ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইইএলটিএসের এ টু জেড

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৬ মে ২০১৯

আইইএলটিএসের  এ টু জেড

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরি এবং ইমিগ্রেশনের জন্য ইংরেজী ভাষার দক্ষতা প্রমাণে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি পরীক্ষা। বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি অস্ট্রেলিয়া এবং ক্যামব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যাসেসম্যান্ট আইইএলটিএস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হলেও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্কোর গ্রহণ করছে। বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপি পরিচালনায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য একাডেমিক এবং চাকরি বা অন্যান্য প্রয়োজনে জেনারেল মডিউলের পরীক্ষা দিতে হয়। যে কোন বয়সে এবং যে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত ৬ থেকে ৭ স্কোর পেতে হয়। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যান্ড স্কোর পৃথকভাবে ভাল করতে হয়। সম্পূর্ণ স্কোর যত ভালই হোক না কেন, একটি বিভাগে স্কোর কম হলে ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। তাই পরীক্ষা দেয়ার আগেই জেনে নিন ন্যূনতম কত স্কোর প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই আইইএলটিএসের বিস্তারিত। পরীক্ষা পদ্ধতি : কোনরূপ পাস-ফেল না থাকা এই পরীক্ষাতে পূর্ণমান বা টোটাল ব্যান্ডস্কোর ৯, যার মধ্যেই একজন পরীক্ষার্থীর ইংরেজী শোনা (লিসেনিং), বলা (স্পিকিং),পড়া (রিডিং) এবং লেখা (রাইটিং)-এই চারটি স্কিলের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। চারটি অংশে আলাদাভাবে প্রাপ্ত স্কোর যোগ করে গড় করে চূড়ান্ত স্কোর দেয়া হয়। শোনা (লিসেনিং) : আইইএলটিএস পরীক্ষার ৩০ মিনিটের এই অংশে মোট চারটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। শেষে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেয়া হয় সব উত্তর প্রশ্নপত্র থেকে উত্তরপত্রে লেখার জন্য। রেকর্ড করা নির্দিষ্ট বক্তব্য শুনে বা কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো রেকর্ডটি হতে মাল্টিপল চয়েজ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা, বাক্যপূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন। বলা (স্পিকিং) : কথা বলার দক্ষতা যাচাইয়ের ১০ থেকে ১৫ মিনিটের এই অংশে তিনটি বিভাগে পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম বিভাগে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, এই যেমন- পরিবার, বন্ধু, কাজ ইত্যাদি। দ্বিতীয় বিভাগে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দুই মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে অবশ্য প্রস্তুতির জন্য এক মিনিট দেয়া হয়। তৃতীয় বিভাগে থাকে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চার পাঁচ মিনিটের কথোপকথন। স্পষ্ট উচ্চারণে অনর্গল এবং দ্রুত কথা বলার ক্ষমতা ভালো স্কোর পেতে সহায়ক। পড়া (রিডিং) : পড়ার দক্ষতা যাচাইয়ের ৬০ মিনিটব্যাপী এই অংশে আলাদাভাবে ২০০০-২৭৫০টি শব্দে লিখিত তিনটি রচনা বা আর্টিক্যাল হতে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বাক্যপূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা, সত্য-মিথ্যা-নট গিভেন, সংক্ষেপকরণ ইত্যাদি ধরনের প্রশ্ন সংবলিত আর্টিক্যাল তিনটি ক্রমান্বয়ে জটিল হতে জটিলতর হয়। আর্টিক্যালগুলো সাধারণত বিভিন্ন জার্নাল, সংবাদপত্র, বই ইত্যাদি থেকে নেয়া হয়। লেখা (রাইটিং) : ইংরেজী লেখার দক্ষতা যাচাইয়ের ১ ঘণ্টার এই অংশে পরীক্ষার্থীকে টাস্ক ওয়ান ও টাস্ক টু নামের দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। ১ম প্রশ্নের চেয়ে ২য় প্রশ্নটিতে বেশি নম্বর নির্ধারণ করা থাকে। প্রথম প্রশ্নটিতে মোটামুটি ২০ মিনিটে ১৫০ শব্দে সাধারণত কোন চার্ট, ডায়গ্রাম ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণধর্মী আর দ্বিতীয়টিতে ৪০ মিনিটে ২৫০টি শব্দে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে মত বা যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়। পরীক্ষার প্রস্তুতি : আইইএলটিএস কোন Language Course নয়, তাই ইংরেজীর Basic Foundation ছাড়া ভাল স্কোর পাওয়া অসম্ভব। ভাল স্কোর পেতে অবশ্যই ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হতে হবে; অর্থাৎ Basic Grammar, Listening- Speaking- Reading- Writing