ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনুর আক্তার

লাল দুর্গে নাদালই রাজা

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ১২ জুন ২০১৯

লাল দুর্গে নাদালই রাজা

ফ্রেঞ্চ ওপেনে দাপট ধরে রাখলেন রাফায়েল নাদাল। ডোমিনিক থিয়েমকে হারিয়ে নিজের শোকেসেই তুললেন প্রিয় শিরোপা। রবিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্পেনের এই টেনিস তারকা ৬-৩, ৭-৫, ৬-১ এবং ৬-১ গেমে ডোমিনিক থিয়েমকে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ১২তম শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন রাফায়েল নাদাল। বিশ্বের দুই নম্বর তারকা নাদাল প্যারিসে তার জয়ের রেকর্ড ৯৩-এ উন্নীত করেছেন। এর আগে তিনি ২০০৫-২০০৮, ২০১০-১০১৪, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এই শিরোপা জয় করেছিলেন। রোঁলা গ্যাঁরোর এই জয়ের মাধ্যমে গত ১০টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা বিশ্ব টেনিসের এই মুহূর্তের ‘বিগ থ্রি’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল। এই নিয়ে ক্যারিয়ারের ৮২তম শিরোপা ও ৯৫০তম ম্যাচ জয় করলেন নাদাল। লাল মাটির অবিসংবাদী স¤্রাট রাফায়েল নাদাল। আর ডোমিনিক থিয়েমকে বলা হচ্ছে রাজপুত্র। ফলে তাদের টক্কর যে মহাকাব্যিক হতে চলেছে, তা জানাই ছিল। বিশেষ করে রোঁলা গ্যাঁরোয় যখন আগেরবারের এ্যাকশন রিপ্লে হচ্ছে! কিন্তু ম্যাচে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। যতই এগোলো, ততই ক্লে-কোর্টের স¤্রাট বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি সেরার সেরা। জয়ের পরই মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ে দিলেন শূন্যে। গোটা গ্যালারি তখন উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করে রাফায়েল নাদালকে। ৩৩ বছরের যুবকের মুখে তখন আবেগভরা পরিচিত সেই হাসি। ডোমিনিক থিয়েমকে হারিয়ে প্রেমের শহরে এক ডজন গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের গল্প সম্পন্ন করলেন রাফায়েল নাদাল। তার আগে কোন খেলোয়াড় একটা গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি এতবার জিততে পারেননি। রবিবার প্রথম সেট নাদাল পকেটে পুরে ফেলেন ৬-৩ গেমে। কিন্তু দ্বিতীয় সেটেই ছন্দে ফিরেন থিয়েম। ৭-৫ গেমে দ্বিতীয় সেট জিতে নেন তিনি। তৃতীয় সেটে অবশ্য তেমন লড়াই হলো না। সহজেই নাদাল ৬-১ পকেটে পুরে ফেলেন। চতুর্থ সেটে যেন তৃতীয় সেটের এ্যাকশন রিপ্লে। তিন ঘণ্টার কিছু সময় বেশি ধরে চলল ম্যাচ। আর তাতেই রোঁলা গ্যাঁরোর ১২তম শিরোপা নিশ্চিত। ফরাসী ওপেনে এক ডজন ট্রফির সঙ্গে মোট ১৮টা গ্র্যান্ডস্লাম হলো নাদালের। কিংবদন্তি রজার ফেদেরারের ২০ গ্র্যান্ডস্লামের থেকে মাত্র আর দুই ধাপ দূরে অবস্থান নাদালের। এই তালিকার তৃতীয় স্থানে নোভাক জোকোভিচ। বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান তারকা জোকোভিচের গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের সংখ্যা ১৫। তবে ক্যারিয়ারে ১২টি ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পথটা মোটেও সহজ ছিল না নাদালের। এই পথে বাঘা বাঘা তারকাকে হারাতে হয়েছে তার। সেমিফাইনালেও যেমন প্রতিপক্ষ ছিল রজার ফেদেরার। কিন্তু স্প্যানিশ তারকার কাছে পেরে ওঠেননি ফেদেরার। আর নাদালের কাছে হেরেই ফেদেরার বলেছিলেন, ‘ক্লে-কোর্টে কিছু পেতে গেলে সেটা নাদালকে হারিয়েই পেতে হবে। কথাটা যে কতটা সত্যি, তা আবারও প্রমাণিত হলো। কেননা, আগেরবারও থিয়েম রোঁলা গ্যাঁরোয় নাদালের বিপক্ষে খেলেছিলেন। কিন্তু তার সুবিধা নিতে ব্যর্থ হন থিয়েম। তবে জয়ের পর প্রতিপক্ষ থিয়েমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নাদাল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই ওকে আমি অভিনন্দন জানাব দুর্দান্ত খেলার জন্য। আমি দুঃখিত, কারণ আজকের জয়টা হয়ত ওরই প্রাপ্য ছিল। ও যে একাগ্রতা এবং প্যাশন নিয়ে টেনিসটা খেলে, তা সত্যিই বিরল। অসম্ভব পরিশ্রমী। ভবিষ্যতের জন্য ওকে শুভকামনা জানাই।’ নিজের অনুভূতি প্রসঙ্গে নাদাল বলেন, ‘আমি কী অর্জন করলাম এবং আমার কী মনে হচ্ছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। এটা সত্যিই একটা স্বপ্ন। যখন প্রথমবার ২০০৫ সালে খেলি, তখন ভাবিনি ২০১৯ পর্যন্ত খেলতে পারব। অবিশ্বাস্য একটা যাত্রা। আমার কাছে যা খুবই বিশেষ।’ তবে ফ্রেঞ্চ ওপেনের টানা দুই ফাইনালে হেরে চরম হতাশ থিয়েম। তবে হাল ছাড়তে নারাজ এই তারকা খেলোয়াড়। ফ্রেঞ্চ ওপেনের জন্য আবারও চেষ্টার কথা জানান তিনি। এ বিষয়ে থিয়েম বলেন, ‘ম্যাচটা সত্যিই কঠিন ছিল। গত দুই সপ্তাহে আমি সবকিছু দেয়ার চেষ্টা করেছি। রাফা অনেক ভাল খেলেছে। সে একজন অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন ও টেনিসের কিংবদন্তি। ১২ বার শিরোপা জিততে পারায় তার জন্য আমি দারুণ আনন্দিত। তবে আবারও আমি এই শিরোপা জন্য চেষ্টা করব।’ এদিকে, ফ্রেঞ্চ ওপেনের নারী এককের ফাইনালে চেক রিপাবলিকের ভন্দ্রোশোভাকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেন অস্ট্রেলিয়ার এ্যাশলি বার্টি। গতবারের রানী হ্যালেপকে হটিয়ে নতুন রানীর খেতাব জিতেছেন একসময় প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলোয়াড় বার্টি। এটি তার প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা। এ্যাশলি বার্টি অস্ট্রেলিয়ার নারী বিগ ব্যাশ ব্রিসবেন হিটের হয়ে ২০১৪ সালে চুক্তি করেন। তবে ২ বছর ক্রিকেট খেলে ২০১৬ সালে আবারও টেনিসে মন দেন এই তরুণী। আর ২০১৯ সালেই বাজিমাত করলেন বার্টি। একেই বলে রূপ কথার মতো প্রত্যাবর্তন। ফাইনালে চেক রিপাবলিকের টেনিস তারকা ভন্দ্রোশোভা বার্টির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। মাত্র এক ঘণ্টা দশ মিনিটেই সরাসরি সেটে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয় করেছেন বার্টি। এমন অপ্রত্যাশিত গ্র্যান্ডস্লাম জেতার পর ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। বার্টি বলেন, আমি নিজেই বিশ^াস করতে পারছি না। এক কথায় ভাষাহীন, বলতে গেলে দুটি সপ্তাহ এমনভাবে গেছে যার ব্যাখ্যা নেই। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০১১ সালে ইউএস ওপেন জয় করেছিলেন সামান্থা স্টোসার। বার্টির সুবাদে অজিদের গ্র্যান্ডস্লামের জন্য প্রায় ৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচল। ওদিকে প্রায় ৪৬ বছর পর বার্টির সুবাদে আবারও প্যারিসের রোঁলা গ্যাঁরোতে উৎসব করার সুযোগ পেলেন অস্ট্রেলিয়ানরা। ১৯৭৩ সালে মার্গারেট কোর্ট নারী এককে অজিদের হয়ে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয় করেছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালে পেশাদার টেনিসের চাপ আর র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্রমাবনতিতে বিমর্ষ হয়ে ইউএস ওপেনের টেনিস থেকে নির্বাসনে যান বার্টি। আর এই ফাঁকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই নারী ক্রিকেট খেলেছেন। শুধু তাই নয়, মেয়েদের বিগ ব্যাশে ব্রিসবেন হিটের হয়ে অংশ নিয়ে ৯টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচও খেলেছেন। কিন্তু তেমন আহামরি পারফরমেন্স না দেখাতে পারলেও ক্রিকেটের প্রতি তার ভাল লাগা কমেনি।
×