ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একটা কিনলে একটা ফ্রি-লাকি কুপন স্ক্র্যাচ কার্ড

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২৭ মে ২০১৯

 একটা কিনলে একটা ফ্রি-লাকি কুপন স্ক্র্যাচ কার্ড

রহিম শেখ ॥ প্রখর রোদ ও যানজট উপক্ষো করেই ঈদের কেনাকাটায় শামিল হচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতার এই বাড়তি চাপ দেখে বিক্রেতারাও খুশি। বিক্রি বাড়াতে লটারি, বিশেষ ছাড় কিংবা ফ্রি উপহার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন দোকানিরা। নগরীর ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণী বিতান থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্স, ফার্নিচার এমনকি বিউটি পার্লারেও চলছে বিশেষ ছাড় ও নগদ মূল্যছাড়। কেউ দিচ্ছেন একটা কিনলে একটা ফ্রি। দেয়া হচ্ছে লাকি কুপন, স্ক্র্যাচ কার্ড; যাতে পুরস্কার হিসেবে থাকছে সোনা, হীরা, গাড়ি, ফ্ল্যাট, টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ অস্যংখ্য পুরস্কার। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের বিপরীতে পণ্য কেনায় দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। বিক্রেতারা বলছেন, মূল্যছাড় কিংবা ফ্রি কিছু থাকলেই ক্রেতারা নির্দিষ্ট মার্কেট ও পণ্যের প্রতি ঝুঁকে পরেন। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এটা-ওটা ফ্রি ও লটারি দিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। যা এক ধরনের প্রতারণারও শামিল। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা আকর্ষণে প্রায় সবগুলো বড় বড় শপিংমলে নানা অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আছে স্পেশাল অফার। মূল্য ছাড়ের ঘোষণাও আছে চটকদার ব্যানার ফেস্টুনে। দোকানে দোকানে লটারির টিকেট আর মার্কেটের প্রধান ফটোকে রাখা আছে টিকেটের ফয়েল ফেলার নজরকাড়া বাক্স। মার্কেটগুলোতে মাইকিং করে চালানো হচ্ছে প্রচার। মার্কেটভেদে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার পণ্য কিনলে ১টি অথবা সর্বোচ্চ ১০টি কুপন দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ২০ হাজার টাকার পণ্য কিনলে ২ হাজার টাকা ছাড় থেকে শুরু করে আরও কত কি? আর এতে পুরস্কার হিসেবে রয়েছে, গাড়ি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ল্যাপটপ, এলইডি টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল সেট, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, স্ট্যান্ড ফ্যান, সোনা ও হীরার গহনা এমনকি ফ্ল্যাটসহ নানা ধরনের পুরস্কার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বসুন্ধরা সিটির উর্ধতন নির্বাহী পরিচালক শেখ আব্দুল আলীম জনকণ্ঠকে বলেন, এবার ১৫০০ টাকার পণ্য কিনলেই যে কোন ক্রেতাকে দেয়া হচ্ছে একটি স্ক্র্যাচ কার্ড। স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষলেই ভাগ্যবান ক্রেতারা পাবেন ১১ মেগা পুরস্কার এবং ১০৯ সুপার পুরস্কার । মেগা পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ১৫০০ সিসির ব্রান্ড নিউ কার টয়োটা, ডায়মন্ড সেট, ৮১২ সিসির চেরি কার, ৩ ও ৫ ভরি সোনার গহনা, সায়মন বিচ রিসোর্টে ৩ দিন ২ রাতের এয়ারট্রিপসহ ট্যুর প্যাকেজ, ১১০ সিসির মাহিন্দ্র স্কুটার, ৪৭ ইঞ্চি এলইডি টিভি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি। সুপার পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে এমপোরিও আরমানি ঘড়ি, ৪৩ ইঞ্চি প্রজেকশন টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল সেট, ক্যামেরা, ইলেক্ট্রিক ওভেন, ডিনার সেট, ইলেক্ট্রিক আয়রন ইত্যাদি। এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল খ্যাত যমুনা ফিউচার পার্ক শপিংমলে ‘মাত্র ১ হাজার টাকার কেনাকাটা করে জিতে নিন কোটি টাকার পুরস্কার’ এই স্লোগানে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে ১টি কুপন। শপিংমলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুপনের এ অফার চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। এ কার্ড ঘষে ক্রেতারা পাচ্ছেন নিশ্চিত উপহার। উপহারের তালিকায় আছে প্রাইভেটকার, ইভো ও সুজুকির মতো ব্র্যান্ডেড মোটরসাইকেল, সোনার গহনা, ডায়মন্ডের অলঙ্কার, এলইডি টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ডিনার সেট, টি-সেট, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। কার্ড স্ক্র্যাচ করে উপহার ক্রেতাদের হাতে তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া হচ্ছে। যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীরা জানালেন, ঈদের কেনাকাটার সঙ্গে ক্রেতাদের বাড়তি আনন্দ দেয় ঈদ বিক্রয় উৎসবের লটারি। এখানে যা লেখা হয় পুরস্কারের মাধ্যেমে তাই দেয়া হয়। এদিকে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি শপিংকমপ্লেক্স, ফরচুন শপিংমল, ইস্টার্ন প্লাস, ইস্টার্ন মল্লিকা, রাপা প্লাজাসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেটেও এমন প্রচার চলছে। এছাড়া রাজধানীর অদূরে উত্তরার আমির কমপ্লেক্স, ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ার ও উত্তরা টাওয়ারে কেনাকাটা করলে ক্রেতারা পাচ্ছেন ঈদে ফ্যান্টাসি কিংডমে যাওয়ার ডিসকাউন্ট কুপন। