ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্তবিনোদন মৌলিক চাহিদা

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৩ জুন ২০১৯

 চিত্তবিনোদন মৌলিক চাহিদা

সাগর কোড়াইয়া ॥ মানব জীবনে ব্যস্ততার ফাঁকে প্রত্যেকের জন্য বিনোদন জরুরী। বিনোদনই নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে সাফল্যকে ধরতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেকের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে, জীবন ধারণই যথেষ্ট; জীবনটাকে যে যাপন করতে হয় এই বিষয়ে কোন ধারণাই নেই। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে বিনোদনের ধরন পাল্টেছে। এক সময় অবস্থাপন্নদের মধ্যে শিকার ও নৌবিহারে যাওয়ার প্রথাই বিনোদন হিসেবে গণ্য হতো। আবার যারা সংস্কৃতিবান তারা গান-বাজনা, কবিগানের আসর, নাচ, নাটক-যাত্রাপালা মঞ্চায়ন ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনার আসরে সময় অতিবাহিত করাকেই বিনোদন বুঝত। বিনোদন যে রকমই হোক না কেন এটা সত্য যে, বিনোদনহীন জীবন শুষ্কতার নামান্তর। বিনোদন ছাড়াও মানুষ বেড়ে উঠতে পারে তবে সে মানব জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। তাই বিনোদনবিহীন মানব জীবন যেন বৃক্ষের মূলের মাটির গভীরে গ্রোথিত না হয়ে বেড়ে ওঠার মতো। আর এ রকম বৃক্ষ যে কোন সময় উপড়ে পড়তে পারে। মানুষের দৈহিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যেমন খাদ্য অপরিহার্য তদ্র‍ুপ মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দের খোরাক হিসেবে বিনোদনের জুড়ি নেই। মানব জীবনে তাই চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি চিত্তবিনোদনকেও একটি মৌলিক চাহিদা হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনীয়তা অনেকেই তেমনভাবে অনুভব করেন না। এখনও অনেকের মধ্যে চিত্তবিনোদনকে কেবল মাত্র অবস্থাপন্নদের সময় কাটানোর ক্রিয়া হিসেবে দেখার মনোভাব লক্ষণীয়। আবার বর্তমানে অনেকের মাঝেই বিনোদনকে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করার চিন্তা জাগছে। দিন পাল্টে যাচ্ছে। আর পাল্টে যাচ্ছে বিনোদনের নানা উপকরণ। হারিয়েও যাচ্ছে নানা ধরনের বিনোদন কার্যক্রম। এক সময় গ্রাম, শহর সর্বত্রই বিনোদনের চিত্র লক্ষণীয় ছিল। নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সিনেমা হল ছিল দেশজুড়ে। পরিবারের সকল শ্রেণীর সদস্য-সদস্যা একসঙ্গে সিনেমা দেখতে হলে যেত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দিন দিন দেশব্যাপী সিনেমা হলের সংখ্যা শুধু কমছে। সিনেমা হলের সংখ্যা কমা অবশ্যই সুখকর কোন ঘটনা নয়। বর্তমানে মানুষ হয়ে পড়ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নানাবিধ অনুষ্ঠান হয়ে পড়ছে সীমিত এবং কেন্দ্রিভূত। অনেকের জন্য টেলিভিশন নামক যন্ত্রটাই হয়ে উঠছে একমাত্র বিনোদন উপকরণ। আমাদের দেশে জনসংখ্যার যে আধিক্য সে তুলনায় পার্ক ও খেলার মাঠের সংখ্যা খুবই কম। আর যেগুলো রয়েছে তাও আবার দখলদার ও নানা দলের অধীনে রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব ও ছুটি উপলক্ষে সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়। খোলামেলা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সান্নিধ্য চায় প্রত্যেকে। বিশেষভাবে ঈদের সময় ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা শহরসমূহে সে চিত্র লক্ষণীয়। কিন্তু ঈদে ঢাকা শহরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় জনসংখ্যার উপচে পড়া ভিড়। জনগণ চায় বিনোদনের মাধ্যমে নিজেদের আনন্দ জোগাড় করতে কিন্তু সীমিত বিনোদনকেন্দ্র তা সরবরাহ করতে পারে না। অনেক সময় বিনোদনের অভাবে তরুণ ও যুব সমাজ নেশার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তাই বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন সময়ের চাহিদা এখন। রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
×