ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে কেনাকাটা চলছে মধ্যরাত অবধি

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৬ মে ২০১৯

 রাজধানীতে কেনাকাটা চলছে মধ্যরাত অবধি

রহিম শেখ ॥ রাত বারোটা। অনেকটা দিনের মতোই সরগরম ঈদ বাজার। কোন কোন শপিংমলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কোনটাতে একেবারেই নেই। মার্কেটের বাইরে সড়কগুলোতে যানবাহনের নীরবতা। গত শুক্রবার রাতের এমন চিত্র বলে দিচ্ছে অনেক ক্রেতাই এই যানজট ও ভিড় এড়াতে ঈদ কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন মধ্যরাত। আর ক্রেতা সমাগম হচ্ছে বলে মধ্যরাত অবধি রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোও খোলা রাখছেন দোকানিরা। শুধু পোশাকই নয়, এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর। বেচাকেনায়ও দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দিনের বেলা নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে তরুণ-তরুণী ও পুরুষ ক্রেতারা মার্কেটে বেশি ভিড় করছেন। ক’দিন বাদেই ঈদ-উল-ফিতর। তাই সারা বছরের কেনাকাটা আর ঈদের কেনাকাটায় থাকে বিস্তর ফারাক। এ সময়ের কেনাকাটায় থাকে উৎসবমুখরতাও। ঈদে যত না আনন্দ তার চেয়ে বেশি আনন্দ পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসের কাজ শেষ করে বিকেলেই নেমে পড়েন অনেকে কেনাকাটায়, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিক্রেতারা বাড়তি রোজগারের আশায় রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট, শপিংমল ও নামী-দামী ব্রান্ডের শো-রুম খোলা রাখছেন মধ্যরাত পর্যন্ত। ফুটপাথও সরগরম মাঝরাত অবদি। দিনের তুলনায় ক্রেতা কম বলে বিক্রেতারাও বাড়তি খাতির করছেন ক্রেতাদের। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বিপণিবিতানে এবার আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেউ কেউ সাদা-কালো, হলুদ, নীল কাপড়ের ওপর কৃত্রিম ফুল দিয়ে তাদের বিপণিবিতান, শপিংমল এবং প্রবেশদ্বার দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে রেখেছেন। কিছু কিছু মার্কেটে গ্রামীণ আবহ তুলে ধরা হয়েছে প্রবেশদ্বারের সাজসজ্জায়। রাজধানীর বনানী, গুলশান, বারিধারা ও উত্তরা এলাকায় কয়েকটি নামীদামী শপিংমলের প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে মাটির কলস, কুলা-ডুলা ও বিভিন্ন পাটপণ্য দিয়ে। যেসব দোকানে দেশী পোশাকের কোন সরবরাহ নেই, সেখানেও লেগেছে গ্রামীণ আবহ। রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, শুধু পোশাক নয়, এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রীরও বেচাকেনা বেড়েছে। এখন দম ফেলার যেন সময় নেই দোকানিদের। সাধারণত দিনের বেলায় নারী ক্রেতারা রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ভিড় জমাচ্ছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বদলে যাচ্ছে ক্রেতার ধরন। এ সময় নারী ক্রেতাদের চেয়ে ঈদ বাজারগুলোয় বেশি দেখা যায় তরুণ-তরুণী ও পুরুষদের। গত শুক্রবার মধ্যরাতে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন জানান, অসহনীয় যানজট এড়াতেই এ সময় মার্কেটে এসেছেন। আর দোকানিরা জানান, এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। ক্রেতাও আসছেন প্রচুর। ধানম-ি থেকে কেনাকাটা করতে আসা আনিকা ফারজানা জনকণ্ঠকে জানান, রাত হলেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকতে খারাপ লাগে না। পাশাপাশি রাতের ঢাকার সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতেও ক্রেতাদের পদভারে মুখরিত শপিংমলটি। অনেক ক্রেতাকে মার্কেটটির সামনে বসে সপরিবারে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এখানে মাঝরাতে কেনাকাটা করতে আসার কারণ জানতে চাইলে একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা নয়ন আদিত্য জনকণ্ঠকে বলেন, দিনে অনেক যানজট থাকে। তাই রাতে এসেছি। এখন যানজট নেই। আজিমপুর থেকে মাত্র ১০ মিনিটে এসেছি বসুন্ধরা সিটিতে। দিনে হলে ১ ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যেত না। একই কথা জানালেন ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দিনে যানজট এড়াতেই মধ্যরাতে কেনাকাটা করতে এসেছি। তাছাড়া দিনে অনেক ভিড়ও থাকে। সে সময় পছন্দের পণ্যটি খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। শুক্রবার রাতে যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন একটি বেসরকারী কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদুর রশিদ ও তার স্ত্রী সুমি। তারা জানান, দিনে ব্যস্ততা ও তীব্র যানজটের কারণে রাতে এসেছেন ঈদ কেনাকাটায়। সুমি বলেন, দিনে খুব ভিড় থাকে, সঙ্গে যানজট তো আছেই। আর ঈদ উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তাই রাতে কেনাকাটা করতে এসেছি। তাছাড়া একসঙ্গে শপিং করে রাতে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। যমুনা ফিউচার পার্কের ইয়োলো ফ্যাশনের বিক্রেতা মইনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, দিনে যারা ব্যস্ত থাকেন, তারাই আসেন ইফতারের পর। এর মধ্যে অনেকেই আসছেন মধ্যরাতে। এসব ক্রেতা এসে ঘুরে যান না। পছন্দের জিনিসটি কিনেই তারপর বাড়ি ফেরেন। রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানমন্ডি হকার্স ও নিউমার্কেটে দেখা গেছে মধ্য রাতে ক্রেতার লক্ষণীয় ভিড়। গত শুক্রবার রাতে চাঁদনী চক মার্কেটে শপিং করতে এসেছিলেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, দিনে সময়ই কই শপিং করার। এরমধ্যে দিনের বেলায় গরম ও তীব্র যানজট তো আছেই। তাই শপিং করতে রাতে আসা। খুব ভাল লাগছে নিরিবিলি শপিং করতে পেরে। সন্তানরাও অনেক খুশি। এদিকে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন এক দাম দেড় শ’ এমন স্লোগানে মুখরিত ছিল ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ। শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, সেগুনবাগিচা, মৌচাক ও মিরপুরে ১০ গোলচত্বর ও ১ নম্বর ফুটপাথ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাতেও দিনের মতো ভিড়।
×