ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১৩ জুন ২০১৯

 বিনোদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা

আমিনূর রশীদ বাবর ॥ বিনোদন বিষয়টি খুবই মূল্যবান। সমাজের একজন মানুষ সে প্রাপ্ত বয়স্ক হোক আর অপ্রাপ্ত বয়স্কই হোক সারা দিনে এক বার তাকে বিনোদন করতে হবে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য গ্রহণ করে ঠিক তদ্র‍ুপ বেঁচে থাকার জন্য বিনোদনেরও প্রয়োজন। বিনোদন মনমানসিকতা ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সারা দিনে অন্তত একবার প্রাণ খুলে হাসতে হবে। তা না হলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। যে লোক হাসতে পারে না সে হয় দুষ্টু লোক না হয় অপ্রকৃতিস্থ লোক। অতএব পৃথিবীর সব সমাজেই বিনোদনের জন্য ক্ষেত্র থাকতে হবে, ব্যবস্থা থাকতে হবে, বিনোদনের মানুষও থাকতে হবে। যে সমাজে যত বেশি সুকুমারবৃত্তি চর্চা হবে সে সমাজ তত বেশি উন্নত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সমাজে বা রাষ্ট্রে বিনোদনের সেই ক্ষেত্র কোথায়, সেই ব্যবস্থা কোথায় আর সেই মানুষই বা কোথায়? বিনোদনের এই সব ক্ষেত্র বহু পূর্বে বিনষ্ট হয়ে গেছে। আর এই নষ্ট হওয়ার কারণ আমাদের এই সমাজ। এ সমাজ চিত্ত বিনোদন বুঝে না। পৃথিবীতে যদি কোন কঠিন কাজ থাকে তা হলো মানুষকে হাসানো। মানুষকে হাসানো খুবই কঠিন কাজ। আর মানুষ হাসানোরও আলাদা মানুষ আছে। সবাই কিন্তু মানুষকে হাসাতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ একটা আলাদা বিদ্যা। আগে আমার নিজ এলাকায় বিনোদনমূলক প্রচুর কর্মকা- হতে দেখেছি। যেমন, বানর নাচ, ভালুক নাচ, সার্কাস, জাদু খেলা ইত্যাদি। এগুলো ছিল বিনোদনের বিষয়। এই সব বিনোদনে আর্থিক ব্যাপার ছিল। এটা তাদের পেশা। মানুষকে বিনোদন দিয়ে তারা জীবিকা চালাত। ঐ সময় আমার এলাকায় বেশ কয়েক জন রসিক লোক ছিল। এরা এখন আর বেঁচে নেই। বিনোদনের বিষয় আসলেই তাদের মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে। এই প্রয়াত মানুষগুলো মানুষকে হাসানোর দারুণ ক্ষমতা রাখত। এ প্রসঙ্গে তাদের নাম উল্লেখ না করলে দায়ী থাকব। সঙ্গত কারণে তারা হলেন জনাব রাইমোহন, চিত্রকর রমজান আলী, নান্টু ও জাদু শিল্পী খালিক দেওয়ান। এই মানুষগুলো সুকুমার ও শৈল্পীক মনের মানুষ ছিল। এরা এত সুন্দর সাজিয়ে, গুছিয়ে কথা বলতে পারতেন যে, সারা দিন তাদের কাছে বসে থাকলেও ক্ষিধে লাগতো না। এরা একেক জন একেক বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। যেমন, নান্টু ‘পত্র পাঠে’ পারদর্শী ছিলেন। আর জাদু শিল্পী কথার জাদুকর ছিলেন। মাত্র একটি খেলা দেখিয়ে কথার ক্যারিশমা দিয়ে টাকা আদায় করে নিতেন। এখন আর এই মানুষগুলোও নেই বিনোদনও নেই। আমার এলাকায় স্বনামধন্য যে দুটি উচ্চ বিদ্যালয় আছে তার একটি হচ্ছে কাশিনাথ আলা উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। এই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সারা বছর বিভিন্ন ধরনের মেলা ও ঠিকাদারদের নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি ফেলে রাখা হয়। এক কথায় এটাকে খেলার মাঠ বললে খেলার মাঠের অপমান হবে। এখানে একটি শিশু উদ্যান ছিল। এখন এই উদ্যান ধ্বংস করে এখানে ফুচকার ব্যবসা চালু করা হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার আমার এলাকায় বিনোদনের জন্য দুটি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। বহু পূর্বে দুটি প্রেক্ষাগৃহ বিলুপ্ত করে বিপণি কেন্দ্র করা হয়েছে। এখানে সর্ব প্রাচীন একটি গণপাঠাগার বিদ্যমান আছে। বর্তমানে এই পাঠাগারটি দম্ভে বিলুপ্ত ঘোষণা করার অপেক্ষায় আছে। এই হলো গিয়ে এখানকার বিনোদনের সার্বিক অবস্থা। কোথাও কোন বিনোদনের ব্যবস্থা নেই, ক্ষেত্র নেই। যা কিছু ছিল তা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বিনোদনের এই চিত্রই সারাদেশে বিদ্যমান। সব পরিবারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতি, নৈতিকতা, মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতা, সর্বজীবে দয়া, সর্বধর্মে শ্রদ্ধা প্রদর্শন এই সব মানবিক গুণাবলীর শিক্ষা দিতে হবে এবং এই সবের চর্চা করতে হবে। এ পর্যন্ত সারাদেশে যে সব বিনোদন কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে ঐ সব বিনোদন কেন্দ্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করতে হবে। গীর্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে
×