ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন বেড়েই চলছে

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২ জুন ২০১৯

 মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন  বেড়েই চলছে

সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারায় আজ আমরা অবস্থান করছি আধুনিক সভ্যতায়। পৃথিবীকে এখন চিনি উন্নত বিশ্ব নামে। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করার ফলে মানুষের জীবন হয়েছে উন্নত। শিক্ষা অগ্রগতি এবং বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলে আমরা এখন হাতের মুঠোয় সারা পৃথিবী তালুবন্দি করছি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে আমাদের বাংলাদেশও। বর্তমান সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি চেষ্টা করছে আমাদের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পূর্ণ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দিতে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ প্রণয়ন করেছে। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশে যে কয়েকটি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সারা ফেলেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল ব্যাংকিং। এটি বাংলাদেশে একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা এবং যার কারণে আমাদের আর্থিক কার্যক্রম অনেক বেশি সচলায়তন হয়েছে। এ দেশের কোটি কোটি মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি উদ্যোগ ছিল যেন এ দেশের সব মানুষ ব্যাংকিং সেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য তারা দেশের মোবাইল অপারেটরদের সেবাকে কাজে লাগায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। এখন দেশের কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা গ্রহণ করছে। এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ব্যাপক অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেছি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথা যখন আমরা ভাবি, তখন আমরা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সেবার কথা ভাবি। মোবাইল আর্থিক সেবার চারটি পর্ব আছে। প্রথমটি হলো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো। দ্বিতীয়টি মোবাইল ইনস্যুরেন্স, মোবাইল ক্রেডিট ও মোবাইল সেভিং। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো ছাড়া অন্য সেবাগুলোর ব্যবহার বাংলাদেশে নেই। কিন্তু ভোক্তা, উৎপাদনকারী, ক্রেতা, বিক্রেতা, নাগরিক, সরকারি প্রতিষ্ঠান এমন অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল আর্থিক সেবা ফলপ্রসূ হতে পারে। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশের বেশি এজেন্টভিত্তিক লেনদেন হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অবস্থান প্রথম। উন্নত বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ২০১১ সালে আমাদের এ সেবা চালু হয়। তখন উদ্দেশ্য ছিল যারা ব্যাংকিং কার্যক্রম করে না সেসব মানুষকে কীভাবে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়। কিন্তু আজ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এত সম্প্রসারিত হয়েছে যে আন–ব্যাংক ও ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় যারা আছে, সবাই এ সেবা গ্রহণ করছে। মোবাইল ব্যাংকিং এখন একটি ব্যাপক জনপ্রিয় মাধ্যম। এর মাধ্যমে টাকা জমা করা যায়, ওঠানো যায়, বিভিন্ন প্রকার সেবার বিল পরিশোধ করা যায়। টেলিফোন ও মোবাইল অপারেটরদের বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এ সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।দেশে মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত টাকা প্রাপ্তি ও পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সাধারণ নারী-পুরুষ, মুটে-মজুর, ব্যবসায়ী, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সেবাদানকারী সংস্থা সবার অন্তর্ভুক্তিতে ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিষেবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এক বছরেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব বেড়েছে ৮৭ লাখ, যার মোট সংখ্যা প্রায় সাত কোটি। এ প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর। ২০১৮ সালে অর্থের হিসেবে লেনদেন হয়েছে তিন লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। দৈনিক লেনদেনের সংখ্যা ছয় মিলিয়নের ওপর। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মোবাইলভিত্তিক আর্থিক সেবা গ্রহণ করে। আর্থিক খাতের বিশ্নেষকদের পূর্বাভাস- এ প্রবৃদ্ধি বছরে ৩০ শতাংশের অধিক হারে চলমান থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল মার্কেট ইনসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে মোবাইল আর্থিক সেবার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার, যা হবে বর্তমান লেনদেনের আড়াই গুণ। মোবাইল ব্যাংকিং এখন শুধু আর টাকা জমা, প্রেরণ ও উত্তোলনে সীমাবদ্ধ নেই। ই-বাণিজ্য, বিল পরিশোধ, সরকারী চালানে অর্থ জমা, প্রবাসী আয় বিতরণ, সরকারী ভাতা, উপবৃত্তির অর্থ পরিশোধ, রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া শোধ-সবই হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। মোবাইল ব্যাংকিং যুক্ত হচ্ছে ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে, এটিএমের সঙ্গে। ফলে সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হচ্ছে আর্থিক লেনদেনে। মোবাইল ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে, শহর থেকে গ্রামে টাকার প্রবাহ সৃষ্টি করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দিচ্ছে, তাৎক্ষণিক অর্থের চাহিদা পূরণ করছে, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। সমযের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়ে যাওয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেন বেড়েই চলেছে। মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুত বিল পরিশোধ, টাকার আদান-প্রদান, বীমা প্রিমিয়াম জমাসহ নানামুখী ব্যবহারের সুযোগ থাকায় বেড়েই চলেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাত্র এক মাসেই (এপ্রিল) ৩৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে যথাক্রমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৬২৬ কোটি, ৩১ হাজার ৫১৩ কোটি, ৩৪ হাজার ৬৭৮ কোটি ও ৩৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র দুই বছর আগেও ২৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাসিক লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এপ্রিলভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৮৩ লাখ। যা আগের মাসে (মার্চ) ছিল ৬ কোটি ৭৫ লাখ। তবে নিবন্ধিত গ্রাহকদের মধ্যে অনেক হিসাবই সক্রিয় নেই। এপ্রিল শেষে প্রায় ৩৩ লাখ সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা কমে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে মোবাইলের সক্রিয় গ্রাহক রয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ। এক মাস আগেও এর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২৪ লাখ। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন গ্রাহকরা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৩ জন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো হলো, রেমিটেন্স পাঠানো, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, একজনের এ্যাকাউন্ট থেকে অন্যজনের ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম কেনা, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট পেমেন্ট, সরকারী প্রতিষ্ঠানে বেতন পরিশোধ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা, বীমা প্রিমিয়াম, ডিপিএস দেয়া ইত্যাদি।
×