ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবকে বিপজ্জনক বলছেন পন্টিং

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৭ মে ২০১৯

সাকিবকে বিপজ্জনক বলছেন পন্টিং

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যে কতটা বিপজ্জনক তা সবারই জানা। এমনিতেইতো আর বিশ্বসেরা নন। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই যেমন নিউজিল্যান্ড বুঝেছে সাকিব কতটা ভয়ঙ্কর। সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশকেও সেমিফাইনালে উঠিয়েছেন সাকিব। কিন্তু বিশ্বকাপে সাকিব যেন একটু নীরবই। বিশেষ কোন নৈপুুণ্য নেই। এরপরও বড় মঞ্চের ক্রিকেটার ধরা হয় সাকিবকে। আর তাই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলেছেন, ‘সাকিব বিপজ্জনক।’ আর একটি উইকেট নিতে পারলে দেশের হয়ে প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেট ও ৫০০০ রান করার মাইলফলক স্পর্শ করবেন সাকিব। সেটি ২ জুন দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেও হয়ে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া’কে পন্টিং জানান, বাংলাদেশের হয়ে সাকিব বিপজ্জনক। সে অনেকদিন ধরেই খেলছে। মাঠের নানা প্রান্ত দিয়ে রান করতে পারে। স্কয়ারে খুব শক্তিশালী। এছাড়া ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ও থার্ডম্যানেও ভাল খেলে। সাকিব এমনই। তিনি ভাল করেই জানেন তার কি করতে হবে। নিজের দায়িত্বটা যথাযথভাবেই পালন করে যান সাকিব। আর তাইতো বাংলাদেশেরই শুধু নয়, বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডারই তিনি। খুব বেশিদিন হয়নি যেসব ফরমেটের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন সাকিব। এখন আছেন শুধু বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার। এবার বিশ্বকাপে যে ক্রিকেটাররা নিজেদের অন্য মাত্রায় হাজির করতে পারেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের সাকিবকেও ধরা হচ্ছে। বিশ্বকাপ এলে যদিও সাকিব একটু ঝিমিয়ে পড়েন। কিন্তু তিনবার বিশ্বকাপ খেলা এ অলরাউন্ডার এবার অনেক পরিপক্ব। অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। এটিই সাকিবকে আরও বেশি করে ভাল করতে সহযোগিতা করতে পারে। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামেন সাকিব। প্রথম ম্যাচেই কি সৌভাগ্য কপালে জুটে। প্রথম ম্যাচেই ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। রাহুল দ্রাবিড়ের দলকে বিদায় করে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে গন্ডি অতিক্রম করা ম্যাচে আবার ৫৩ রানের ঝলকানি ব্যাটিং প্রদর্শনও করেন সাকিব। ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর এক বছরের মধ্যেই বিশ্বকাপ থাকায় খেলার সুযোগ মিলে। এই একটি ম্যাচেই নিজের ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন সাকিব। এরপর ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস উপহার দেন। তিন বিশ্বকাপে মোট ২১ ম্যাচ খেলে ৩০.০০ গড়ে ৫৪০ রান করেন সাকিব। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ৯টি, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ৬টি ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ৬টি ম্যাচ খেলেন সাকিব। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি মোট ৫টি। বল হাতে তিন বিশ্বকাপে উইকেট নেন ২৩টি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮.৫ ওভার বোলিং করে ১ মেডেনসহ ৫৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন সাকিব। বিশ্বকাপে সাকিবের সেরা বোলিং এটিই। সাতটি ম্যাচেতো কোন উইকেটই নিতে পারেননি। বিশ্বকাপে সাকিবের অবস্থা আগে যেমনই ছিল, এখন সাকিব অনেক জানেন। পরিস্থিতি বুঝে খুব ভালভাবেই খেলতে পারেন। দলের বিপদের সময় হাল ধরতে পারেন। আর তাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কাউকে নিয়ে যদি বিশেষ ভয় থাকে প্রতিপক্ষের, সেটি সাকিবকে নিয়েই থাকছে। রিকি পন্টিংতো আর এমনিতেই না বুঝে সাকিবকে বিপজ্জনক তা বলেননি। বুঝেই বলেছেন। ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন পন্টিং। ৪৬ ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা এ অধিনায়ক কি আর কম জানেন। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন দুইবার। অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ জেতান পন্টিং। স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বে যখন ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপও জিতে অস্ট্রেলিয়া, সেই দলেরও সদস্য ছিলেন পন্টিং। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডও তার। পন্টিংয়ের কথার গুরুত্ব তাই অনেক। এবার বিশ্বকাপে দলগুলোর বিপজ্জনক খেলোয়াড়দের নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন করেছে ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া’। এ আয়োজনে বাংলাদেশের বিপজ্জনক ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবকে বেছে নেন পন্টিং। সাকিব বেশ স্মার্ট এবং চতুর ক্রিকেটার। তাও বলতে ভুলেননি পন্টিং। তিনি বলেন, ‘সাকিব কতটা চালাক তা বোঝা যায় হাতে বল থাকলে। বলে অতটা বাঁক নেই কিন্তু অসাধারণ গতি-বৈচিত্র্য। সব সময় আক্রমণাত্মক। অন্য স্পিনারদের চেয়ে আর্ম বল অনেক বেশি ব্যবহার করে। তবে এখন বাকি স্পিনারদের চেয়ে সে আলাদা। বেশিরভাগ স্পিনার রান আটকাতে চায়। কিন্তু সে (সাকিব) অন্যভাবে ভেবে থাকে। প্রথম কয়েকটি বলে সে আপনাকে ক্রিজে রাখবে। এরপর গতি-বৈচিত্র্য এনে অপেক্ষা করবে কখন ব্যাটসম্যান তাকে মারতে আসবে। সাকিবকে আসলে আলাদা করতে হয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলো বিবেচনাতেই। দেশের বাকি ক্রিকেটাররা এ স্থানটিতে অনেক পিছিয়ে। সাকিব বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে বিচরণ করে দেখিয়েছেন। লীগগুলোতে বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটার খেলেন। সেখানে সাকিব অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। সেই অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজেও লাগান। ভয়-ডরহীন, অস্বস্তিহীন খেলা খেলতে পারেন। কোন কিছুই তাই সাকিবকে দমিয়ে রাখতে পারে না। পন্টিং এ বিষয়টিও সামনে তুলে ধরেছেন, সাকিব অনেকদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। আইপিএল ও বিগ ব্যাশেও খেলছে অনেকদিন ধরে। তার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলের জন্য কাজে লাগবে। পন্টিংয়ের কথা এখন কাজে লাগলেই হয়। সাকিব এবার বিশ্বকাপে জ্বলে উঠলেই হয়। তার বিপজ্জনক রূপটা প্রতিপক্ষ দেখতে পেলেই হয়।
×