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাগুলোতেও চলছে এমন সব পুরস্কারের অফার। রাজধানীর বড় বড় শপিংমলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট ছোট মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড় বা মূল্যছাড়। বিভিন্ন পোশাক ক্রয়ের ওপর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন নামী-দামী ফ্যাশন হাউস। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারাও এমন সব অফার লুফে নিচ্ছেন। লটারিতে নিজের নাম এবং মোবাইল নাম্বার লিখে কুপনের বাকি অংশ বাক্সে ফেলছেন। সোমবার সকালে বসুন্ধরা সিটির তৃতীয় তলায় কথা হয় রফিকুল ইসলাম ও তামান্না জেনিফার দম্পতি সঙ্গে। রফিকুল জানান, ঈদে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। ছোটদের পোশাক তুলনামূলক দাম এবার একটু বেশি। তবে প্রায় প্রতিটি পণ্যে বিক্রেতারা স্ক্র্যাচ কার্ড দিচ্ছেন। কিন্তু কোনটিতেই কিছু পেলাম না। প্রায় ৩০টি কার্ড ঘষে দেখলাম লেখা ‘ধন্যবাদ আবার আসবেন’। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এটা-ওটা ফ্রি ও লটারি দিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এদিন রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিণী আদিবা ইসলাম। তিনি জানান, পরিবারের সবার জন্যই ড্রেস কিনেছি। কিন্তু দাম গতবারের তুলনায় একটু বেশি। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, ফ্রি দেয়ার নামে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে শুধু পোশাক নয়, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স, জুতার দোকান এমনকি পার্লারেও দেয়া হচ্ছে নানা অফার। ঈদ উপলক্ষে অটবি, হাতিল, আকতার, পারটেক্স, ব্রাদার্সসহ প্রায় সবগুলো ফার্নিচার শোরুমে ৫ থেকে ২০ শতাংশ মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও অবিশ্বাস্য অফারে ওয়ালটন, মার্সেল, সনি র‌্যাংগস, স্যামসাং টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, ডিভিডি প্লেয়ার, ক্যামেরা, সাউন্ড বক্স, ওয়াশিং মেশিন, কিচেন অ্যাপ্লায়েলস ও মাইক্রো ওভেন বিক্রি করছে। এছাড়া বিভিন্ন সোনা ও হীরার শো-রুম ছাড়া বিউটি পার্লারে ফেসিয়াল ও হেয়ার কাটের ওপর ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও পোশাক ক্রয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘বিকাশ’ ক্রেতাদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডধারীদের জন্য নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের শো-রুমে কেনাকাটায় ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্য ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ অফার, অর্থাৎ একটি কিনলে একটি ফ্রি দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে ঈদের কেনাকাটায় ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে। দ্য সিটি ব্যাংকের এ্যামেক্স কার্ডের গ্রাহকরা ঈদের কেনাকাটায় পাচ্ছেন বিভিন্ন শো-রুমে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। ব্র্যাক ব্যাংকের সকল ক্রেডিট কার্ডে আড়ংয়ে কেনাকাটায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। একই কার্ডে আড়ংয়ের অনলাইন থেকে কিনলে দেয়া হচ্ছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক সুবিধা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ৩০টি দেশী ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটায় দিচ্ছে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়। ঢাকা ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় ৫০টি আউটলেটে রয়েছে ১০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়। যমুনা ব্যাংক তাদের কার্ডধারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংক বিভিন্ন সুপার সপ বিশেষ করে আগোরা, স্বপ্ন, মীনাবাজার, প্রিন্স বাজারের মতো প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের নগদ ছাড়ে কেনাকাটায় সুযোগ দিয়েছে।
×