ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মের ফুলে রঙিন ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৬ মে ২০১৯

 গ্রীষ্মের ফুলে  রঙিন ক্যাম্পাস

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈশাখকে স্বাগত জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সবাই যখন বৃষ্টির অপেক্ষায় ঠিক তখনই ঘূর্ণিঝড় ফণীর হুঙ্কার। ফণীর ভয়ঙ্করী থাবা থেকে রেহাই পেলেও তার শক্তিমত্তার প্রমাণস্বরূপ কিছুদিন হয় ঝিরঝির বৃষ্টি। প্রকৃতির আশীর্বাদ বৃষ্টির ছোয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সবুজ ক্যাম্পাস হয় সুশোভিত। শীতের প্রভাব গাছগুলোকে করেছে সবুজ শূন্য। বসন্ত সেই রুক্ষতা দূর করে প্রকৃতিতে দিয়েছে প্রাণের সঞ্চার। গ্রীষ্মের রঙিন ফুল সেই প্রাণে দিল যৌবনের প্রাঞ্জলতা। সাতশ’ একরের ক্যাম্পাসে বসেছে লাল, হলুদ, বেগুনী, সাদা রঙের ফুলের মেলা। গ্রীষ্মের ফুলে রঙিন সাজে জাবি। জাবির প্রতিটি অনুষদ, আবাসিক হল, শহীদ মিনার, মুন্নি চত্বর, মুরাদ চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, লেকের পাড়ে এখন জারুল-কৃষ্ণচূড়া-সোনালু ফুলের রাজত্ব। ছুটির দিনগুলোতে দর্শণার্থীদের ভিড় ক্যাম্পাসের স্বাভাবিত চিত্র। গ্রীষ্মের রঙিন ফুলের আকর্ষণ গরমের প্রভাবকে হার মানিয়েছে। তাইতো উৎসুক মানুষের ভিড়ে মুখরিত জাবি। কৃষ্ণচূড়া ফুলেল লাল রঙে চেয়ে গেছে ক্যাম্পাস। রেজিস্ট্রার ভবন, পুরনো কলা, মেয়েদের আবাসিক হল, মুন্নি চত্বর, অডিটোরিয়ামের সামনে ও পরিবহর চত্বর থেকে রাঙ্গামাটি রাস্তার দু’পাশে লাল গালিচা বিছানো। সবুজ ঘাসের ওপর লাল আস্তরণ না দেখলে উপলব্ধি করা যাবে না। লাল সবুজের বাংলার এক অপরূপ চিত্রায়ণ ফুটে উঠেছে এখানে। হিমু সাজার প্রতিযোগিতায় প্রকৃতিও পিছিয়ে নেই। সোনালু ফুলের হলুদ আভায় সারা ক্যাম্পাসে বসেছে হলুদিয়ার মেলা। সেই মেলায় প্রেমিক-প্রেমিকার ভিড়। স্মৃতিগুলো লুকিয়ে থাকছে সোনালু ফুলের মালায়। বেগুনী রঙে রঙিন ক্যাম্পাসের লেকের পাড়গুলো। গরম আর জারুল ফুলের একই সঙ্গে বসবাস। গরমের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে বেগুনী রঙের মাত্রাও বাড়ে। জারুল দৃষ্টিনন্দন সোভায় মোহিত করে। মাঝে মাঝে জাবির লেকগুলোতে জারুল ও সোনালু ফুলের মিতালি যেন এক স্বর্গরাজ্য। এছাড়াও আছে নাম জানা-অজানা ফুলের বৈচিত্র্য। জাপানের জাতীয় ফুল ক্যাসিয়া রেনিজেরার মন মাতানো সৌন্দর্যও বিমহিত করে সবাইকে। বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জুলপিশাহ্ রাবেয়া মুমুর কণ্ঠে উঠে আসে জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে ফুলের নিবিড় সম্পর্কের কথা। তিনি বলেন, ‘কাঠফাটা গ্রীষ্মে যখন পিপাসায় কাতর হয়ে উঠে পুরো বাংলা ঠিক তখন ক্যাম্পাস জুড়ে থাকে নাম জানা-অজানা ফুলের বাহার। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলেরাও তাদের রূপ দেখিয়ে মুগ্ধ করে দেয় আমাদের। ফুলের মাঝেই বসবাস। ফুলের মাঝেই খুঁজে পাই শীতলতা।’ কৃষ্ণচূড়ার খোঁজে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা নাজমুল ইসলাম মিথুন বলেন, ‘জাবি ক্যাম্পাসের সঙ্গে একাডেমিক সম্পর্ক না থাকলেও তার প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন জানি একটা মায়াজালের মতো। গ্রীষ্মের রোদ পড়া গরমেও গাছে কৃষ্ণচূড়া দেখেই যেন নিমিশেই গায়ে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। কৃষ্ণচূড়া গাছে গাছে যেন লাল রঙের মেলা। আছে আরও অনেক রং বেরঙের ফুল। জাবি ক্যাম্পাস যেন একগুচ্ছ বাগান।’ ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে জাবি সাজে একেক সাজে। গ্রীষ্মের ও বসন্তের ফুলের সঙ্গে শীতের পাখিও মন কাড়ে সকলের। সারাবছর এভাবেই দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ^বিদ্যালয়ের জাবি ক্যাম্পাস। খলিলুর রহমান
×