ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রি ম্যাজিক্যাল ফিগারের সেঞ্চুরিয়ানরা

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ১২ জুন ২০১৯

ত্রি ম্যাজিক্যাল ফিগারের সেঞ্চুরিয়ানরা

* জো রুট ১০৭ (৩ জুন, ২০১৯) ॥ বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ম্যাচে এসে প্রথম শতকের দেখা পান ক্রিকেটপ্রেমীরা। ক্রিকেটের জন্মদাতা এবং এবারের আসরের আয়োজক যারা, সেই ইংল্যান্ডই করবে প্রথম কাক্সিক্ষত সেঞ্চুরি, বিধাতা হয়ত এটাই চেয়েছিলেন। নটিংহামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ত্রি মেজিক্যাল ফিগারের গর্বিত মালিক জো রুট। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমে ১০৪ বলে ১০৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। ১০টি বাউন্ডারি হাঁকানোর পাশাপাশি ছক্কার মারও মারেন ১টি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, এমন ইনিংস খেলার পরও ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে যায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড! ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তানের ৮/৩৪৮ রানের জবাবে ৯/৩৩৪ রান করে মাত্র ১৪ রানে হার মানে ইংল্যান্ড। ফলে বিফলে যায় রুটের সেঞ্চুরিটি। * জস বাটলার ১০৩ (৩ জুন, ২০১৯) ॥ মজার ব্যাপার, দ্বাদশ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি হয় প্রথম সেঞ্চুরিটির খানিক বাদেই, ওই একই ম্যাচে! ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক জস বাটলার হন দ্বিতীয় শতকধারী। জো রেুটে চেয়েও আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। ছয় নম্বরে নেমে মাত্র ৭৬ বলে ১৩৫.৫২ স্ট্রাইক রেটে সংগ্রহ করেন ১০৩ রান। যাতে ছিল ৯টি চার এবং ২টি ছয়ের মার। এর আগের বিশ্বকাপগুলোতে অনেকবারই এক ইনিংসে এক দেশের দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু সেই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানদের দল হারেনি। এবারই তার ব্যত্যয় ঘটল। যার প্রথম নজির স্থাপন করলেন রুট-বাটলার জুটি! * রোহিত শর্মা ১২২* (৫ জুন, ২০১৯) ॥ দুই ম্যাচ পরেই তৃতীয় সেঞ্চুরি। যার মালিক ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা। ১২২ রানে নট আউট থাকেন তিনি। সাউদাম্পটনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৩ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কার সাহায্যে এই রান সংগ্রহ করেন তিনি। তবে বল খেলেন রানের চেয়ে একটু বেশি (১৪৪ বল)। ফলে স্ট্রাইক রেটও ছিল কম (৮৪.৭২)। কিন্তু তাতে কোন সমস্যা হয়নি। কেননা ভারত যে খেলায় জিতেছে! প্রোটিয়াদের ৯/২২৭ রানের জবাবে ৪৭.৩ ওভারে ৪/২৩০ রান করে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে ফেলে টিম ইন্ডিয়া। অনবদ্য শতক হাঁকানো রোহিতই হন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়। * জেসন রয় ১৫৩ (৮ জুন, ২০১৯) ॥ দ্বাদশ আসরের দ্বাদশ ম্যাচ। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। খেলা শুরুর আগে থেকেই রব উঠে গিয়েছিল ‘ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক জয়’-এর ব্যাপারটা। কিন্তু শনিবার যেন ‘শনির দশা’য় পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। কোথায় ইংল্যান্ডকে হ্যাটট্রিক-বধ করবে, তা না... উল্টো নিজেরাই বধ হয় বাংলাদেশ! হেরে যায় ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে। কার্ডিফে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে রানের পাহাড় গড়ে তোলে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে করে ৬/৩৮৬ রান। জবাবে বাংলাদেশ করে ৪৮.