শিকার করে থাকে। সিডর-আইলা-ফণীর মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগও এর জন্য দায়ী হতে পারে কিছুটা। তবে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বাঘের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল। সেক্ষেত্রে দু’দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় বাঘের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। মোট কথা, বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে স্থানীয়দের বিকল্প জীবন-জীবিকার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে বাঘ সংরক্ষণে। বাঘ অধ্যুষিত দেশগুলো ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সে অবস্থায় পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ব্যাঘ্র প্রজাতি সুরক্ষা পেতে পারে।
×