এই চারটি Skill, পর্যাপ্ত Skill, Vocabulary সহ পুরো English Skill Developed হওয়া জরুরী। এ জন্য শুরুতেই লক্ষ্য ঠিক করে নিন যে আপনার কত স্কোর প্রয়োজন। শুরুতে কয়েকটা মক-টেস্ট দিতে পারেন। এর স্কোর দেখে নিজেকে মূল্যায়ন করুন যে আপনি কাক্সিক্ষত স্কোর থেকে কতটা দূরে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিপর্ব শুরু করুন। কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভাল স্কোর পেতে এগুলো সমাধান করা জরুরী। আপনি ঘরে বসে সেল্ফ লার্নিংয়ে ও প্রস্তুতি নিতে পারেন। এজন্য বাজারে প্রচুর বই এবং অনলাইনে প্রচুর ভিডিও টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। তবে সেল্ফ লার্নিংয়ের বেলায় নিজে ইংরেজীতে ভাল দক্ষ হতে হবে। এছাড়াও কোন কোচিং সেন্টারে ক্লাস করেও নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রস্তুতি নিন, কিছু সময় আইইএলটিএসের জন্য নির্দিষ্ট রাখুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি তা দু’ঘণ্টা হয় তাহলে ৩০ মিনিট ইংরেজী সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলো দেখুন। এক্ষেত্রে বিবিসি’র সংবাদ কার্যকরী। এতে ব্রিটিশ উচ্চারণ সম্পর্কে ভাল ধারণা হয়। যা লিসিনিং এ কার্যকরী। তাড়াহুড়ো না করে প্রস্তুতির জন্য মাস তিনেক সময় হাতে রাখা ভাল। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্পিকিং অংশে ভাল স্কোর পেতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ইংরেজীতে কথা বলার অভ্যাস করুন। ত্রিশ মিনিট পত্রিকা পড়ুন। সম্ভব হলে রিডার্স ডাইজেস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, হার্ভার্ট বিজনেস রিভিউ ইত্যাদি। বাংলাদেশী ইংরেজী পত্রিকাগুলোর সাপ্তাহিক যে সাপ্লিমেন্টারি থাকে সেগুলো এক সপ্তাহ ধরে পড়তে পারেন। নতুন বা অচেনা শব্দগুলো আন্ডারলাইন করুন। বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করুন। পড়াশেষে ডিকশনারি দেখুন। পরের ত্রিশ মিনিট লিখুন। আর কিছু না পাড়ুন সারা দিনে যা কিছু করেছেন তা-ই নিয়ে রাতে শোবার আগে এক-দুই পাতা লিখুন। পরে অভিজ্ঞ কাউকে দেখিয়ে ভুলগুলো শুধরে নিন। পরদিন একইভাবে আবার লিখুন। আগের শুধরে নেয়া ভুলগুলো সচেতনভাবে এড়িয়ে শুদ্ধ করে লিখুন। এই চর্চাটি অব্যাহত রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন টপিক নিয়ে লেখা শুরু করুন। ইংরেজী বলার চর্চাটিও কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ও ফলাফল প্রক্রিয়া : রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর পাসপোর্ট থাকতে হবে। পরীক্ষার্থীর তথ্য সংবলিত পৃষ্ঠার ফটোকপি এবং ফি বাবদ ১৫ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে সরাসরি ব্রিটিশ কাউন্সিল অথবা এর অনুমোদিত যে কোন পয়েন্ট থেকেও রেজিস্ট্রেশন করা যায়। পরীক্ষার্থী নিজেও অনলাইনে ও রেজিস্ট্রেশন করে ফি কোন রেজিস্ট্রেশন পয়েন্ট বা স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের সার্ভিস ওয়ানে জমা দিতে পারবে। সাধারণত আইইএলটিএস ফল প্রকাশিত হয় পরীক্ষার ১৩ দিন পর। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ফলাফল সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার্থীর নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, পরীক্ষা প্রদানের তারিখ এন্ট্রি করে সহজেই জেনে নিতে পারবেন আইইএলটিএস পরীক্ষার ফলাফল। যদি আপনার পরীক্ষার ফলের ওপর কোন সন্দেহ থাকে তবে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ‘এনকুয়ারি অন রেজাল্ট’-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে, ফলাফলে ভুল ধরা পড়লে অবশ্যই আপনি ওই টাকা ফেরত পাবেন। ছয় থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিটিশ কাউন্সিল আপনার পুনঃনম্বরকৃত ফলাফল প্রকাশ করবে। আইইএলটিএস প্রস্তুতি অনলাইনে : অনলাইনে আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিমলক তথ্য অর্থাৎ লিসেনিং, স্পিকিং, রিডিং রাইটিং এর ওপর বিশদ আলোচনা, লেসন, অডিও টিউটোরিয়ালসহ দিয়ে সাজানো হয়েছে বেশকিছু ওয়েবসাইট : http://www.britishcouncil.org professionals-exams-ielts-intro.htm http://www.ielts-exam.net http://www.ielts.studyau.com www.candidates.cambridgeesol.org/cs http://www.cross-link.com/ielts-tutor.html http://www.uefap.co.uk লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সিইও এ্যাসেনসিয়াল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট ধানমন্ডি, ঢাকা, [email protected]
×