৫ ওভারে ১০/২৮০ রান। ওয়ানডেতে ২১ বারের মোকাবেলায় এ নিয়ে বাংলাদেশকে ১৭ বারই হারালো ইংল্যান্ড। বাকি ৪ বার জিতেছে বাংলাদেশ। আর বিশ্বকাপের ৪ ম্যাচে ২ বার জিতেও ২-২ এ সমতা নিয়ে এলো ইংল্যান্ড। আর এই সমতায় নিয়ে আসার পেছনে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি জেসন রয়। ইংলিশ এই ওপেনার ম্যাচে হাঁকান ১২১ বলে ১৫৩ রানের বিশাল এক মনোমুগ্ধকর সেঞ্চুরি (৪-১৪, ৬-৫)। অমন উদ্ভাসিত নৈপুণ্যের পর ম্যাচসেরা হিসেবে তার নাম ঘোষণা না করে কোন উপায় ছিল না আয়োজকদের! * সাকিব আল হাসান ১২১ (৮ জুন, ২০১৯) ॥ ওই ম্যাচে না জিতলেও জেসন রয়ের সেঞ্চুরির জবাব ঠিকই দিয়েছিল বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে, তিনি সাকিব আল হাসান। ম্যাাচ ৫৩ বলে ফিফটি করেন তিনি। চলমান বিশ্বকাপে এটা তার হ্যাটট্রিক ফিফটি। আর সর্বশেষ ছয়টি ওয়ানডেতে পাঁচটিতেই ফিফটি! বোঝাই যাচ্ছে তুমুল ফর্মে আছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। কি হলে কি হবে, শনিবার তার এই অনবদ্য নৈপুণ্যও তো জেতাতে পারেনি লাল-সবুজ বাহিনীকে! ৯৫ বলে জোফরা আর্চারের বলে অফ ড্রাইভ মেরে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। মজার ব্যাপার, সাকিব শতক পূরণ করেন মাহমুদুল্লাহর চোখের সামনে, যে মাহমুদুল্লাহ গত ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা দুটি সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের একমাত্র ও তখন পর্যন্ত প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন। শনিবার তার পাশেই নাম লেখালেন সাকিব। বিশ্বকাপে এটা সাকিবের প্রথম, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম এবং ওয়ানডেতে অষ্টম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত বেন স্টোকসের স্লোয়ার ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান তিনি। যদিও স্টোকসের ওই ওভারেই এক বল আগেই ‘জীবন’ পেয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট তার নেয়া শটের ক্যাচটি লুফতে পারেননি জো রুট। কিন্তু জীবন পেয়েও সেটাকে দীর্ঘায়িত করতে পারেননি সাকিব। আউট হয়ে যান ১১৯ বলে ১২১ রান করে (৪-১২, ৬-১)। দলের রান তখন ৩৯.৩ ওভারে ৫/২১৯। সাকিব যখন আউট হন তখন তার ওয়ানডে রান ৫৯৬০। আর ৪০ রান হলেই দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে তামিমের পর ৬ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। আর সেঞ্চুরিটি করেই চলমান বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন সাকিব (২৬০ রান, গড় ৮৬.৬৬)। পেছনে ফেলে দেন জেসন রয়কে (২১৫ রান, গড় ৭১.৬৬)। ওই ম্যাচে ব্যক্তিগত রান সংখ্যায় ও জেতার ব্যাপারে জেসনের কাছে হেরে গেলেও মোট রান সংখ্যায় ঠিকই জেসনকে পেছনে ফেলে ‘সাময়িক বিজয়’ অর্জন করেন সাকিব। * শিখর ধাওয়ান ১১৭ (৯ জুন, ২০১৯) ॥ চলমান বিশ্বকাপের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচটি হয় ৯ জুন, ওভালে। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ৩৬ রানে হারিয়ে দেয় গতবারের ও সবচেয়ে বেশি ৫ বারের শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়াকে। ভারতের ৫/৩৫২ রানের জবাবে অসিরা অলআউট হয়ে যায় ৩১৬ রানে। ওপেন করতে নেমে শিখর সবচেয়ে বেশি রান করে রানের শিখরে উঠে যান। হাঁকান ১০৯ বলে ১১৭ রানের সেঞ্চুরি। ১৬টি বাউন্ডারি মারলেও কেন যেন ছয়-টয় মারেননি! তবে তাতে কিছু এসে যায় না শিখরের। কেননা দলের জয়ই তার কাছে বড়। ১০৭.৩৩ স্ট্রাইক রেটধারী শিখরকেই যে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা দেয়া হবে, এ আর আশ্চর্য কি!
×