ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চের কেবিনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে

প্রকাশিত: ০৩:১১, ২৭ মে ২০১৯

দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চের কেবিনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রতিবছর দুইটি ঈদকে সামনে রেখে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে অত্যাধুনিক ও বিশালাকারের নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও ইদ-উল ফিতরের বহরে যোগ হয়েছে মানামি এবং অ্যাডভেঞ্চার-৫ নামের দুটি বিলাসবহুল লঞ্চ। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে কেবিনের সংখ্যাও। তবু সাধারণ যাত্রীদের কাছে এসব কেবিনের টিকিট পরিণত হয়েছে সোনার হরিণে। লঞ্চ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কেবিনের টিকিট দেওয়ার কথা থাকলেও তা চড়াদামে কালোবাজারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উচ্চমূল্যে সে সব টিকিট সংগ্রহ করে ঈদের ছুটিতে নারীর টানে বাড়ি ফেরা ও ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলাসহ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও বাগেরহাট নৌ-রুটে দিনে ও রাতে সারাবছর চলাচল করে দেড় শতাধিক ছোট-বড় লঞ্চ। এবারের ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে দুই শতাধিক লঞ্চ চলাচলের প্রস্তুতি নিয়েছে। একই সাথে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ঈদ বহরে যোগ দেওয়া মানামি ও অ্যাডভেঞ্চার-৫ এর সাথে আরও থাকবে বিলাসবহুল ও লিফটযুক্ত সুন্দরবন-১০, সুরভী-৯, কীর্তনখোলা-২, লিফটযুক্ত কীর্তনখোলা-১০, লিফটযুক্ত অ্যাডভেঞ্চার-৯, অ্যাডভেঞ্চার-১, পারাবত-১২, ফারহান-৮ ও টিপু-৭ সহ ২৩টি লঞ্চ। এসব লঞ্চে সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমিভিআইপি, সৌখিন ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে দুই হাজারেরও বেশি কেবিন রয়েছে। রমজান শুরুর পর থেকেই সাধারণ যাত্রী ও তাদের স্বজনরা এসব কেবিন পেতে লঞ্চের অফিসগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ওই সময় তাদের কাছ থেকে স্লিপ জমা রেখেছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে নির্ধারিত সময়ে তাদের নামে কোনও কেবিন থাকেনা বলে অভিযোগ করেছেন অসংখ্য যাত্রীরা। কেবিনের খাতায় নাম থাকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মালিক পক্ষের লোকজনের। এ কারণে প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে প্রভাবশালী ব্যক্তি অথবা লঞ্চ মালিক পক্ষের লোকজনের মাধ্যমে কেবিন নিতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। বাড়ি ফেরার নানা ঝক্কিঝামেলার সাথে যোগ হয় টিকিট পাওয়ার জন্য লবিংয়ের ঝক্কি। আর যাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় নেই তাদের ভরসা কালোবাজারের দালাল চক্র। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে টিকিট না পাওয়া গেলেও বরিশাল নদীবন্দরে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দিলেই দালালদের কাছে পাওয়া যায় কেবিনের টিকিট। অভিযোগের বিষয়ে সুন্দরবন নেভিগেশনের বরিশাল অফিসের ম্যানেজার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় কেবিন কম হওয়ায় কেউ কেউ কেবিনের টিকিট না পেয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমরা প্রকৃত যাত্রীদের হাতে টিকিট দিতে আগে থেকেই নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন জানান, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিনের টিকিট ছাড়া হয়েছে। পরে এসে টিকিট না পেয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ঈদে ঘরমুখো অতিরিক্ত যাত্রীর চাঁপ সামলাতে ঈদের তিন দিন আগে থেকে ডবল ট্রিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা দিতে আমাদের আন্তরিকতার কোনও কমতি থাকবে না। তিনি আরও বলেন, দালালদের মাধ্যমে লঞ্চের কেবিনের টিকিট বিক্রির অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সুনিদিষ্ট প্রমান পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ এবং শান্তিপূর্ণ করতে যথাযথ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু বলেন, সার্ভে সনদ এবং ফিটনেস নিয়েই এবারের ঈদে দিনে এবং রাতে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী পরিবহন করবে অত্যাধুনিক ২৩টি জাহাজ। ফিটনেস এবং সনদ ছাড়া কোনও নৌযান চলাচল করতে দেওয়া হবেনা। কেবিনের টিকিটের কালোবাজারির বিষয়ে তিনি বলেন, লঞ্চ মালিকদের ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালুর জন্য বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থা চালু হলে কালোবাজারি থাকবে না। সাধারণ যাত্রীরা সহজে কেবিন পাবেন। এবারের ঈদে বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিলাশবহুল লঞ্চ ছাড়াও ঢাকা-বরিশাল-মোড়েলগঞ্জ রুটে বিআইডব্লিউটিসি’র পাঁচটি স্টিমার ও জাহাজ যাত্রী পরিবহন করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে এবারই সর্বপ্রথম ঈদ যাত্রায় থাকছেনা ৯০ দশকের পুরোনো পিএস অস্ট্রিচ নামের স্টিমারটি। এরমধ্য থেকেই অস্ট্র্রিচের যাত্রীসেবার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি’র বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ। তিনি আরও জানান, পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিআইডব্লিউটিসি’র ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার অস্ট্রিচ ভাসমান রেস্তোরার জন্য ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী এটি যাত্রীসেবায় আর নেই।
×