ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বলে উঠতে মরিয়া তামিম

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ১২ জুন ২০১৯

জ্বলে উঠতে মরিয়া তামিম

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচের একটিতে জয় আর বাকি দুটিতে হেরেছে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন সফল। এরপর নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটে কোন রান ছিল না। সাকিব ছাড়া মোটামুটি সবাই ছিলেন ব্যর্থ। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ ছিলেন বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবালও। তিন ম্যাচে তামিম আউট হয়েছেন মাত্র ১৬, ২৪ ও ১৯ রান করে! বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যানের বেশ ভোগাচ্ছে শট বল। ‘বিশ্বকাপ বড় একটা মঞ্চ। যেখানে সবাই পারফর্ম করতে চায়, সবাই চায় ভাল করতে। আমারও অনেক প্রত্যাশা আছে যে আমি ভাল করতে চাই। অনেক সময় অনেক কিছুই চেষ্টা করে হয় না। আমাদের কাজ হলো চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, কোন না কোন সময় তো হবে। আমার ফোকাস এখন পুরোপুরি ট্রেনিংয়ের দিকে। যে ভুলগুলো আগের ম্যাচে করছি, সেগুলো যতটুকু কম করা আর ভাল শুরু পাওয়ার দিকে নজর দিচ্ছি। দেখা যাক হয় ইনশাল্লাহ।’ বলেন তামিম। শুধু তামিম নয় দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটেও নেই রান। তবে তামিম মনে করেন সবাই রানে ফিরবেন। তিনি বলেন, ‘আমি যদি ভাল শুরু করতে পারি বা অন্য যারা আছে যাদের প্রতি প্রত্যাশা রয়েছে তারা ভাল শুরু করতে পারলে দলের জন্য ভাল। এটা বিশ্বকাপ বলেই ধৈর্য কম হয়ে যায়। ধৈর্য ধরতে হবে শুধু আমার প্রতি না দলের বাকি যারা আছে সবার প্রতি।’ এবারের বিশ্বকাপে তামিম এসেছেন সবচেয়ে পরিণত অবস্থায়। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গত চার বছরে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু বিশ্বকাপে এসেই যেন পাল্টে গেছে সবকিছু। রান পাচ্ছেন না, তার চেয়েও বড় কথা, উইকেটে থেকে দলকে ভরসাও দিতে পারছেন না। প্রথম তিন ম্যাচের তামিমের ব্যাটিং দেখে হতাশ সবাই। কিন্তু তামিমের ব্যাট হাসলে বদলে যেতে পারে দলের ব্যাটিংয়ের চেহারাও, বললেন বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহুমদ। তবে তিনি উন্মুখ হায়ে আছেন তামিমের ব্যাটে রান দেখতে। সুজনের অনুভব এবং মূল্যায়ন, আমাদের দলের জন্য তামিম খুব কার্যকর ক্রিকেটার। তার ভাল খেলার ওপর আমাদের টপ অর্ডারের ব্যাটিংই শুধু নয়, গোটা ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের জ্বলে ওঠা নির্ভর করে। তামিমের ব্যাটে রান আসা মানে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের জন্য অন্যরকম স্বস্তি। ভাল খেলার অনুপ্রেরণা। তার ব্যাটিংয়ের ওপর গোটা দলের ব্যাটিং নির্ভর করে। সুজন বলেন, ‘আমি মুখিয়ে আছি তামিমের কাছ থেকে ভাল খেলা দেখতে। তামিম রানে ফিরলেই দেখবেন আমাদের ব্যাটিংয়ের চেহার পাল্টে গেছে। তখন দেখবেন গোটা ব্যাটিং লাইন আরও উজ্জ্বল হচ্ছে।’ তবে দলের অন্যতম অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট টিম ম্যানেজার। তামিম সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুজন একটি তথ্য দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘আসলে ভাল করতে হলে ভাগ্যর আনুকুল্য লাগে। তামিম এবারের বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে ভাগ্যের সে আনুকুল্য পায়নি। যদি পেত, তাহলে দেখতেন কি খেলাটাই না খেলত। কারণ, তামিম যে নেটে দুর্দান্ত খেলছে! বলে বোঝাতে পারব না, নেটে তার ব্যাটিং কত ভাল লাগছে। গত কদিন তামিম নেটে ছিল ব্রিলিয়ান্ট, আউটস্ট্যান্ডিং; কিন্তু মাঠে গিয়ে সেই ব্যাটিংটা করতে পারছে না। আমার বিশ্বাস তামিম রান করলেই ব্যাটিংয়ে আর কোন সমস্যা থাকবে না। ২০০৭ বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে শুরু। ১৮ বছর বয়সী তামিম উদ্ধত সব শটে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেছিলেন একের পর এক বল। এরপর আরও তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন তামিম। কিন্তু প্রথম ম্যাচের সেই ঝলক কেন যেন আর দেখা যায়নি তামিমের ব্যাটে। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে ছিলেন তামিম। ওয়ানডেতে দলের মূল রান ভরসা। ২০১৭ সাল থেকে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ৬০.৬৪ গড়ে ১৫১৬ রান তাঁর। ৪টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ১২টি পঞ্চাশ। ৩০ ইনিংসের ১৬টিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস যিনি খেলেছেন বিশ্বকাপে তো তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে হয়েছে উল্টো। তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেছেন। ৫৯ রান করেছেন ৬১ স্ট্রাইকরেটে। দলকে ভাল শুরু এনে দেয়ার দায়িত্বে থাকা তামিম তিন ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার। হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। চিন্তার ব্যাপার হলো, এটা নতুন কিছু নয়। চার বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৪ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমেছেন তামিম। এই ২৪ ইনিংসে তামিমের ব্যাট থেকে আসেনি কোন সেঞ্চুরি, পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসই এসেছে মাত্র ৩টি। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে তারুণ্যের জয়গান গাওয়া সেই ৫১ রানের ইনিংসের পর ফিফটি করেছেন মাত্র দুটি। ২০১১ বিশ্বকাপে এই ভারতের বিপক্ষেই মিরপুরে করেছিলেন ৭০, আর গত বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করে জেতা ম্যাচে ৯৫। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স আর সামগ্রিক ওয়ানডের পারফরম্যান্সেও কী অদ্ভুত বৈসাদৃশ্য! একদিনের ক্রিকেটে যাঁর ব্যাটিং গড় ৩৬.০৮, বিশ্বকাপে সেটি কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২২.৫৮। স্ট্রাইক রেটের অবস্থাও ভাল নয়। ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট যেখানে ৭৭.৯৭, বিশ্বকাপে সেটি আরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭২.২৬ এ। প্রায় সময়ই অতি সাবধানী ব্যাটিং করতে গিয়ে ধরা দিচ্ছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়কের পাতা ফাঁদে। গতকালের ম্যাচেই যেমন ৩৮৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা করলেন খুব ধীরে। শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো উইকেট ছেড়ে তেড়ে আসতে গিয়েই আউট হলেন। বিশ্বকাপে এটি যেন তামিমের সামগ্রিক পারফরম্যান্সেরই প্রতীকী চিত্র। শুরু করেছেন অনেকবার, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ থেকে ৪০ রানের মধ্যে আউট হয়েছেন ১০ বার। ১০ পেরনোর আগেও আউট হয়েছেন ১০ বার। এর মধ্যে ৩ বার ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন রানের খাতা না খুলেই। এবার তামিম জ্বলে উঠুক, জ্বলে উঠুক বাংলাদেশ, ভক্তদের এটাই চাওয়া।
×