ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মতিলাল দেব রায়

নিরাপদ সড়ক এবং কিছু প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২৬ মে ২০১৯

 নিরাপদ সড়ক এবং  কিছু প্রস্তাব

বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা উপজেলাতে পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে স্থানীয় পদ্ধতিতে তৈরি করা এলাকাভিত্তিক কিছু যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ কম খরচে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এই যানবাহনে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন এই যানবাহন দেশের জেলা শহর ও শহর তলিতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে। থানায় মামলা হলেও পরবর্তী সময়ে আপোস-রফা হয়ে যায়। রাস্তায় আইনকে বুড়ি আঙ্গুল দেখিয়ে এরা বেপরোয়া হয়ে দিন দিন রাস্তায় বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে চলেছে। মৌলভীবাজার শহর টমটম নামক যানবাহনের শহরে পরিণত হয়েছে। যেদিকে তাকাবেন সেই দিকেই দেখা যায় টমটম। কোন টমটমের ফিটনেস না থাকায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, শিক্ষক, দেশী-বিদেশী টুরিস্ট ও ব্যবসায়ী। যারা জানে না এসব যানবাহনের কোন বৈধতা নেই। নেই লাইসেন্স। নেই ফিটনেস। এগুলো যানবাহন নয়, এরা সড়কের ঘাতক, এদের স্থানীয়ভাবে বয়কট করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে এসব যানবাহন ব্যবহার না করার জন্য। এই যানবাহনে কোথাও যাওয়ার চিন্তা না করে নিরাপদে হেঁটে চলে যান, এতে পকেটের টাকা খরচ হবে না স্বাস্থ্যর জন্যও ভাল। মৌলভীবাজার শহরে বহুল প্রচলিত বাহনের নাম ‘টমটম’। স্কুল-কলেজ, কোথাও ভ্রমণে যেতে বাসা থেকে রাস্তায় বের হতে না হতেই মিনিট কয়েকের মধ্যে নিজের অজান্তেই সামনে এসে হাজির হয় এই বাহন। বলা যায়, টমটমের রাজত্বেই চলছে মৌলভীবাজার শহর। কিন্তু এ টমটম কতটুকু নিরাপদ যানবাহন হতে পারে! যেখানে নেই লুকিং গ্লাস, নেই ব্রেক, সামনের গ্লাস নেই, নেই হেডলাইট, সিগন্যাল বাতি, সংযুক্ত নেই মিটার। তাছাড়া সাইলেন্সারের বিকট আওয়াজ তো আছেই। তারপরও বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন যাত্রীরা। টমটমে লুকিং গ্লাস না থাকলে কিভাবে একজন চালক বুঝবে পেছনে কি ধরনের গাড়ি আসছে। সামনের গাড়িকে ওভারটেকিং করার সময় পেছনে যে গাড়ি আছে তা চালক বুঝতে পারে না। পেছনের গাড়িটি দ্রুতগতিতে এবং কাছাকাছি থাকলে পেছন থেকে ধাক্কা দিতে বাধ্য হয় এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কিছু টমটমের লুকিং গ্লাসের স্ট্যান্ডে শুধু ফ্রেম লাগানো, কিন্তু নেই গ্লাস। আরও দেখা যায়, গাড়ির ভেতরে ফিটিং করে রাখা হয়েছে লুকিং গ্লাস। অধিকাংশ গাড়ি ফিটনেসবিহীন। এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। কর্তৃপক্ষের উচিত ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো সড়কে চলতে না দেয়া, গাড়ির ফিটনেস দেখার দায়িত্ব হলো বিআরটিএর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বিআরটিএর অফিসের কারও কি নজরে আসে না কেমন করে লন্ডন ও আমেরিকা প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার শহরে এই অবৈধ টমটম গাড়ি আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় চলে। তাদের শক্তির উৎস কোথায় তা খুঁজে বের করে এই ঝুঁকিপূর্ণ টমটম রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবি। অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর হাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচার সুযোগ করে দেয়া আপনার আমার সকলের দায়িত্ব। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাতে এবং ৪৯৩টি উপজেলাতে একই রকম বাস চলাচলের ব্যবস্থা করলে এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নানা রঙের যানবাহন আস্তে আস্তে আর রাস্তায় নামবে না। ছোট ছোট যানবাহন যেমন ট্যাম্পো, বেবিট্যাক্সি, মিশুক, মাইক্রোবাস, লেগুনা, টমটম, ভটভটি, ঘোড়াটানা গাড়ি, চট্টগ্রামের চান্দের গাড়ি এসব সুন্দর সুন্দর নামে যে গাড়িগুলো প্রচলিত আইনকে অমান্য করে সাধারণ জনগণের জীবনের জন্য হুমকি, সেই যানবাহন অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। কয়েক বছর পূর্বে বেশি ধোঁয়া নির্গত করে বিধায় তিন চাকা বিশিষ্ট হলুদ রঙের বেবিট্যাক্সি ঢাকা শহরে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়, ঢাকা শহরে এগুলো বন্ধ হয়েছে ঠিকই কিন্তু এই বেবিট্যাক্সিগুলো সারাদেশের জেলা শহরেসহ ঢাকা শহরের আশপাশে চলছে। যে বেবিট্যাক্সি ঢাকাতে বায়ু দূষণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে- সেগুলো কি করে মফস্বলে রয়ে গেল তার কারণ কেউ জানে না। এই বেবিট্যাক্সিগুলো এত পুরনো হয়ে গেছে তা আর মানুষ বহন করার জন্য উপযুক্ত নয়। টমটম গাড়িগুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে অবিলম্বে মৌলভীবাজার শহরে সরকারী উদ্যোগে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করার দাবি জানাচ্ছি এবং শ্রীমঙ্গল থেকে নতুন রেল সংযোগের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গল– শেরপুর হয়ে নবীগঞ্জ-সুনামগঞ্জ অথবা শ্রীমঙ্গল-শেরপুর হয়ে পাগলা- সুনামগঞ্জ রেল সংযোগ করা যায় কি-না তার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাছাড়া দেশের আনাচে-কানাচে যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরেক রকম যানবাহন যেমন নসিমন, ভটভটি, টমটম, চান্দের গাড়ি, মিশুক, বেবিট্যাক্সি, যানবাহনগুলোর চালককে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাস্তায় নামানো অথবা এগুলো জরুরী ভিত্তিতে রাস্তা থেকে সরিয়ে জনসাধারণকে বিপন্মুক্ত করা খুব দরকার। আমার ধারণা, সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে ঢাকা শহরে চলাচলকারী সব যানবাহনের তালিকা, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরিবহনের নাম-ঠিকানা লেখা আছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাস, বাসের চালকের এবং উবার বাইকের চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করাতে হবে। যদি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে বা ২ নম্বর লাইসেন্স থাকে এবং গাড়ির ফিটনেসও না থাকে- তাহলে পরিবহনের মালিককে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, এছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। লেখক : আহ্বায়ক, ক্যাম্পেন ফর রোড সেফ্টি, নিউইয়র্ক
×