ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার মিলারদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১০:০৬, ২৬ মে ২০১৯

 সরকার মিলারদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার বাজার থেকে কম মূল্যে ধান কিনে চালকল মালিকদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা দেড় কোটি কৃষক পরিবারের অবস্থা আজ খুবই নাজুক ও দুর্বিষহ। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কৃষকদের বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বহু স্থানে ধানের জমিতে আগুন দিয়ে ও রাস্তায় ধান ফেলে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ধানচাষীদের চাওয়া হচ্ছে সরকার যেন ন্যায্যমূল্যে চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করে। তাদের চাওয়া খুবই সামান্য ও যৌক্তিক। আমরা কৃষকদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত। ফখরুল বলেন, বাজার থেকে কম মূল্যে ধান কিনে চালকল মালিকরা চাল তৈরি করে সরকারের কাছে বিক্রি করে প্রতি কেজিতে মুনাফা করছে ১০ টাকা। আর কৃষক তার জমিতে উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে কেজিতে লোকসান গুনছে ১০ থেকে ১২ টাকা। ফখরুল বলেন, সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানে নিচ্ছে না বরং সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কৃষকদের বিক্ষোভকে ‘স্যাবোটেজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কৃষকদের বাস্তব এই সেন্টিমেন্টকে সরকার দলীয় শীর্ষ নেতার এমন মন্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। বর্তমানে কৃষকদের যে দুরবস্থা তা দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের কৃষকদের বর্তমানে যে দুরবস্থা তা সরকারের ভুল নীতির প্রতিফলন। সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী দেশ খাদ্যে বিশেষ করে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ টন। অথচ এই সময়ে সরকারী চ্যানেলে বা ব্যবস্থায় খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ৯৭ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। যার মধ্যে চাল ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টন এবং গম ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টন। বিগত ৩২ বছরের মধ্যে সরকার সর্বোচ্চ পরিমাণ ৩৮ লাখ টন চাল আমদানি করেছে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে। একদিকে সরকার বলছে চাল উৎপাদনে তারা স্বয়ংসম্পন্ন আর অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করছে। চাল উৎপাদন নিয়ে সরকারের মিথ্যাচার ধরা পড়েছে সরকারের দেয়া পরিসংখ্যানেই। ফখরুল বলেন, বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আমদানি করার কারণে সরকারী-বেসরকারী হিসাব বলছে দেশে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। ফলে বাজারে চাপ তৈরি করছে এবং ধানের দাম কমছে। অনিয়ন্ত্রিত চাল আমদানিকে দেশের বিশেষজ্ঞরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন। ফখরুল বলেন, সিপিডি এর প্রতিবেদনে জানানো হয় ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যত চাল বিদেশ থেকে আনা হয়েছে তার আমদানি মূল্য ছিল টন প্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার ডলার। অথচ ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য ছিল টন প্রতি ৫০০ ডলার। এই বাড়তি টাকা দেশ থেকে ওভার ইনভয়েস এর মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। ফখরুল বলেন, সরকার এ বছর মে মাস থেকে ১৩ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে। মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সরকারের সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টন। চাল আমদানির ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, সরকারের অংশীদারী একটি দলের প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও চাল আমদানিতে সরকারের দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও সরকারী দলের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এহেন পরিস্থিতির জন্য এ সরকারের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কৃষক পর্যায়ে ধানের উৎপাদন খরচ কমপক্ষে ৯০০ টাকা। ধান কাটার মৌসুমে একজন দিনমজুরের খরচ ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আর বর্তমান বাজারে কৃষককে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা মণ দরে। এক্ষেত্রে প্রতি মণ ধানে কৃষকের ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ক্ষতি গুনতে হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারী ধান-চাল সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য ২টি। একটি হলো কৃষককে মূল্য সহায়তা দেয়া এবং আরেকটি হলো সরকারী মজুদ ব্যবস্থপনা। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। এতে কিছুটা হলেও কৃষক লাভবান হবে। কিন্তু সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে না কিনে কিনছে চালকল মালিকদের কাছ থেকে। অর্থাৎ মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের কাছ থেকে। এতে লাভবান হচ্ছে চালকল মালিকরা। আর সর্বস্বান্ত হয়ে মনের দুঃখে কৃষক তার ধান ক্ষেতেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে। মির্জা ফখরুল বলেন, শ্রমিকের ঘাটতি লাঘব ও কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। দেশের হাওড় ও দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ হারে ভর্তুকি দিয়ে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য ছিল এ প্রকল্পটির। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সরকারের দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে সরকারের দলীয় লোকজন, কিন্তু প্রকৃত কৃষক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। বার বার গরিব কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য আজ বড় প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার। মির্জা ফখরুল কৃষক বাঁচাতে দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে- কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে কৃষকদের প্রদান করা। যেমন- কোন ক্ষুদ্র চাষী ৫০ মণ ধান উৎপাদন করলে তাকে ৫০ মণ ধানের বিপরীতে প্রতি কেজি ২৮ টাকা ধরে ৫৬ হাজার টাকা ধার দেয়া। ৩ মাস পর কৃষক তার ধান বিক্রি করে ধার পরিশোধ করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারকির মাধ্যমে সঠিকভাবে ক্ষুদ্র চাষীকে চিহ্নিত করে এই কাজ করতে পারে সরকার। এতে কৃষকরা বর্তমান দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবে। এ ছাড়া সরকারী পর্যায়ে ধান-চাল গুদামজাতকরণের ক্ষমতা হলো প্রায় ২১ লাখ ৮০ হাজার টন। এই ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে সরকারকে বেশি পরিমাণে ধান-চাল ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের সহায়তা দিতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বেসরকারী গুদাম ভাড়া করে সেখানে ধান চাল সংগ্রহ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়িয়ে অধিক পরিমাণ চাল বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেন কৃষকের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের সদ্ব্যবহার করা যায়। কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করছি। যা দিয়ে সরকার অতিরিক্ত প্রায় ৩৬ লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। কৃষকদের হয়রানি কমিয়ে সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে। ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কৃষকদলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ। খালেদার মুক্তির দাবিতে মহিলা দলের মানববন্ধন-মিছিল ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে মহিলা দল। শনিবার সকালে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন ও মিছিল করে তারা। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মানববন্ধনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের বাধার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলছে না। আমরা তাঁর অবনতিশীল শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই বারবার তাঁর সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবি জানালেও সরকার সেই দাবিকে অগ্রাহ্য করছে। আমরা অবিলম্বে তাঁর মুক্তি চাই। খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন না বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাাদকের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আসলেই আওয়ামী লীগ সরকারের ওপরই নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার জীবন-মরণ। তাই তারা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও বিদ্রুপ করছেন। মানববন্ধন ও মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরজাহান ইয়াসমিন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা ইয়াসমিন আতিকা প্রমুখ। মহিলা দলের মানববন্ধন ও মিছিলের পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একই এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল করে। এই মিছিলেও নেতৃত্ব দেন রুহুল কবির রিজভী। মিছিলে অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহ-সভাপতি ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। ড্যাবের নতুন কমিটি ॥ বিএনপি-জামায়াত পন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউন্সিল শেষে এ কমিটি নির্বাচন করা হয়। নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ হারুন অর রশীদ। আর মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ আব্দুস সালাম। এ ছাড়া কোষাধ্যক্ষ ডাঃ জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সভাপতি ডাঃ সেলিম ও যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ডাঃ মেহেদী হাসান।
×