ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুনাজ আহমেদ নূর

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখন সময়ের দাবি

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১১ জুন ২০১৯

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখন সময়ের দাবি

সম্প্রতি শেষ হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফল প্রকাশের পর বিগত বছরগুলোর মতো এবারও শিক্ষার্থীদের অবতীর্ণ হতে হবে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিযুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের এই ভর্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এই আগ্রহের মূল কারণ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি, অর্থ, শ্রম ও সময়ের অপচয়। এই সমস্যার সমাধানে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আলোচনা শুরু হয়। আলোচনার ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপাচার্যদের সভায় বেশির ভাগ উপাচার্য সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছিলেন। এরপর এ নিয়ে আরও কয়েক দফা আলোচনা হয়। কিন্তু ফল এখন পর্যন্ত শূন্য। কারণ অনেকে মনে করেন এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বাতন্ত্র্য খর্ব এবং নিজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাতন্ত্র্য এবং নিজস্ব আয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ কর্তৃক গঠিত একটি সাব কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলাম। আমরা এটাকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বলছি, কিন্তু গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা বলছি না। আমরা এটাকে বলতে চাই দক্ষতা নিরূপণ পরীক্ষার, SAT (Scholastic Aptitude Test), দিকে যাওয়ার প্রথম ধাপ। দক্ষতা নিরূপণ পরীক্ষার দিকে যাওয়ার প্রথম ধাপ বলার কারণ, উন্নত বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হতে কোন ধরনের পরীক্ষা দিতে হয় না। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে কোন পরীক্ষা নেয় না। তাহলে তারা কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে? উত্তর হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একজন শিক্ষার্থীর এ লেভেল, ও লেভেল এবং SAT এর ফলের ওপর ভিত্তি করে স্নাতক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে। আর যদি শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ের হয়, তাহলে GRE (Graduate Record Examinations) ও GMAT (Graduate Management Admission Test) এর মাধ্যমে। এ রকম আরও আলাদা আলাদা অনেক পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এই পরীক্ষাগুলো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে নেয়া হয়। এখানে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা সমন্বিতভাবে অংশগ্রহণ করে। কারণ ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানসিকতা গ্লোবাল। আমরা এখনও গ্লোবাল মানসিকতায় আসতে পারিনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি কোন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায়, তাহলে কীভাবে ভর্তি হবে? সে কি আমাদের এখানে এসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন ইউনিটে পরীক্ষা দেবে? অথবা তার জন্য কি আলাদা একটি পদ্ধতি থাকবে? যদি তা সম্ভব না হয়, তবে সবার জন্য আমাদের এখানে একটি দক্ষতা নিরূপণ পরীক্ষা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সেই মানসিকতায় আমরা এখনও যেতে পারিনি। তবে পৃথিবীব্যাপী ঝঅঞ, এজঊ, এগঅঞ দিয়ে একজন শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাই আমাদেরও ধীরে ধীরে সেদিকে যেতে হবে। তাই এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাকে সেই দিকে যাওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এখন আসি আমাদের দেশে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে হলে তাকে কি কি করতে হয়? আমাদের এখানে একজন শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে তার এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে আসা বিষয়গুলোর ওপর এমসিকিউ, লিখিত অথবা উভয় পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। তবে শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন ইউনিটে পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে যে শিক্ষার্থী প্রকৌশল শাখায় ভর্তি হবে, তাকে কিন্তু প্রকৌশল এর কোন বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না। তাকে পরীক্ষা দিতে হয় তার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে আসা বিষয়গুলোর ওপর। তাহলে আমরা যদি ভবিষ্যতে দক্ষতা নিরূপণ পরীক্ষার দিকে যেতে চাই, তাহলে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমরা সমন্বিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে আসা বিষয়গুলোর ওপরে ভর্তি পরীক্ষাটা নিতে পারি। তারপর আমরা ধীরে ধীরে SAT, GRE, GMAT এর মতো দক্ষতা নিরূপণ পরীক্ষার দিকে চলে যেতে পারি। কীভাবে সমন্বিত পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে? সমন্বিত পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় দুটি কমিটি থাকবে- একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটি বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় প্রতিটি বিষয়ের আলাদা আলাদা নম্বর-পত্র দিয়ে দেবে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে কত নম্বর পেল তার একটি তালিকা দেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি সে তালিকা দেখে নিজেদের স্বতন্ত্র শর্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনপত্র আহ্বান করবে এবং তারা তাদের প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক, খ, গ, ঘ এবং চ শাখায় এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এখান থেকে শাখা কমিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় তিনটি শাখায় এমসিকিউ, লিখিত অথবা উভয় পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে। একটি শাখায় বিজ্ঞান, আরেকটিতে বাণিজ্য এবং অন্যটিতে মানবিক বিভাগ থাকবে। কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে একজন শিক্ষার্থী কোন্ বিষয়ে কত নম্বর পেল তার একটি তালিকা দেবে। এখানে শিক্ষার্থী ঠিক করবে, সে কোন কোন বিষয়গুলোতে পরীক্ষা দেবে। কারণ একজন শিক্ষার্থী সবগুলো বিষয়ে পরীক্ষা নাও দিতে পারে। যেমন বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, বাণিজ্য বিভাগে বাংলা, ইংরেজী, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা এবং মানবিক বিভাগে অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজকল্যাণ, পৌরনীতিসহ আরও অনেক বিষয় থাকে। একজন শিক্ষার্থীকে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুযায়ী ঠিক করতে হবে, সে কোন কোন বিষয়ে পরীক্ষা দেবে। যেমন বুয়েট যদি তাদের ভর্তি শর্ত এভাবে ঠিক করে যে, তাদের ওখানে ভর্তি হতে একজন শিক্ষার্থীর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থ, গণিত, রসায়ন এবং ইংরেজীতে ৯০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। তাহলে যে শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তি হতে চায় সে পদার্থ, গণিত, রসায়ন এবং ইংরেজী বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে বুয়েটে ভর্তির আবেদনের যোগ্যতা অর্জন করবে। তার অন্য কোন বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন হবে না। আবার যদি কোন শিক্ষার্থী দেশের ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আবেদনের যোগ্যতা অর্জন করতে চায়, তাহলে তাকে হয়ত অনেক বেশি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। সে তার যোগ্যতার ভিত্তিতে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করবে। কারণ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকবে আলাদা আলাদা শর্ত। তবে পরীক্ষা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং তিনটি শাখায় তিন দিনের পরীক্ষা হবে। আর কোন পরীক্ষা হবে না। কেন আমরা এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেব? এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, অর্থ, শ্রম ও সময়ের অপচয় অনেকটা কমে যাবে। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫টি এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থায় এই ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন একটিতে যদি একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে হয়, তাহলে তাকে ৪৫ জায়গায় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এই ৪৫ জায়গায় যেতে তাকে শারীরিকভাবেই যেতে হচ্ছে। নানাভাবে তাকে পরিশ্রম ও টাকা পয়সা ব্যয় করতে হচ্ছে। বাস্তবে এটিও প্রয়োগযোগ্য হচ্ছে না। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে একই দিনের একই সময়ে দুই বা তার অধিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষার্থী বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। একজন শিক্ষার্থী হয়ত সর্বোচ্চ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারছে। যখন প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী প্রথম সারির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন ওই ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমন্বিত পদ্ধতিতে যদি পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নিতে পারবে। সেখান থেকে সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। এই পদ্ধতিতে শুধু সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, চাইলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও অংশগ্রহণ করতে পারে। তাহলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। এই পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী হয়ত দুবার আবেদন ফি দেবে। প্রথমবার কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে জন্য। দ্বিতীয়বার সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক নম্বর পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ও ভর্তির জন্য। বর্তমানে প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী যদি ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে, তাহলে ১০ বার ফি দিতে হয়। ১০ জায়গায় যেতে হয়। সেখানেও একটা অর্থ খরচ করতে হয়। আর ভোগান্তি তো আছেই। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে একজন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ও যাতায়াতে খরচ প্রায় ৯৬০০০ টাকা। সমন্বিত পদ্ধতিতে সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকার বেশি হয়ত খরচ হবে না। কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে হয়ত প্রতি বিষয়ে ৫০ টাকা দিতে হতে পারে। একজন শিক্ষার্থী যদি ৬টি বিষয়ে পরীক্ষা দেয় তাহলে তাকে ৩০০ টাকা, ৫টি বিষয়ে পরীক্ষা দিলে তাকে ২৫০ টাকা, সকল বিষয়ে পরীক্ষা দিলে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা বা নির্দিষ্ট একটা ফি দিতে হতে পারে এবং সমন্বিত পরীক্ষার দেয়ার জন্য যাতায়াতে ১০০০ টাকা খরচ হতে পারে। সমন্বিত পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশের ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া যেতে পারে। তাহলে পরীক্ষার্থীরা তাদের নিজ বিভাগের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে। যেহেতু সকল বিভাগেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তাই একজন পরীক্ষার্থী নিজ বিভাগ থেকেই স্বল্প টাকা ব্যয়ে, স্বল্প শ্রমে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। যেমন সিলেটের একজন শিক্ষার্থী যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও চায়, সে সিলেটে বসেই পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে। অথবা তার পছন্দের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শর্ত অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সমন্বিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভর্তি হতে পারবে। এখানে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে হলে ৪৫ জায়গায় পরীক্ষা নিতে হবে। সেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার একটি আশঙ্কা থাকে। বিষয়টি একেবারেই অমূলক নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারাই যেহেতু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পরিচালিত হবে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সমস্যা সমাধান করা খুব কঠিন হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া শিক্ষামন্ত্রী চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়াই সম্পন্ন করেছেন। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা থেকে অনেক বড় পরীক্ষা। শিক্ষামন্ত্রীর মতো আন্তরিক হলে উপাচার্যরাও প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়াই সমন্বিত পদ্ধতিতে কোন ধরনের ত্রুটি ছাড়াই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য কীভাবে রক্ষা হবে? আগেই বলেছি, আমাদের এখানে বর্তমান প্রচলিত নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে হলে তার এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে আসা বিষয়গুলোর ওপর এমসিকিউ, লিখিত অথবা উভয় পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেয়ার পর প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বতন্ত্র মেধাতালিকা তৈরি করে। সেই মেধাতালিকা অনুযায়ী তারা তাদের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। এখন অনেকের প্রশ্ন হচ্ছে, যদি কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীনভাবে শিক্ষার্থী নিতে পারবে না এবং তারা তাদের পছন্দের শিক্ষার্থী পাবে না। এরূপ আশঙ্কা যাতে না থাকে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাতন্ত্র্য রক্ষার্থে কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু বিষয়ভিত্তিক সমন্বিত পরীক্ষা নিয়ে একটি ফল প্রস্তুত করা হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের এসএসসি, এইচএসসি এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক ফলের ভিত্তিতে তাদের শর্ত অনুসারে শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনপত্র আহ্বান করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে তাদের শর্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। যেমন কোন বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শর্ত দিয়ে দিতে পারে যে, তাদের এখানে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীর এসএসসি, এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ চার করে থাকতে হবে এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজীর প্রতি বিষয়ে ন্যূনতম ৫০ নম্বর থাকতে হবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এখতিয়ার। এখানে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একেক শর্ত থাকতে পারে। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে। যেমনটা ঝঅঞ এ হয়ে থাকে। র‌্যাংকিংয়ের ওপরের দিকে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের ২৩০০-এর ওপরে নম্বর থাকতে হয়। এভাবে র‌্যাংকিং- ভেদে নিচের দিকে নামতে থাকে। আমাদের এখানেও একইভাবে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুসরণ করে তার যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ফল প্রকাশের পর ভর্তির জন্য কোন শিক্ষার্থী হয়ত ১০টিতে, কোন শিক্ষার্থী ২০টিতে আবার কোন শিক্ষার্থী ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে পারবে। তবে মনে রাখা আবশ্যক যে, এই পর্যায়ে নতুন করে কোন ভর্তি পরীক্ষা হবে না। এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের উৎস বর্তমান প্রচলিত নিয়মের মতোই থাকবে। আগেই বলেছি, কেন্দ্র থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক ফল দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনপত্র আহ্বান করবে, যা বর্তমান প্রচলিত নিয়মেও তারা করে আসছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুসরণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আবেদন করবে। এই আবেদনের ফি হবে ন্যূনতম (পরিচালনা খরচ) এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিলে জমা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল আপত্তি তাদের স্বাতন্ত্র্য এবং নিজস্ব অর্থায়ন এই দুটি যদি ঠিক থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপত্তির অন্য কোন কারণ থাকার কথা নয়। আমরা কী চাই না যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্লোবাল হোক? যেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি চাচ্ছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে সমন্বিত পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকার কথা না। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদেরও বেশিরভাগ উপাচার্য চাচ্ছেন, সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা হোক। শুধুমাত্র এই দুটি আপত্তির কারণেই কি এই পদ্ধতির বাস্তবায়ন হবে না? যদি এখানে আরও কোন বিষয় যুক্ত করার প্রয়োজন হয়, তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তার যুক্তি-যুক্ত সমাধান বের করা কঠিন হবে বলে মনে হয় না। শুধু উপাচার্য়দের আন্তরিকতা থাকলেই এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী যোগদান করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনেও এসেছে। নতুন চেয়ারম্যান। তারাও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সমন্বিত পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন আমাদের উচিত, অন্তত শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
×